যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল বলেছেন দেশের বেকার সমস্যা সমাধানে বেকার মুক্ত গ্রাম প্রকল্প হাতে নেবার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। প্রথম পর্যায়ে দেশের ৬৪ টি জেলার ৪৯২ টি গ্রামকে বেকার মুক্ত গ্রাম হিসেবে গড়ে তোলা হবে। অর্থাৎ এ সকল গ্রামের প্রত্যেকটি বাড়িতে কারও না কারও কর্মসংস্থানের ব্যবস্হা করা হবে।
একশনএইড বাংলাদেশ আয়োজিত যুব নেতৃত্বে সামাজিক পরিবর্তন শীর্ষক ‘জাতীয় যুব সম্মেলন ২০১৯’-এ তিনি আজ এসব কথা বলেন ।
তিনি আরও বলেন, যুবক দের আবাসন সমস্যা সমাধানে প্রত্যেক জেলাতে যুব হোস্টেল গড়ে তোলা হবে । সরকার তরুণদের উন্নয়নে সব সময় কাজ করছে। তাই সরকার কর্তৃক প্রশিক্ষণগুলো শহর থেকে গ্রামাঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়ছে, ফলে তরুণরা দক্ষতা নিয়ে কাজে প্রবেশ করছে। গ্রাম পর্যায়েও তরুণরা উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে উঠছে। তবে প্রশিক্ষণগুলো আরো যুগোপোযোগী করা প্রয়োজন বলে মনে করেন মন্ত্রী। কারণ প্রযুক্তির হাত ধরে পৃথিবী দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। তাই বাংলাদেশ যাতে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের এই সময়ে অন্য দেশগুলো সঙ্গে সমান তালে এগিয়ে যেতে পারে এজন্য তরুণদের প্রস্তুত হতে হবে। তরুণরা যদি নিজেদের দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তর না করে, তাহলে আমরা চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে পিছিয়ে পড়বো, বলেন মন্ত্রী।
এছাড়া, অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী পর্বে বেরসকারি সংস্থা ইউনাইটেড ন্যাশনস্ ভলান্টিয়ার-এর কান্ট্রি ডিরেক্টর আকতার উদ্দিন বলেন, দেশের উন্নয়নমূলক পরিবর্তনের জন্য তরুণদের শুধু যুক্ত করলেই হবে না, তাদের অবদানের স্বীকৃতি এবং সম্মান দিতে হবে। আর সমাজ তখনই পরিবর্তন হবে যখন আমরা সবাই সক্রিয়ভাবে এই পরিবর্তনের জন্য কাজ করবো। তিনি আরো বলেন, জাতীয় উন্নয়নের জন্য অবশ্যই তরুণ ভলান্টিয়ার দরকার। আমাদের পাশের দেশগুলোতে ভলান্টিয়ারদের কিভাবে কাজে লাগানো যায় সেই বিষয়ক জাতীয় নীতিমালা ও দপ্তর রয়েছে। আমাদেরও জাতীয় নীতিমালা তৈরি করতে হবে, যাতে তরুণদের কার্যকরীভাবে দেশের উন্নয়নে কাজে লাগানো সম্ভব হয়।
ফিফা রেফারি এবং বিকেএসপি-র কোচ জয়া চাকমা বলেন, বৈষম্যহীন সমাজ গড়তে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকল তরুণদের ক্ষমতায়িত করতে হবে। আর এজন্য তরুণদেরও কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। কারণ পরিশ্রম ছাড়া কোন কিছু অর্জন করা সম্ভব না। আর তরুণদের উচিত দমে না যেয়ে, সকল বাধা উপেক্ষা করে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া।
পরবর্তীতে প্যানেল আলোচনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সেলিম রায়হান বলেন, সব তরুণদেরই উদ্যোক্তা হতে হবে, এটা বাস্তবসম্মত নয়। পৃথিবীর কোথাও এমন হয় না। তাই অর্থনীতিতে এমন ব্যবস্থা করতে হবে যাতে তরুণরা উপার্জনমূলক কর্মস্থানে অংশগ্রহণ করতে পারে। আর এসডিজি অর্জনের ক্ষেত্রে তরুণদের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি কারিগরী শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়াতে হবে।
এছাড়াও আলোচনায় বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, ই-আরকি’র শিমু নাসের এবং জাহাজী অ্যাপ-এর কাজল আব্দুল্লাহ। তারাও তরুণদের দক্ষতা বৃদ্ধির উপর জোর দেন। তারা বলেন, সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে তরুণদের নিজেদের উন্নয়নে কাজ করতে হবে। আর সরকারি সহায়তা পেলে তরুণরা দেশের জন্য দারুণ কিছু করতে সক্ষম বলে মনে করেন তারা।
একশনএইড বাংলাদেশ-এর ম্যানেজার নাজমুল আহসান বলেন, রাষ্ট্রীয় নীতি শুধু তৈরি করলেই হবে না, তা বাস্তবায়নও করতে হবে। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, নীতি বাস্তবায়নের কোন উদ্যোগ নেয়া হয় না। এজন্য বিভিন্ন মন্ত্রণালয়কে সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করতে হবে বলে মনে করেন তিনি।
তরুণ কর্মী, যুব সংগঠন এবং দাতাদের পারস্পরিক আলোচনা ও শিখন বিনিময়ের ক্ষেত্র সহজ করে তোলার লক্ষ্যে এই সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়াতে যুবদের মূল চ্যালেঞ্জগুলো এবং তাদের চাহিদাগুলোকে গুরুত্ব দিয়ে তাদের জন্য বিনিয়োগ বৃদ্ধি ও টেকসই কাজের সুযোগ তৈরি নিয়ে আলোচনা ও পর্যালোচনা করার একটি ক্ষেত্র তৈরি করে দিতেই এই আয়োজন।
বিগত বছরগুলোতে সামাজিক পরিবর্তনে তরুণদের সকল অর্জন ও কৃতিত্বের মূল অংশবিশেষের উপর আলোকপাত করে একটি আলোকচিত্র প্রদর্শনেরও আয়োজন করা হয় এই সম্মেলনে। পাশাপাশি সারাদেশ থেকে আগত যুবকদের সঙ্গে বিশেষজ্ঞদের পারস্পরিক কথোপকথনের সুযোগ ছিল, যেখানে তরুণরা ১লা নভেম্বর জাতীয় যুব দিবসকে সামনে রেখে তাদের চাহিদা ও তাদেরকে দেয়া প্রতিশ্রুতিগুলোকে নতুন করে সঙ্গায়িত করার সুযোগ পায়। এছাড়া, এই সম্মেলনের মাধ্যমে একশনএইড বাংলাদেশ তরুণদের নিয়ে যেসব কাজ করেছে সেই বিষয়ে একটি ফটোবুক-এর মোড়ক উন্মোচন করা হয়।