বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক এবং গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম পিরোজপুর জেলার নাজিরপুর উপজেলার ঐতিহ্যবাহী সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মো. আব্দুল খালেক শেখ একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং বরেণ্য রাজনীতিবিদ ছিলেন।
বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্টের (আপীল বিভাগ) সিনিয়র এডভোকেট শ ম রেজাউল করিম ইতিপূর্বে বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি কনিষ্ঠতম মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। ১/১১ পরবর্তী এবং পূর্ববর্তী সময় থেকেই বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দায়ের করা ষড়যন্ত্র মূলক সকল মিথ্যা মামলার অন্যতম আইনজীবী হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। সংসদ ভবন এলাকায় বিশেষ জজ আদালতে অন্যতম আইনজীবী হিসাবে নিয়মিত অংশ গ্রহণ ও সুপ্রিমকোর্টে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার সকল মামলায় অন্যতম আইনজীবী হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন শ ম রেজাউল করিম। তিনি জেল হত্যা মামলায় জাতীয় ৪ নেতার পরিবারের আবেদনক্রমে সরকার কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত অন্যতম আইনজীবী হিসাবে হাইকোর্টে জেল হত্যা মামলা পরিচালনা করেন। তিনি বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের অন্যতম আইনজীবী হিসাবে সরকার কর্তৃক নিয়োগ প্রাপ্ত হয়ে উক্ত মামলা পরিচালনা করেন।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা গ্রেপ্তারের পরে তাকে আইনি সহায়তা দানের জন্য সর্বপ্রথম জননেত্রী শেখ হাসিনার সহিত সাক্ষাতের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নিকট লিখিত অনুমতি প্রার্থনা করেন তিনি। এছাড়া, তত্ত্বাবধায়ক সরকার কর্তৃক মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে দায়ের করা মিথ্যা মামলা ও হয়রানী বিষয়ে ১৭/১০/২০০৭ তারিখে হাউস অব কমন্সে গেস্ট হিসাবে উপস্থিত হয়ে দায়ের করা মামলার ভিত্তিহীনতা তুলে ধরেন।
ছাত্র অবস্থায় থেকেই শ ম রেজাউল করিম আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে একনিষ্ঠভাবে যুক্ত ছিলেন। তিনি দৌলতপুর কলেজের ভি.পি, খুলনা মহানগর ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। শ ম রেজাউল করিম পিরোজপুর জেলা আওয়ামী লীগ কার্যনির্বাহী কমিটির (১৯৯০ সন থেকে অদ্যাবধি) সদস্য, বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এবং ঢাকাস্থ পিরোজপুর জেলা আওয়ামী পরিষদের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
তিনি মানবাধিকার ও আইনি সেবামূলক কর্মকাণ্ডের স্বীকৃতি হিসাবে শেখ রাসেল স্মৃতি পদক, বঙ্গবন্ধু লেখক পরিষদ পদক, অতিশ দিপঙ্কর স্বর্ণ পদক, ইউনেস্কো ক্লাব পদক, আইন ও মানবাধিকারে লালন পত্র পদক-২০১১, শের-ই-বাংলা জাতীয় স্মৃতি পদক এবং মানবাধিকার পদক সহ ১৪ টি পদক লাভ করেছেন। শ ম রেজাউল করিমের দুটি উল্লেখযোগ্য প্রকাশিত গ্রন্থ “মৃত্যুঞ্জয়ী মুজিব” এবং “ইতিহাসের দায় মুক্তি” (মানবতা বিরোধী শীর্ষ অপরাধীদের ফাসির রায় সংকলিত)।
সম্প্রতি দেশের জনপ্রিয় অনলাইন নিউজপোর্টাল পলিটিক্সনিউজ টুয়েন্টিফোর ডট কম-এর মুখোমুখি হন তিনি। তার সঙ্গে দীর্ঘ আলাপচারিতায় উঠে আসে আওয়ামী লীগের আইন সম্পাদক হিসেবে তার ভূমিকা, আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন ও সমসাময়িক রাজনীতির নানা দিক। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন পলিটিক্সনিউজের নির্বাহী সম্পাদক সালেহ মোহাম্মদ রশীদ অলক।
পলিটিক্সনিউজ : আওয়ামী লীগের আইন সম্পাদক ও আইনবিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য সচিব হিসেবে কি কি কাজ করতে পেরেছেন?
শ ম রেজাউল করিম : দীর্ঘ পথপরিক্রমা এবং ধারাবাহিক আন্দোলন-সংগ্রামের ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এখন শুধু রাজনৈতিক দল নয়, একটি ইন্সটিটিউশন, একটি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। সেই প্রতিষ্ঠানের মুখ্য স্রষ্টা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতিতে নির্মমভাবে হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। তখনই আইনের শাসন বাংলাদেশ থেকে একেবারেই মুখ থুবড়ে পড়ে। ১৯৮১ সালের ১৭ মে বঙ্গবন্ধুর কন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পর দেশকে আইনের শাসনের পথে নিয়ে আসার জন্য কাজ শুরু করেন। আমি আইন সম্পাদকের দায়িত্ব গ্রহণ করে চেষ্টা করেছি দল, সরকার এবং রাষ্ট্র যাতে আইনানুগ প্রক্রিয়ায় সবকিছু সম্পন্ন করে সেটা নিশ্চিত করার। সেক্ষেত্রে আইন সম্পাদক হিসেবে আমার ওপর অর্পিত দায়িত্ব এবং আইন উপ-কমিটির সদস্য সচিব হিসেবেও দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করেছি।
আমাদের প্রথম লক্ষ্য ছিলো দলের সকল কর্মকাণ্ড যেন আইনসঙ্গতভাবে হয়। দলের সম্মেলন, কর্মী সংগ্রহ এবং দলের বিপথগামী কর্মীদের বিরুদ্ধে আইনানুগভাবে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা, নির্বাচন কমিশনে আমাদের বিভিন্ন পদক্ষেপ আইনানুগ প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন করা। কোনও কর্মী বা নেতা যাতে অবিচারের শিকার না হয়, আইন ও পদ্ধতিগতভাবে যেন বিচার পায়- এসকল বিষয়গুলোকে আমরা প্রাধান্য দিয়েছি দলীয়ভাবে।
পলিটিক্সনিউজ : আপনি আওয়ামী লীগের আইন সম্পাদক, সংসদ সদস্য এবং একইসাথে মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন। রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালনের সময় আওয়ামী লীগের আইন সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব কিভাবে সমন্বয় করেছেন?
শ ম রেজাউল করিম : রাষ্ট্রের সকল কিছু যেন আইনসঙ্গতভাবে হয়, কেউ অপরাধ করলে তার বিচার যেন আইনানুগ প্রক্রিয়ায় হয়, কেউ ক্ষমা পেলেও যেন সেটা আইনের আওতায় আসে সে ক্ষেত্রে আইন সম্পাদক হিসেবে আমি সোচ্চার থেকেছি। আমরা কথা বলেছি, সেমিনার করেছি, সিম্পোজিয়াম করেছি, রিপ্রেজেন্টেশন দিয়েছি। কোনও অপরাধমূলক ঘটনা দেখলে আমরা ক্ষোভ প্রকাশ করে স্টেটমেন্ট দিয়ে তার বিচার দাবি করেছি। কোনও বিষয় আমাদের দলের প্রধানের কাছে উপস্থাপনের মতো হলে, সেখানে বিষয়টা উপস্থাপন করেছি। দলের সাধারণ সম্পাদকের কাছে, দলের সম্পাদকমণ্ডলীর কাছে এগুলো উপস্থাপন করেছি।
সরকার পরিচালনার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ নির্বাহী বিভাগ, আইন বিভাগ ও বিচার বিভাগ। বিচারাঙ্গনের সাথে আমি সম্পৃক্ত মানুষ। সেক্ষেত্রে আমার টার্গেট ছিলো, বিচার ব্যবস্থায় যেন কোনও বেআইনি প্রক্রিয়া বা বেআইনি অবস্থা সৃষ্টি না হয়। সবকিছু যেন আইনসঙ্গতভাবে হয়। কোর্ট অঙ্গনে বিচার প্রার্থীরা বিচার না পাওয়ার কর্মকাণ্ডকে আমরা অ্যাড্রেস করেছি। সেমিনার করে অ্যাড্রেস করেছি, বিবৃতিতে অ্যাড্রেস করেছি, মাননীয় প্রধান বিচারপতির সঙ্গে দেখা করে অ্যাড্রেস করেছি। তাদের কোনো অনুষ্ঠানে গিয়ে সেখানে আমরা কথা বলেছি। আইনজীবীদের অনুষ্ঠানে গিয়ে আমরা কথা বলেছি। সেখানে আমরা বলেছি, বিচার প্রক্রিয়াকে বিলম্বিত করা মানে বিচার অস্বীকার করার শামিল। তড়িঘড়ি করে করা মানে সুষ্ঠু বিচার না হওয়া। আদালত যাতে উভয়পক্ষের কথা শুনে, সে প্রক্রিয়া নিশ্চিত করা। মানুষ যেন আইনের প্রতিকার পায়। এই প্রতিকার পাওয়ার ক্ষেত্রে আইন সম্পাদক হিসেবে, ক্ষমতাসীন দলের সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য হিসেবে আমি ও আমাদের আইনবিষয়ক উপ-কমিটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছি।
পলিটিক্সনিউজ : আইন সম্পাদকের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালনে কোনও চাপ অনুভব করেন কিনা?
শ ম রেজাউল করিম : মন্ত্রী হিসেবে এবং পাশাপাশি আওয়ামী লীগের ল’ সেক্রেটারির দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে এ দুটি বিষয় কখনও আমার আছে সাংঘর্ষিক মনে হয়নি। কারণ আমাদের যিনি প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা তিনি আজ পর্যন্ত কোনদিন আমাকে বলেননি, “অমুকের বিরুদ্ধে কিছু করো না, তমুককে ছেড়ে দাও বা এটাকে বিশেষভাবে দেখো”। তিনি বরাবরই বলেছেন, “তোমার মেধা-জ্ঞান তোমার শপথ ও সততা নিয়ে দায়িত্ব পালন করবা, ইট ইস ইউর অপশন”। ফলে ল-সেক্রেটারি ও মন্ত্রণালয় একসঙ্গে চালাতে গিয়ে কখনও চাপ মনে হয়নি।
পলিটিক্সনিউজ : যুদ্ধাপরাধের বিচারের ক্ষেত্রে আইনবিষয়ক উপকমিটির ভূমিকা কী ছিলো?
শ ম রেজাউল করিম : বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় অপরাধ ছিলো যুদ্ধাপরাধ। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার যাতে আইনানুগ প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন হয় সে প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে আমি ও আমার আইনবিষয়ক উপ-কমিটি ভূমিকা রেখেছি। বিভিন্ন বিষয়ের ওপরে সেমিনার করা, বিভিন্ন বিষয়ে পত্রিকায় আর্টিকেল লেখা, পার্টির ফোরামে বিষয়গুলো তুলে ধরা, এমনকি ট্রাইব্যুনালের যারা প্রসিকিউটর, তাদের কী করা উচিত সেটাও আমরা বলেছি।
আবার যখন কেউ ট্রাইব্যুনালের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে, তখন সেই জায়গায় আমরা কঠোরভাবে প্রতিরোধ গড়েছি। যারা ট্রাইব্যুনালের বিচার প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করতে চেয়েছে তাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া যায়, আমরা সেই প্রক্রিয়ায় সেখানে যা যা করণীয় করেছি। আমরা ন্যায়বিচার প্রার্থীদের পাশেও দাঁড়িয়েছি।
পলিটিক্সনিউজ : সামাজিক অপরাধের বিষয়ে আপনার কী ভূমিকা ছিলো?
শ ম রেজাউল করিম : বাংলাদেশে বিভিন্ন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় আমরা সোচ্চার ছিলাম এবং আছি। শিশুর শরীরে বাতাস ঢুকিয়ে হত্যা করা, একজন নারীকে নির্যাতন এবং আত্মহত্যা করতে বাধ্য করা, কোন নারীকে পুড়িয়ে মারা, বীভৎস কায়দায় মানুষকে হত্যা করা, এসব ঘটনায় সোচ্চার থেকে পার্টির ফোরামে কথা বলেছি। যাতে সরকারের পক্ষ থেকে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হয়। সরকারের যে সমস্ত ইন্সট্রুমেন্ট আছে, প্রশাসন যন্ত্র আছে তারা যেন সেখানে প্রপারলি কাজ করে সেজন্য তাদের অ্যাড্রেস করেছি। ন্যায়বিচারে বাধাগ্রস্ত সৃষ্টিকারী কর্মকর্তাদের ট্রান্সফার করার জন্য আমরা কথা বলেছি।
পলিটিক্সনিউজ: আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন ঘিরে আপনার ভাবনা কি?
শ ম রেজাউল করিম : বাংলাদেশের ইতিহাস মানে আওয়ামী লীগের ইতিহাস। ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংগ্রাম এবং গৌরবের অগ্রযাত্রায় আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। আগামী ২০-২১ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী বাঙালি জাতির মিলন-মেলা। বাংলাদেশের সকল মানুষের মধ্যে আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন ঘিরে উৎসাহ-উদ্দীপনা বাড়ছে। সম্মেলন বলতে আমরা বুঝি নতুন নেতা নির্বাচিত হবে, নতুন-নতুন নেতৃত্ব আসবে। নবীন-প্রবীণ, অভিজ্ঞ এবং যাদের অভিজ্ঞতা দিয়ে আওয়ামী লীগকে সমৃদ্ধ করা উচিত তাদের সবাইকে নিয়ে সম্মেলনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটি গঠিত হবে, যার প্রধান থাকবেন আমাদের আশা-আকাঙ্ক্ষার, চিন্তা-চেতনার শেষ ঠিকানা আমাদের বাঙালি জাতি সত্তার স্বপ্ন সারথি আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা। আজকে বাংলাদেশ কি চায়, বাংলাদেশের মানুষের কি প্রত্যাশা তা বঙ্গবন্ধুর কন্যাই সবচেয়ে ভালো জানেন, বোঝেন, উপলব্ধি করেন।
পলিটিক্সনিউজ : সময় দিয়ে কথা বলার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
শ ম রেজাউল করিম : আপনাকে ও পলিটিক্সনিউজ টুয়েন্টিফোর ডট কম পরিবারকেও ধন্যবাদ।