রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কৃষক লীগের জাতীয় সম্মেলনের জন্য কেন্দ্রীয় ও তৃণমূলের নেতাকর্মীদের ভিড় বাড়তে শুরু করেছে। বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বুধবার (৬ নভেম্বর) সকাল থেকেই নেতাকর্মীরা উদ্যানে জড়ো হতে শুরু করেন।
এদিন সকাল ১১টার পর শুরু হবে সম্মেলনের মূল আনুষ্ঠানিকতা। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধান অতিথি থাকবেন কৃষক লীগের দশম জাতীয় ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে। এখন নেতাকর্মীরা অপেক্ষায় রয়েছেন কৃষক লীগের সাংগঠনিক অভিভাবক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য।
সম্মেলন উপলক্ষে কৃষক বাড়ির আদলে সেজেছে সম্মেলনস্থল। উদ্বোধনী পর্ব শেষে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে কাউন্সিল অধিবেশনে নতুন কেন্দ্রীয় কমিটির নেতৃত্ব নির্বাচন করা হবে। এরইমধ্যে আগত অতিথি, কাউন্সিলর ও ডেলিগেটরা সম্মেলনস্থলে উপস্থিত হয়েছে।
‘কৃষক বাঁচাও- দেশ বাঁচাও’ স্লোগান নিয়ে সংগঠনের সভাপতি মোতাহার হোসেন মোল্লার সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খন্দকার শামসুল হক রেজার পরিচালনায় অনুষ্ঠিত হবে। সভাপতির আসনের দুই পাশে চারটি আসন রাখা হয়েছে। এছাড়াও মূল মঞ্চের পিছনের সারিতে কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত রয়েছেন। মঞ্চের সামনে আমন্ত্রিত অতিথি হিসাবে আওয়ামীলীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের নেতা, মন্ত্রী, এমপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা উপস্থিত রয়েছেন।
সম্মেলন ঘিরে আলোকসজ্জা ও সাজ সাজ রব বিরাজ করছে। মূলমঞ্চ নির্মাণ করা হয়েছে কৃষকের কাচারি ঘরের আদলে। এর জন্য ৯০ ফুট দীর্ঘ ও ৩০ ফুট প্রস্থ সেমিপাকা ঘর নির্মাণ করা হয়েছে, যা কৃষকের কাচারি ঘরের আদলের মতোই জৌলুস ছড়াচ্ছে। মঞ্চের পাশে রাখা হয়েছে ‘আমার বাড়ি-আমার খামার’র একটি মডেল। এতে কৃষকের উৎপাদিত ফসলাদি বাজারে বিক্রি করার আবহ ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার উপস্থিতির বিষয়টি মাথায় রেখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কয়েক স্তরে নিরাপত্তা বলয় রয়েছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা যে পথে গাড়িবহর থেকে নেমে হেঁটে মঞ্চে আসন নেবেন, সেই পথটি মোড়ানো হয়েছে সবুজ ঘাসে। রাস্তার চারপাশে লাগানো হয়েছে বাঁশবাগান, ফলদ ও ওষুধি গাছ। মোদ্দাকথা, কৃষক লীগের সম্মেলনে কৃষকের বাড়িতে আসছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা— সেভাবেই সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
সম্মেলনস্থলের মূল প্যান্ডেলের পাশে পাঁচশ ছোট ছোট প্যান্ডেলে কৃষির আধুনিক যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তি প্রদর্শনীর জন্য রাখা হয়েছে। আরেকটি প্যান্ডেলে ছোট করে ‘আমার বাড়ি, আমার খামার’ আদলে কারিগরি প্রদর্শনী রাখা হয়েছে। ডান পাশে একটি মঞ্চ করা হয়েছে। সেখান থেকে জাতীয় সংগীত ও দলীয় সংগীত পরিববেশন করা হবে। সম্মেলন প্যান্ডেলে প্রায় ১৫ হাজার নেতাকর্মীর বসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সামনের কাতারে বসবেন আগত অতিথি ও আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা। এছাড়াও সম্মেলনে দু’জন বিদেশি অতিথি থাকবেন।
গঠনতন্ত্রে পরিবর্তন আসছে
কৃষক লীগের এবারের সম্মেলনের স্লোগান ‘আমার বাড়ি আমার খামার’। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, একসময় কৃষকদের দুরাবস্থা বিবেচনায় ‘কৃষক বাঁচাও-দেশ বাঁচাও’ স্লোগানটি গঠনতন্ত্রে অন্তর্ভুক্ত করা হলেও বর্তমান প্রেক্ষাপটে ‘কৃষকরা ভালো আছেন’ বিবেচনায় ‘সুখী কৃষক-সুখী দেশ, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ’ এই স্লোগানটি অন্তর্ভুক্ত করতে গঠনতন্ত্র সংশোধন করার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এছাড়াও ১১১ সদস্যের জায়গায় ১৫১ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটি করার প্রস্তাবও রাখা হয়েছে। এ লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বর্ধিত সভা হয় কৃষক লীগের।
এবার গঠনতন্ত্র সংশোধনের যে খসড়া তৈরি হয়েছে, তাতে কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ১৫১ জন করার পাশাপাশি সহসভাপতির পদ ১৬ থেকে ২১, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তিন থেকে পাঁচ এবং সাংগঠনিক সম্পাদক সাত থেকে ৯ জন করার প্রস্তাব রয়েছে। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক, ক্রীড়া ও যুব বিষয় সম্পাদক, কৃষি উপকরণ বিষয়ক সম্পাদক, কৃষি পণ্য পরিবহণ বিষয়ক সম্পাদক, কৃষি শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদকীয় পদ নতুন যোগ করা হয়েছে। এছাড়া কয়েকটি পদের নামও পরিবর্তন করার প্রস্তাব রয়েছে। এর মধ্যে সমবায় সম্পাদকের পরিবর্তে কৃষি সমবায়, কুটির শিল্পের পরিবর্তে কৃষি শিল্প বাণিজ্য, মৎস্য ও পশুর পরিবর্তে মৎস্য ও প্রাণি, কৃষি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির পরিবর্তে কৃষি বিজ্ঞান ও আইসিটি সম্পাদক, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদকের পরিবর্তে দুযোর্গ ব্যবস্থাপনা, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক করার প্রস্তাব রয়েছে।
গঠনতন্ত্রে সংগঠনটির প্রতিষ্ঠা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম এবং প্রতিষ্ঠাকালীন সাল ১৯৭২ সালের ১৯ এপ্রিল সংযোজন করা হবে, যা বর্তমান গঠনতন্ত্রে নেই। নারী নেতৃত্ব বিকাশের জন্য প্রত্যেক সাংগঠনিক স্তরে মহিলা সম্পাদকের সঙ্গে সহ-মহিলা সম্পাদক পদও বাড়ানো হবে। এদিকে, বর্তমান কমিটি দেশের বাইরে কমিটি গঠন নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। এ থেকে সংগঠনকে রক্ষা করতে বিদেশের কমিটি দেওয়া নিয়ে গঠনতন্ত্রে সংশোধন করা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির প্রস্তবনায় ও সাংগঠনিক নেত্রী শেখ হাসিনার অনুমোদনসাপেক্ষে বিদেশে কমিটি দেওয়ার প্রস্তাব রাখা হয়েছে।
সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পদে আলোচনায় যারা
এবারের সম্মেলনে সংগঠনের শীর্ষ পদে আলোচনায় একাধিক নেতা থাকলেও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা তিনটি মানদণ্ড ধরে এবার প্রবীণ ও তরুণ নেতৃত্ব উপহার দিতে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে। বিশেষ করে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট পরবর্তী রাজনীতিতে কোন প্রার্থীর কী সক্রিয় ভূমিকা ছিল, তা বিশ্লেষণ করে সংগঠনের সভাপতি হিসেবে প্রার্থীদের পছন্দের তালিকায় বিবেচনায় রেখেছেন। আর সাধারণ সম্পাদক পদে ছাত্র রাজনীতি থেকে উঠে আসা স্বচ্ছ ভাবমূর্তির তরুণ নেতৃত্ব রয়েছে পছন্দের শীর্ষে। দলীয় একাধিক সূত্র বলছে, এ ক্ষেত্রে সভাপতি পদে বর্তমান কমিটির সিনিয়র সহসভাপতি ওমর ফারুক, কৃষিবিদ বদিউজ্জামান বাদশা ও ছবি বিশ্বাস এগিয়ে রয়েছেন। অন্যদিকে সাধারণ সম্পাদক পদে বর্তমান কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কৃষিবিদ সমীর চন্দ, বিশ্বনাথ সরকার বিটু ও সাখাওয়াত হোসেন সুইট রয়েছেন আলোচনায়। তাদের মধ্য থেকেই হয়তো নতুন নেতৃত্ব পাবে কৃষক লীগ।