খালিদ মাহ্মুদ চৌধুরী। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে রয়েছেন। টানা তৃতীয়বারের মত সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। খালিদ মাহ্মুদ চৌধুরী’র পিতা মরহুম আব্দুর রৌফ চৌধুরী মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ এবং সমাজ সেবক হিসেবে খ্যাতিমান। তাঁর পিতা বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে বৃহত্তর দিনাজপুর (ঠাকুরগাঁও-পঞ্চগড়) ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬২ সালে হামিদুর রহমান শিক্ষা আন্দোলন এবং ৬৬তে ৬ দফা আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। স্বাধীনতা সংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রধানমন্ত্রী তাজ উদ্দীন আহম্মেদ এর দূত হিসেবে কাজ করেন। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে আখচাষী ফেডারেশনের সভাপতি এবং কৃষকলীগের সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৫ সালে ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর দীর্ঘদিন আত্মগোপনে থেকে আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করার চেষ্টা চালিয়ে যান, ১৯৮১ সালে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করার পর দিনাজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত এ দায়িত্বে ছিলেন এবং এসময়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালে দিনাজপুর-১ (বীরগঞ্জ-কাহারোল) এর সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং ১৯৯৯ সালে ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ২০০২ সালে ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসের কর্মসূচী চলাকালে বি.এন.পি-জামাত সরকারের পুলিশ বাহিনী দ্বারা নির্মম নির্যাতনের শিকার হন এবং শারীরিক ভাবে আর পুরোপুরি সুস্থ জীবনে ফিরতে পারেননি।
খালিদ মাহ্মুদ চৌধুরী বাংলাদেশ ছাত্রলীগের মাধ্যমে সরাসরি রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। প্রথমেই স্কুল ছাত্রলীগ এবং থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক, জেলা ছাত্রলীগ এবং পরবর্তীতে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন এবং সর্বশেষ বাংলাদেশ ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদক হিসেবে ছাত্ররাজনীতি শেষ করেন। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগের রাজনীতি শুরু করার সঙ্গে সঙ্গেই আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার কাছাকাছি থাকার সুযোগ হয়, পাশাপাশি ২০০২ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিলে উপ-কমিটির সহ-সম্পাদক নির্বাচিত হন এবং সুনামের সাথে দায়িত্ব পালন করেন এবং ২০০৭ সালের ১২ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর বিশেষ সহকারীর দায়িত্ব লাভ করেন। ২০০৭ সালে ১১ জানুয়ারি (১/১১) সেনা সমর্থিত সরকারের সময় শেখ হাসিনার নির্দেশে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। বিশেষ করে শেখ হাসিনাকে গ্রেফতার করার পর তাঁর মুক্তি, দলকে সংগঠিত রাখার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। জনাব খালিদ মাহ্মুদ চৌধুরী ২০০৮ সালে ২৯ ডিসেম্বর ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দিনাজপুর-২ (বিরল-বোচাগঞ্জ উপজেলা) আসন থেকে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হিসেবে বিপুল ভোটের ব্যবধানে প্রথমবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিলে সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হন এবং ২০১২ সালে জাতীয় কাউন্সিলে দ্বিতীয়বারের মত সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দ্বিতীয়বার একই আসন হতে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০১৬ সালে ২২ অক্টোবর আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিলে তৃতীয়বার সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব পালন করছেন। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর ১১তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তৃতীয়বার দিনাজপুর-২ (বিরল-বোচাগঞ্জ উপজেলা) আসন হতে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন।
সম্প্রতি দেশের জনপ্রিয় অনলাইন নিউজপোর্টাল পলিটিক্সনিউজ টুয়েন্টিফোর ডট কম-এর মুখোমুখি হন তিনি। তার সঙ্গে দীর্ঘ আলাপচারিতায় উঠে আসে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে তার ভূমিকা, আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন ও সমসাময়িক রাজনীতির নানা দিক। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন পলিটিক্সনিউজের নির্বাহী সম্পাদক সালেহ মোহাম্মদ রশীদ অলক।
পলিটিক্সনিউজ : আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিল নিয়ে কী ভাবছেন?
খালিদ মাহ্মুদ চৌধুরী : বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ উপমহাদেশের একটি ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল। এই দলটি এ ভূখণ্ডের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সৃষ্টি হয়েছে। সৃষ্টি পর থেকে এ দলটি এদেশের মানুষের কল্যাণের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগের ৭০ বছরের ইতিহাস, বীরত্বগাঁথা ইতিহাস। এটা আর কোনও রাজনৈতিক দলের নেই। আওয়ামী লীগের কাউন্সিল হচ্ছে এটা দেশের রাজনীতির জন্য একটা বিরাট খবর। শুধু রাজনীতিবিদরাই নয়, দেশের সাধারণ মানুষও আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে কোন ধরনের বার্তা আসছে, কোন ধরনের সিদ্ধান্ত হচ্ছে সেদিকেই সবার চোখ। রাজনৈতিক, আর্থ-সামাজিক, অর্থনৈতিক সব সিদ্ধান্ত এখান থেকেই আসবে। তাই আওয়ামী লীগের সম্মেলন নিয়ে দেশের মানুষ উচ্ছ্বসিত। জনগণ অপেক্ষা করছে সম্মেলনের জন্য। তিন বছর পর আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন হচ্ছে। বাংলাদেশের একমাত্র রাজনৈতিক দল হচ্ছে আওয়ামী লীগ, যারা ধারাবাহিকভাবে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে। এটা অন্যান্য রাজনৈতিক দল কখনোই করে না। আমরা অনেক সীমাবদ্ধতা-প্রতিকূলতার মধ্যেও আওয়ামী লীগের সম্মেলনগুলো করেছি। ৭৫ এর ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর যেভাবে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ওপরে জুলুম, নির্যাতন-নিপীড়ন চালানো হয়েছে, হত্যা-গুম-খুন হয়েছে এর মধ্যেও আওয়ামী লীগ তার সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড ধরে রেখেছিল। এ ধারাবাহিকতায় আগামী ২০-২১ ডিসেম্বর জাতীয় কাউন্সিল। সারা দেশ থেকে কাউন্সিলররা আসবে এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে, সেই সিদ্ধান্তের আলোকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ পরবর্তী তিন বছর পরিচালিত হবে।
পলিটিক্সনিউজ : সহযোগী সংগঠনের মত কেন্দ্রীয় কমিটিতে নেতৃত্ব পরিবর্তনের ধারাবাহিকতা রক্ষা করা হবে কিনা?
খালিদ মাহ্মুদ চৌধুরী : সহযোগী সংগঠনে যারা নেতৃত্বে আসছে তারা দলের মধ্যে ছিল, রাজনীতির মধ্যে ছিল। কাউন্সিলদের সিদ্ধান্তেই তাদের নির্বাচিত করা হয়েছে। সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক কিন্তু একটা সংগঠনের সবকিছু না। একটা সংগঠনের অনেকগুলো জায়গা থাকে, সবগুলো নিয়েই সংগঠন পরিচালিত হয়। আওয়ামী লীগে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককে এককভাবে দল পরিচালনার ক্ষমতা দেয়া হয়নি। আমাদের গঠনতন্ত্রে বলা হয়েছে, পুরো কমিটির সিদ্ধান্তে দল পরিচালিত হবে। কাজেই এটা নতুন নেতৃত্ব বলা যাবে না। আওয়ামী লীগের ৭০ বছরের দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় দেখা গেছে, আওয়ামী লীগ সব সময় সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। জনগণের চাহিদা, দেশের চাহিদা, জনগণের প্রত্যাশার আলোকে আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব উপহার দিয়েছে। এবারও সেভাবেই হবে, জনগণের প্রত্যাশা, প্রাপ্তি এবং চাহিদা যেটা আছে, সে আলোকেই আমাদের নেতৃত্ব হবে।
এখন বাংলাদেশকে আমরা বলি ‘গ্লোবাল ভিলেজের অংশ’। এই যে সমগ্র পৃথিবীতে একটা জায়গায় চলে এসেছে। বাংলাদেশের মানুষের যে চিন্তা-ভাবনা, যুবসমাজ, তরুণসমাজ, ছাত্রসমাজ বা সাধারণ মানুষের যে চিন্তা-ভাবনা সেই চিন্তা-ভাবনা পৃথিবীর চিন্তা-ভাবনা থেকে আলাদা নয়। সেই চিন্তার আলোকে আমাদের নেতৃত্ব তৈরি করতে হবে। তা না হলে আমরা গ্লোবাল ভিলেজের পথযাত্রা থেকে ছিটকে পড়বো। আমার মনে হয় সেই ধরনের নেতৃত্ব আগামী দিনে আমরা পাবো।
পলিটিক্সনিউজ : ক্ষমতার রাজনীতিতে সুবিধাবাদীদের অবস্থান কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
খালিদ মাহ্মুদ চৌধুরী : ৭৫ এর ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর রাজনীতিতে সুবিধাবাদী সমাজ গড়ে উঠেছিল। জিয়া, খালেদা, এরশাদের হাত ধরে এই সুবিধাবাদী সমাজটা পরবর্তীতে বিকাশ লাভ করেছে। সুবিধাবাদীরা এখন বলে- রাজনীতির দুর্দিন এবং সুদিন। দল ক্ষমতায় আসলে তারা বলে রাজনীতির সুদিন, ক্ষমতায় না থাকলেই বলে দুর্দিন। আসলে তারা প্রকৃত রাজনীতিবিদ নয়। ক্ষমতায় আসলে প্রকৃত রাজনীতিবিদরা সংকটের মধ্যে চলে যায়। আর তখন সুবিধাবাদীরা সবার সামনে এগিয়ে যায়। বিপরীতে প্রকৃত রাজনীতিবিদরা দলের দুর্দিনে ফ্রন্ট লাইনে থাকে। সুবিধাবাদীরা তখন হারিয়ে যায়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সঠিকভাবে সুবিধাবাদীদের অ্যাড্রেস করেছেন। কারণ আমাদের দীর্ঘ পথচলায় সুবিধাবাদীদের সঙ্গে কন্টেস্ট করতে হয়েছে।
পলিটিক্সনিউজ : সুবিধাবাদী রাজনীতির অবসান কীভাবে ঘটবে বলে মনে করেন?
খালিদ মাহ্মুদ চৌধুরী : আমাদের এখনও রাজাকারদের সঙ্গে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হয়। স্বাধীনতাবিরোধীদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হয়। স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও এ ধরনের পরিস্থিতি আমরা মোকাবিলা করছি। এখানে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড যেটা বলা হয়, সেটা বাংলাদেশে এখনও নেই। কারণ এখনও স্বাধীনতাবিরোধীরা বাংলাদেশে রাজনীতি করছে। আমাদের প্রতিপক্ষ হচ্ছে স্বাধীনতাবিরোধীরা। আমরা স্বাধীনতার পক্ষের মানুষ। বাংলাদেশে যখন স্বাধীনতার পক্ষে সরকার থাকবে, বিরোধীদলও থাকবে তখন বোঝা যাবে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড রয়েছে। এই জায়গায় না আসা পর্যন্ত রাজনীতিতে সুবিধাবাদীদের দৌরাত্ম্য থাকবে। সে জায়গাটায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অ্যাড্রেস করেছেন। শুদ্ধি অভিযান সফল করতে পারলে, দেশে সুবিধাবাদী রাজনীতির অবসান ঘটবে বলে আমি মনে করি।
পলিটিক্সনিউজ : রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়ে বেগম খালেদা জিয়া কারাবন্দী- বিএনপি বরাবরই এ অভিযোগ করছে। বিষয়টি কীভাবে দেখেন?
খালিদ মাহমুদ চৌধুরী : রাজনৈতিক কারণে খালেদা জিয়াকে জেলে রাখা হয়েছে, এটা ভুল-অসত্য কথা। যারা এ কথাটা এখনও বলে তাদের আইনের প্রতি শ্রদ্ধা নেই। খালেদা জিয়া আইনগতভাবে আদালতের সাজাপ্রাপ্ত একজন আসামি। তিনি আসামি বলেই বিএনপি তাদের গঠনতন্ত্র সংশোধন করেছে। যাতে অপরাধীরা এই দল করতে পারে। বিএনপি কখনই আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিল না। আইনের প্রতি শ্রদ্ধা না থাকায় বিএনপি নেতারা বলছে; রাজনৈতিক কারণে খালেদা জিয়াকে জেলে রাখা হয়েছে। এটা সম্পূর্ণভাবে মিথ্যা। তাদের এ ধরনের বক্তব্য অপরাধীদের পক্ষে- এটাই প্রমাণ করে।
পলিটিক্সনিউজ : বিএনপি অপরাধীদের পক্ষে, এর ব্যাখ্যাটা জানাতে চাই।
খালিদ মাহ্মুদ চৌধুরী : ৭৫-পরবর্তী বিএনপি অপরাধীদের নিয়ে রাজনীতি করেছে। সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী, শাহ আজিজ, আব্দুল আলিম এরা সবাই যুদ্ধাপরাধী ছিলো। এদের নিয়ে রাজনীতি করেছে বিএনপি। বঙ্গবন্ধুর খুনিদের সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা কে দিয়েছিল? জিয়াউর রহমান, তাই না? একইভাবে সামরিক জান্তারাও ৯০ সাল থেকে অপরাধীদের প্রাধান্য দিয়ে রাজনীতি করেছে। খালেদা জিয়াও ক্ষমতায় এসে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের পাশে রেখেছেন। স্বাধীনতাবিরোধী কুখ্যাত নিজামীকে মন্ত্রী বানিয়েছেন। বিএনপি অপরাধীদের দল, তাই তারা অপরাধীদের পক্ষ নেবে এটাই স্বাভাবিক। বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার করা যাবে না, ৩ নভেম্বর জেল হত্যার বিচার করা যাবে না- এই অর্ডিন্যান্স জারি করেছিল কে? এটাকে আইনে পরিণত কে করেছিল? জিয়াউর রহমান করেছিল। সেটাকে এরশাদ-খালেদা কেউ বাতিল করেনি। জনগণের রায় নিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার এটা বাতিল করেছে। কেন বাতিল করেছে? আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য। আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা।
আজকে দেশ আইনের শাসনের পথে এগিয়ে যাচ্ছে, আইনের প্রতি মানুষের শ্রদ্ধা বেড়েছে। আইনকে মানার চেষ্টা করছে মানুষ। একটা সময় দেখেছি আইন ভাঙা নিয়মে পরিণত হয়েছিল। আগে মানুষ রাস্তা পারাপার হওয়ার সময় কোনও নির্দেশনার দিকে তাকাতো না। এখন মানুষ তাকায়, এখন মানুষ যত্রতত্র মলমূত্র ত্যাগ করে না। এগুলো আস্তে আস্তে চর্চা হচ্ছে। আমরা যে উন্নত দেশের কথা বলেছি; ২০৪১ সালে উন্নত দেশ গড়তে হলে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
পলিটিক্সনিউজ : ডিসেম্বরে জোরালো আন্দোলনে নামার কথা বলছে বিএনপি, তাদের এই আন্দোলনের ইঙ্গিত কিংবা প্রস্তুতিকে কীভাবে দেখছেন?
খালিদ মাহ্মুদ চৌধুরী : বিএনপির গত ১০ বছর যাবত আন্দোলনের হুমকি আমরা দেখেছি। বিএনপি আন্দোলনের কথা বলছে, এটা তো নতুন কিছু না। তারা তো ২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারি অবরোধ দিয়েছিল। সেই অবরোধ প্রত্যাহার হয়েছে কিনা আমি জানি না। ডিসেম্বরের আন্দোলন আবার সেই অবরোধের পার্ট কিনা? বিএনপি অনেক কথাই বলবে, তবে তারা রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়া হয়ে গেছে। বিএনপির রাজনৈতিক দেউলিয়াত্ব বিগত নির্বাচন প্রমাণ হয়েছে। তারা খড়-কুটার মত ভেসে যাচ্ছে, যা পাচ্ছে তা ধরে বাঁচার চেষ্টা করছে। বিএনপিকে নিয়ে কিছু অপরাধী, কিছু দেশবিরোধী মানুষ ভাবছে। বিএনপি বেঁচে থাকলে তাদের হয়তো সুবিধা হবে।
পলিটিক্সনিউজ : বিএনপির আন্দোলন মোকাবিলায় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক অবস্থান কী?
খালিদ মাহ্মুদ চৌধুরী : আওয়ামী লীগ খুব শক্তিশালী সংগঠন। আওয়ামী লীগের জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন পর্যায়ে এমনকি গ্রাম কমিটিও আছে। আমাদের কমিটিগুলো ক্রিয়াশীল। আমাদের কার্যক্রম রয়েছে। আমাদের যে রুটিন ওয়ার্ক আছে, সারা বছরব্যাপী সেগুলো আমরা পালন করি। পাশাপাশি দেশবিরোধী রাজনীতি, গুজব ও ষড়যন্ত্রমূলক কর্মকাণ্ডও আমরা তৃণমূল থেকে শুরু করে জাতীয় পর্যায় পর্যন্ত মোকাবিলা করছি। কাজেই আওয়ামী লীগ অনেক শক্তিশালী না হলে এই ধরনের স্বাধীনতাবিরোধী চক্রকে মোকাবিলা করতে পারতো না।
পলিটিক্সনিউজ : পদ-পদবী না পেয়ে অনেকেই রাজনীতি থেকে বিমুখ হয়ে যায়, তাদের উদ্দেশ্য আপনার বক্তব্য কী?
খালিদ মাহ্মুদ চৌধুরী : রাজনীতি কোনও হতাশার জায়গা নয়, রাজনীতি একটা নিরন্তর পথচলার জায়গা। রাজনীতির এই দীর্ঘ মিছিলে একজন কর্মীর কর্মকাণ্ড কোথায় যাবে সেটা সময় বলে দেবে। দল যেখানে যে অবস্থায় রাখবে, সেভাবেই কাজ করতে হবে। সবাইকে দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কাজ করতে হবে, এখানে হতাশার জায়গা নেই। দল যদি আমাকে বলে তোমার কোনও পদ থাকবে না, তুমি একজন দর্শনার্থী থাকবে, দর্শনার্থী হিসেবেই আমাকে কাজ করতে হবে। রাজনীতি কোনও চাকরি বা ব্যবসা নয়। এখানে ভোগ-বিলাসের জায়গা নেই। রাজনীতিবিদকে ঘিরে অনেক মানুষ তাকিয়ে থাকে, তাকে চলার পথে এগুলোও ভাবতে হবে। দেশের ১৬ কোটি মানুষের ভাবনা, জীবনযাত্রা, অর্থনৈতিক-সামাজিক অবস্থার সঙ্গে খাপ খাইয়ে চলাটাই একজন রাজনীতিবিদের দায়িত্ব।
পলিটিক্সনিউজ : সময় দিয়ে কথা বলার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
খালিদ মাহ্মুদ চৌধুরী : আপনাকে ও পলিটিক্সনিউজ টুয়েন্টিফোর ডট কম পরিবারকেও ধন্যবাদ।