জিয়ার চ্যারিটেবল মামলায় ৭ বছরের সাজাপ্রাপ্ত বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জামিন আদেশকে সামনে রেখে ‘আইনি প্রক্রিয়া দেখে কর্মসূচির সিদ্ধান্ত’ নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
আগামীকাল বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) আপিল বিভাগে বেগম জিয়ার জামিন বিষয়ে আদেশের দিন ধার্য রয়েছে। সর্বোচ্চ আদালতেও যদি বিএনপি চেয়ারপারসন জামিন না পান তবে দল কী ধরনের কর্মসূচি দেবে?
সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে রিজভী বলেন, ‘দেখি না আগামীকাল কী হয়? আমরা কতদিন আর অপেক্ষা করবো? আইনি প্রক্রিয়া দেখে কর্মসূচির সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। যখন গণতন্ত্রের জায়গা বন্ধ হয়ে যায় তখন রাজপথেই তার সমাধান করতে হয়।’
বেগম জিয়ার জামিন আদেশের আগের দিন বুধবার (৪ ডিসেম্বর) দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) ঢাকা মহানগর উত্তর আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষের আস্থার প্রতীক দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে সম্পূর্ণ বিনা অপরাধে অবৈধ ক্ষমতার জোরে কারারুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। আইন-আদালত, ন্যায়বিচার, সংবিধান, মানবাধিকার, মৌলিক অধিকার, বয়স, অসুস্থতাসহ সকল বিবেচনায় চারবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জামিন পাওয়া আইনগত অধিকার। দেশ-বিদেশের আইনজ্ঞরা বলছেন, এই মামলায় জামিন না পাওয়া বিস্ময়কর। তিনি নিশ্চিতভাবেই জামিনের হকদার। গোটা বাংলাদেশের মানুষ অব্যাহতভাবে দাবি জানাচ্ছে দেশনেত্রীর জামিনের। অথচ স্বাভাবিক এই জামিন নিয়ে কত রকমের টালবাহানা করা হচ্ছে! সরকারদলীয় লোকেরা প্রকাশ্যে হুমকি ও ঘোষণা দিয়ে জামিনে বাধা দিচ্ছে। দেশনেত্রীকে জেলে রেখে হত্যার হুমকি দিচ্ছে সরকার।’
তিনি বলেন, ‘আগামীকাল বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জামিন শুনানি করবেন। আগামীকালের মধ্যে তাঁর শারীরিক অবস্থার সবশেষ মেডিকেল রিপোর্ট দিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেজিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। ৭৫ বছর বয়সী দেশনেত্রীর স্বাস্থ্যের অবস্থা এতো ভয়ঙ্কর যে, এই মুহূর্তে তাঁকে মুক্তি দিয়ে উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা না হলে জীবনহানির চরম ঝুঁকিতে পড়বেন তিনি। সুচিকিৎসার অভাবে তাঁর যে ড্যামেজ হচ্ছে, সেটা আর ফিরে আসবে না। তার বাম হাত ও শরীরের বাম দিক প্রায় প্যারালাইজড হওয়ার উপক্রম হয়েছে। কারো সাহায্য ছাড়া তিনি বিছানা থেকে উঠতে পারেন না। তাঁর এই গুরুতর অসুস্থতায় দেশবাসী শুধু উদ্বিগ্নই নয়, বরং দেশনেত্রীর জামিনে বাধা দিয়ে ও চিকিৎসা না দিয়ে তাঁকে গুরুতর শারীরিক ক্ষতির দিকে ঠেলে দেয়ার জন্য এটি যে সরকারের অশুভ পরিকল্পনারই অংশ তা জনগণ বিশ্বাস করে।’
রিজভী বলেন, ‘দেশনেত্রীকে নিয়ে সরকারের অশুভ ষড়যন্ত্রের আরেকটি জলজ্যান্ত প্রমাণ হলো গত ২৫ দিন ধরে তাঁর সঙ্গে স্বজনদের সাক্ষাৎ করতে না দেয়া। এটি জেলকোডের চরম লঙ্ঘন। এটির মাধ্যমে বিধি-বিধানকে উপেক্ষা করে প্রতিহিংসার বিধানকেই চরিতার্থ করা হচ্ছে। গত ১৩ নভেম্বরের পর থেকে আর সাক্ষাতের অনুমতি দেয়া হচ্ছে না। আমরা বর্তমানে তাঁর শারীরিক পরিস্থিতি নিয়ে চরম আশঙ্কায় দিনাতিপাত করছি।’
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব আরও বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, সর্বোচ্চ আদালত থেকে দেশনেত্রী ন্যায়বিচার পাবেন। বেগম খালেদা জিয়া দেশের সিনিয়র সিটিজেন, চারবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী, দু’বারের বিরোধী দলীয় নেতা ও দেশের জনপ্রিয় শীর্ষ রাজনীতিবিদ- তার জামিন পাওয়া ন্যায়সঙ্গত অধিকার। ইতোপূর্বে এধরনের মামলায় সর্বোচ্চ আদালত থেকে অনেকেই জামিন পেয়েছেন, সেটির অসংখ্য নজিরও রয়েছে। সারা জাতি আগামীকাল দেশনেত্রীর জামিনের বিষয়ে আদালতের দিকে তাকিয়ে আছে।’
এসময় উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা তাইফুল ইসলাম টিপু, ব্যারিস্টার মীর হেলাল, ড্যাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি ডা. মো. আবদুস সেলিম, ড্যাব ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি ডা. সরকার মাহবুব আহমেদ শামীম প্রমুখ।