ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ৩০ নভেম্বর। সম্মেলনকে সামনে রেখে নেতাকর্মীরা চাঙ্গা হয়ে উঠছেন। নতুন নেতৃত্ব নিয়ে চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা। ইতোমধ্যে কৃষক লীগ, জাতীয় শ্রমিক লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও যুবলীগে নতুন নেতৃত্ব দেয়া হয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্বেও আসছে নতুন মুখ- এমন আভাস দিয়েছেন দলটির একাধিক নীতিনির্ধারক। ঢাকা মহানগর নতুন কমিটি গঠনের বিষয়টি খুবই গুরুত্ব সহকারে নিয়েছেন দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিগত তিন বছরে নেতাকর্মীদের সার্বিক রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড সন্তোষজনক ছিল না। এর মধ্যে ক্যাসিনো কেলেঙ্কারিতে সম্পৃক্ততা, চাঁদা ও টেন্ডারবাজি, অনুপ্রবেশকারী, ক্ষমতার অপব্যবহার, অর্থের বিনিময়ে কমিটিতে ঢুকানোসহ নেতাদের নানা অপকর্মের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ হাইকমান্ডের হাতে। এসব বিষয় বিবেচনায় ব্যাপক পরিবর্তন আনা হচ্ছে ঢাকার দুই মহানগর আওয়ামী লীগের নতুন কমিটিতে।
আগামী কমিটি সম্পর্কে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক বলেন, কাউন্সিলের মাধ্যমে প্রতিবার পরিবর্তন আসে। নতুন-পুরনো সমন্বয়ে একটি শক্তিশালী ও গ্রহণযোগ্য কমিটি দেয়া হয়। এবারও আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটি চমকপ্রদ কমিটি দেবেন। তবে নেতৃত্বে কারা আসছেন, তা একান্তই দলীয় প্রধানের এখতিয়ার। তিনি যাকে ভালো মনে করবেন, তাকেই দায়িত্ব দেবেন। আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী সূত্রে জানা গেছে, এরই মধ্যে নতুন নেতৃত্বে কারা আসবেন, এর একটি খসড়া তালিকা প্রস্তুত করেছেন শেখ হাসিনা। কাউন্সিলের মাধ্যমে স্বচ্ছ ভাবমূর্তির একটি চ্যালেঞ্জিং কমিটি উপহার দেবেন প্রধানমন্ত্রী।
ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের শীর্ষ পদে আলোচনায় যারা
- সাদেক খান
- বজলুর রহমান
- আসাদুজ্জামান খান কামাল এমপি
- আসলামুল হক এমপি
- নাজিম উদ্দিন
- এস এম মান্নান কচি
- কাদের খান
- হাবিব হাসান
- ওয়াকিল উদ্দিন
- এম সাইফুল্লাহ সাইফুল
- মোক্তার সরদার
- জহিরুল হক জিল্লু
- মিজানুর রহমান মিজান
সাদেক খানঃ ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান ইতিপূর্বে ৪৭ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি(১৯৯২), মোহাম্মদপুর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি(১৯৯৬-২০১৫), তৎকালীন ৪৭ নং ওয়ার্ড ও বর্তমান ৩৪ নং ওয়ার্ড থেকে চারবার নির্বাচিত কাউন্সিলর এবং ১৯৭৩ সালে ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের সদস্য ছিলেন।
বজলুর রহমানঃ ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি বজলুল রহমান ইতিপূর্বে অবিভক্ত ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদক, মোহাম্মদপুর থানা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক, ৪৬ নং ওয়ার্ড (বর্তমান ৩৩) আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং ৪৬ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় আহত শেখ বজলুর রহমানের জন্ম ১৯৫৬ সালে।
আরও পড়তে পারেনঃ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে আলোচনায় যারা
নাজিম উদ্দিনঃ ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নাজিম উদ্দিন ইতিপূর্বে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ সম্পাদক(২০০৪-২১৬), উত্তরখান ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি(১৯৯৭-২০০৪), বৃহত্তর উত্তরা থানা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য(১৯৯৩-৯৭) এবং তিতুমীর কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতির(১৯৭৭-৮১) দায়িত্ব পালন করেন।
এস এম মান্নান কচিঃ ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের এক নং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এসএম মান্নান কচি ইতিপূর্বে বৃহত্তর মিরপুর থানা ছাত্রলীগের সভাপতি(১৯৮৩-৮৪), অবিভক্ত ঢাকা মহানগর ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি(১৯৮৩-৮৬), সাধারণ সম্পাদক(১৯৮৬-৮৯), ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সহ-সম্পাদক(১৯৮৯-৯১), ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যকরী সদস্য(১৯৯৭), ত্রাণ ও পুনর্বাসন সম্পাদক(২০০২) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
কাদের খানঃ ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাদের খান ইতিপূর্বে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য(২০০৪-২০১২), ৭২ নং ওয়ার্ড (বর্তমান ১৯) আওয়ামী লীগের সভাপতি(১৯৮৫-২০০৪) এবং ১৯৭১ সালে ভোলা মহকুমা ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।
হাবিব হাসানঃ ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাবিব হাসান ইতিপূর্বে হরিরামপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, বৃহত্তর উত্তরা থানা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
ওয়াকিল উদ্দিনঃ ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ ওয়াকিল উদ্দিন ইতিপূর্বে বৃহত্তর গুলশান থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সহ সভাপতি, বৃহত্তর গুলশান থানা ছাত্রলীগের সভাপতি(১৯৭৪) এবং ছাত্রলীগ কার্যকরী কমিটির সদস্য(১৯৬৯) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পেশাগত জীবনে ওয়াকিল উদ্দিন স্বদেশ প্রপার্টিজ নামক একটি আবাসন প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত। বিএনপি নেতা কামরুল এবং কাইয়ুম এই প্রতিষ্ঠান অংশীদার হিসেবে আছেন অনেকেই অভিযোগ করলেও ওয়াকিল উদ্দিন জানান ২০০৯ সালে বিএনপি নেতা কামরুল এবং ২০১৪ সালে বিএনপি নেতা কাইয়ুম স্বদেশ প্রপার্টিজ এর শেয়ার বিক্রি করে দেন। তাই বর্তমানে এই প্রতিষ্ঠানের সাথে বিএনপির কোনো নেতার সংশ্লিষ্টতা নেই।
এম সাইফুল্লাহ সাইফুলঃ ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক এম সাইফুল্লাহ সাইফুল ইতিপূর্বে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সহ-সম্পাদক, স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক, বাংলা কলেজ ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, ছাত্রলীগ ঢাকা মহানগর উত্তরের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও সভাপতি, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সদস্য, সেনপাড়া – বড়বাগ ইউনিট আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।
মোক্তার সরদারঃ ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোক্তার সরদার ইতিপূর্বে রমনা থানা ছাত্রলীগের সভাপতি, ঢাকা মহানগর যুবলীগের দপ্তর সম্পাদক, রমনা থানা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। মোক্তার সরদারের পিতা আক্তার সরদার ৩৫ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ছিলেন।
জহিরুল হক জিল্লুঃ ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জহিরুল হক জিল্লু ইতিপূর্বে তেজগাঁও থানা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি এবং তেজগাঁও ২৬ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
মিজানুর রহমান মিজানঃ ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মিজানুর রহমান মিজান ইতিপূর্বে স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি, এক নং সাংগঠনিক সম্পাদক, স্বেচ্ছাসেবক লীগের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এবং সরকারি বাঙলা কলেজ ছাত্রলীগের নির্বাচিত ভিপি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
এছাড়াও শীর্ষ পদে আলোচনায় আছেন ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এমপি এবং সহ-সভাপতি আসলামুল হক এমপি।