বেগম খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ, সেই কারণে আসল রহস্য ফাঁস হওয়ার ভয়ে বেগম জিয়ার পরিবারের সদস্যদেরকে দেখা করার সুযোগ দেয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।
শনিবার (১৪ ডিসেম্বর) বিকেলে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন।
সংবাদ সম্মেলনে রিজভী অভিযোগ করে বলেন, ‘৩১ দিন অতিবাহিত হওয়ার পরেও ‘গণতন্ত্রে প্রতীক’ দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার স্বজনদেরকে তাঁর সাথে দেখা করতে দেয়া হয়নি। বলা হয়েছে উচ্চতর কর্তৃপক্ষের নির্দেশেই সাক্ষাৎ দেয়া হয়নি। অথচ আজকে বেগম জিয়ার সাথে পরিবারের সদস্যদের সাক্ষাতের জন্য অনুমতি ছিল। আকস্মিকভাবে বেলা ২টার সময় অনুমতি বাতিলের কথা জানানো হয়েছে।’
রিজভী বলেন, ‘আমরা বলতে চাই- উচ্চতর কর্তৃপক্ষ কে? কত উচ্চতায় তিনি অবস্থান করেন ? এটি জেল কর্তৃপক্ষ না জানলেও জনগণ তা ভালভাবেই জানে যে, জেল কর্তৃপক্ষের প্রভূরাই উচ্চতর কর্তৃপক্ষ। গত বৃহস্পতিবার আদালতে যার নির্দেশে দেশনেত্রীর জামিন আবেদন খারিজ হয়েছে সেই উচ্চতর কর্তৃপক্ষের নির্দেশেই আজকে বেগম জিয়ার স্বজনরা অনুমতি থাকার পরেও তাঁর সাথে দেখা করতে পারলেন না। এই উচ্চতর কর্তৃপক্ষ মূলত: ক্ষমতাক্ষুধায় অস্থির প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।’
রিজভী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর প্রতিহিংসার জ্বালা অনির্বাণ। এই জ্বালা স্তিমিত হওয়ার নয়। কারণ ক্ষমতা হারানোর ভয়ে তাঁর এই জ্বালা দাউদাউ করে জ্বলছে। আর সেজন্যই তিনি তাঁর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী দেশের জনপ্রিয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে নিঃশেষ করতেই রাষ্ট্রযন্ত্রের সকল অস্ত্রই প্রয়োগ করছেন। তাঁর কারিগরিতেই গত বৃহস্পতিবার বেগম খালেদা জিয়া জামিন পাননি। শোকে-দুঃখে, রোগে তাঁকে কারাবন্দি রেখে জীবন বিপন্ন না করা পর্যন্ত শেখ হাসিনা অবৈধ ক্ষমতা-যন্ত্রের দ্বারা নিপীড়ণ চালিয়েই যাবেন। আলো-বাতাসহীন বন্দিশালার বদ্ধ কক্ষে মৃত্যুকে বেগম জিয়ার ছায়াসঙ্গী করে রেখেছেন শেখ হাসিনা। এই বন্দিত্বের বিরুদ্ধে দেশ-বিদেশের সকলেই সোচ্চার হওয়ার পরও মধ্যরাতের ডাকাতির নির্বাচনের মাধ্যমে প্রভূত ও নিরঙ্কুশ ক্ষমতার অধিকারী শেখ হাসিনা সেগুলোকে তোয়াক্কা না করে বেগম জিয়ার জামিন আটকে দিয়েছেন। আর আজ বেগম জিয়ার স্বজনদেরকে সাক্ষাৎ করতে না দিয়ে বন্দির অধিকারটুকুও ক্ষুন্ন করেছেন। একজন সাধারণ বন্দির সাথে ৭ দিন পরপর দেখা করার সুযোগ থাকে, সেখানে মাস পেরিয়ে গেলেও দেশের একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সাথে তাঁর স্বজনদের দেখা করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা আশঙ্কা করছি দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ, সেই কারণে আসল রহস্য ফাঁস হওয়ার ভয়ে বেগম জিয়ার পরিবারের সদস্যদেরকে দেখা করার সুযোগ দেয়া হচ্ছে না। বেগম জিয়ার প্রতি শেখ হাসিনার আচরণ দেশ-কাল-সভ্যতার পক্ষে কলঙ্কের।
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘যে সরকারপ্রধানের রাজমুকুটে বিরোধী দল ও মতের রহস্যময় অন্তর্ধাণ, গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যা শোভা পায় সেই প্রধানমন্ত্রী দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রীকে ধ্বংস করার জন্য মহাসমারোহে কাজ করবে এটাই স্বাভাবিক। যিনি সারা দেশকে দুঃশাসনের দোজখের মধ্যে ঠেলে দিয়েছেন, তাঁর কাছ থেকে কোন ন্যায়সঙ্গত কাজ আশা করা যায় না। তাঁর রাজ্যশাসনের জয়োল্লাসের মধ্যে শুধুই হিংসা ও রক্তপাতের ছবি। যিনি গণতন্ত্র ও ন্যায়বিচারকে ধরাছোঁয়ার বাইরে রেখেছেন, যিনি জনগণকে নির্বাক জনগোষ্ঠী তৈরি করতে উঠেপড়ে লেগেছেন, তাঁর কাছ থেকে ন্যায় ও সুবিচার আশা করা মুর্খের স্বর্গে বাস করার সামিল। তবে এই দুুর্বিষহ দুঃশাসন যে বেশি দিন টিকে না, এটা কখনোই কোন নিষ্ঠুর স্বৈরশাসক বুঝতে পারে না। ২৯ ডিসেম্বর মিডনাইট নির্বাচনে সারাবিশ্বের নজরকাড়া একদলীয় কর্তৃত্ববাদী শাসকগোষ্ঠীর অবিশ্বাস্য উত্থান ঘটেছে, তা যে যেকোন সময় উল্টে যেতে পারে, সেই বোধবুদ্ধি হারিয়ে ফেলে নাৎসীবাদের আদর্শে উদ্বুদ্ধ অসহিষ্ণু দখলদার সেই শাসকগোষ্ঠী এখনও তা টের পাচ্ছে না।’
রিজভী আরও বলেন, ‘গত বৃহস্পতিবার জামিন পেতে বাধা দিয়ে আদালতকে সম্পূর্ণ কব্জায় নিতে পেরে শেখ হাসিনা এটিকে নিজের সাফল্য হিসেবে দেখছেন এবং সেই কারণেই তিনি আরও বেশি উদ্ধত ও অহংকারী হয়ে উঠে আজকে বেগম জিয়ার সাথে তাঁর স্বজনদের সাক্ষাৎ করতে দেননি। কিন্তু যখনই কোন অবৈধ শাসক নিরঙ্কুশ ক্ষমতার চূড়ান্ত পর্যায়ে ওঠে তখন তাদের হিতাহিত জ্ঞান থাকে না এবং তারা বোঝে না যে, গণেশ যেকোন মুহূর্তে উল্টে যেতে পারে। বর্তমান সরকারেরও কোন বৈধতা নেই এবং তাদের বদ্ধ দরজায় পতনের কড়া নড়ছে। সুতরাং সেই সরকারের পতন অনিবার্য। ক্ষুদ্ধ জনগণের বিসুভিয়াসের মতো সুপ্ত আগ্নেয়গিরির যেকোন মুহূর্তেই উদগীরণ ঘটবে। এই সরকারের আসন্ন পতনে প্রধানমন্ত্রীর কোন আইন শৃঙ্খলা বাহিনী আর এন্টিবায়োটিক হিসেবে কাজ করতে পারবে না।’
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ, আব্দুল আওয়াল খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।