দীর্ঘদিন পর সম্মেলনের তারিখ ঘোষণায় প্রাণচাঞ্চল্য ফিরেছে আওয়ামী লীগের অন্যতম সহযোগী সংগঠন স্বেচ্ছাসেবক লীগে। ক্যাসিনোকাণ্ডে খড়গ নেমে আসার পর যুবলীগের সঙ্গে স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ আরও তিনটি সহযোগী সংগঠনের সম্মেলনের তারিখ একসঙ্গে ঘোষণা করা হয় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে। আগামী ১৬ নভেম্বর স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলন হবে। এর আগে ১১ ও ১২ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হবে সংগঠনটির গুরুত্বপূর্ণ দুই শাখা ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের সম্মেলন।
ইতিমধ্যে স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি পদ থেকে বাদ দেয়া হয়েছে মোল্লা আবু কাওছারকে আর সম্মেলন কার্যক্রমে সম্পৃক্ততা থেকে পঙ্কজ দেবনাথকে বিরত থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সম্মেলন আয়োজনের সার্বিক দায়িত্বে সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক নির্মল রঞ্জন গুহ এবং সদস্য সচিব গাজী মেজবাউল হোসেন সাচ্চু।
১৯৯৭ সালের তৎকালীন সংসদ সদস্য মকবুল হোসেনকে আহ্বায়ক করে স্বেচ্ছাসেবক লীগের প্রথম কমিটি হয়। পরে ২০০২ সালে প্রথম কাউন্সিলে সভাপতি নির্বাচিত হন বাহাউদ্দিন নাছিম, সাধারণ সম্পাদক হন পঙ্কজ দেব নাথ।
সর্বশেষ ২০১২ সালে মোল্লা মো. আবু কাওছারকে সভাপতি এবং পঙ্কজ দেবনাথকে সাধারণ সম্পাদক করে স্বেচ্ছাসেবক লীগের কমিটি হয়েছিল। স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে সংগঠনটি দেখভাল করছেন সাবেক সভাপতি বাহাউদ্দিন নাছিম। ফলে কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে তার প্রভাব এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই।
এবারের নেতৃত্ব কেমন হতে পারে- জানতে চাইলে স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সভাপতি ও বর্তমানে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, “দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত, বিতর্কিত কর্মকাণ্ড, ইমেজ নষ্ট, এমন কেউ নেতৃত্বে আসতে পারবে না। যারা নেতৃত্বে আসবে, তাদের অবশ্যই সৎ, অভিজ্ঞ এবং সাংগঠনিক হতে হবে।”
প্রায় দশককাল পর সম্মেলন ঘিরে ক্ষমতাসীন দলের সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের মধ্যে উদ্দীপনা দেখা যাচ্ছে। সম্মেলনকে ঘিরে প্রতিদিনই দলটির বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও ধানমণ্ডির সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয় নেতাকর্মীদের পদচারণায় মুখর থাকছে। সংগঠনটির শীর্ষ দুই নেতৃত্বে কারা আসছেন সেটি কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না। তবে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে যে নতুন মুখ আসবে এটি নিশ্চিত। নতুন কমিটিতে স্থান পেতে বিভিন্ন পর্যায়ে চলছে পদপ্রত্যাশীদের দৌড়ঝাঁপ।
স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি পদে আলোচনায় যারা
- নির্মল রঞ্জন গুহ
- মতিউর রহমান মতি
- আফজালুর রহমান বাবু
- নির্মল চ্যাটার্জি
- কাজী শহীদুল্লাহ লিটন
- মজিবুর রহমান স্বপন
নির্মল রঞ্জন গুহঃ স্বেচ্ছাসেবক লীগের এক নং সহ-সভাপতি এবং আসন্ন সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক নির্মল রঞ্জন গুহ ইতিপূর্বেও স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ঢাকা জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহবায়ক এর দায়িত্বও পালন করেছেন। ছাত্রজীবনে তিনি নয়াবাড়ি ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক, সরকারি দেবেন্দ্র কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক, মানিকগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক, ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন।
মতিউর রহমান মতিঃ স্বেচ্ছাসেবক লীগের দুই নং কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি মতিউর রহমান মতি ইতিপূর্বে স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, এক-এগারোর সময় ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক এবং ঢাকা মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহবায়ক এর দায়িত্ব পালন করেছেন। ছাত্রলীগের রাজনীতি থেকে উঠে আসা মতিউর রহমান মতি মিরপুর থানা ছাত্রলীগের সভাপতি এবং অবিভক্ত ঢাকা মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।
আফজালুর রহমান বাবুঃ স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি আফজালুর রহমান বাবু স্কুল জীবন থেকেই ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। তিনি গভমেন্ট ল্যাবরেটরি স্কুল ছাত্রলীগের সভাপতি, ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মুক্তিযোদ্ধা ছাত্র কমান্ডের সভাপতি এবং কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের মাইনুদ্দিন-ইকবালুর রহিম কমিটির প্রচার সম্পাদক, শামীম-পান্না কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং বাহাদুর-অজয় কমিটির সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।
নির্মল চ্যাটার্জিঃ স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি নির্মল চ্যাটার্জী ইতিপূর্বে স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় সদস্য ছিলেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জগন্নাথ হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়াও নির্মল চ্যাটার্জি বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে আছেন।
কাজী শহীদুল্লাহ লিটনঃ স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি কাজী শহীদুল্লাহ লিটন ইতিপূর্বে স্বেচ্ছাসেবক লীগের কর্মসংস্থান সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৯৯৫ সালে কোতোয়ালি থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক এবং ২০০১ সালে ঢাকা মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সদস্য ছিলেন কাজী শহীদুল্লাহ লিটন ছাত্রজীবনে কোতোয়ালী থানা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।
মজিবুর রহমান স্বপনঃ স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি মজিবুর রহমান স্বপন ইতিপূর্বে স্বেচ্ছাসেবক লীগ কেন্দ্রীয় আহবায়ক কমিটির সদস্য এবং ঢাকা মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের প্রতিষ্ঠাকালীন যুগ্ম আহবায়ক এর দায়িত্ব পালন করেন। ছাত্রজীবনে তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় জাতীয় ছাত্রলীগের আহ্বায়ক এবং জাতীয় ছাত্রলীগ ঢাকা মহানগর এর সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।
সাধারণ সম্পাদক পদে আলোচনায় যারা
- গাজী মেজবাউল হোসেন সাচ্চু
- আব্দুল আলিম
- খায়রুল হাসান জুয়েল
- সাজ্জাদ সাকিব বাদশা
- শেখ সোহেল রানা টিপু
গাজী মেজবাউল হোসেন সাচ্চুঃ স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গাজী মেজবাউল হোসেন সাচ্চু স্বেচ্ছাসেবক লীগের আসন্ন সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির সদস্য সচিবের দায়িত্বে আছেন। ছাত্রজীবনে তিনি ক্যান্টনমেন্ট থানা ছাত্রলীগের দুই মেয়াদে সভাপতি, ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের দুই মেয়াদে সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।
আব্দুল আলিমঃ স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল আলিম ছাত্রজীবনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এসএম হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতি, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সদস্য এবং প্রচার সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।
খায়রুল হাসান জুয়েলঃ স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক খায়রুল হাসান জুয়েল ইতিপূর্বে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও ক্রীড়া সম্পাদক, মাদারীপুর ১ নং ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। এক-এগারোর সময় তাকে এক বছর কারাবরণ করতে হয়।
সাজ্জাদ সাকিব বাদশাঃ স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সাজ্জাদ সাকিব বাদশা ইতিপূর্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের ছাত্রবৃত্তি বিষয়ক সম্পাদক এবং এফ এইচ হল ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।
গুরুত্বপূর্ণ পদে আলোচনায় যারা
সুব্রত পুরকায়স্থঃ স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সুব্রত পুরকায়স্থ ইতিপূর্বে স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় সদস্য এবং সিলেট জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও তিনি ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন।
নাফিউল করিম নাফাঃ স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় সমাজ কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক নাফিউল করিম নাফা ইতিপূর্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জিয়া হল ছাত্রলীগের সভাপতি এবং কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।
কাজী মোয়াজ্জেম হোসেনঃ স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিষয়ক সম্পাদক কাজী মোয়াজ্জেম হোসেন ইতিপূর্বে ৭৫ এর ঘাতক নির্মূল কমিটির প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক, “মুক্তিযুদ্ধ ও গণমুক্তি আন্দোলন” সংগঠনে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ সেলিম এমপি সভাপতি থাকাকালীন অবস্থায় তিনি সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।
এছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ পদে আলোচনায় আছেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক আ ফ ম মাহবুবুল হাসান মাহবুব, কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক সালেহ মোঃ টুটুল প্রমুখ।