বাংলাদেশ জুট মিলস করপোরেশনের উদ্যোগে (বিজেএমসি) এবছর ঢাকা আন্তর্জাতিক ২৫তম বাণিজ্য মেলায় পরিদর্শন করা হচ্ছে পরিবেশ বান্ধব পাটের সোনালী ব্যাগ । পলিব্যাগের মত দেখতে এই দূষণমুক্ত ব্যাগের নাম করণ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা । প্লাস্টিক ব্যাগের পরিবেশের ক্ষতিকর দিক বিবেচনা করে এই সোনালী ব্যাগের আবিস্কার করেছেন বিজেএমসির বিশিষ্ট বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা ড. মোবারক হোসেন । এবার সোনালী ব্যাগ পাওয়া যাচ্ছে বাণিজ্য মেলার স্টল নাম্বার আরএমপি ০৪ এ ।
মেলা পরিদর্শন কালে বিজেএমসির স্টল থেকে পরিদর্শিত ছবির সূত্র মতে জানা যায় , পাটের সেলুলোজ থেকে তৈরি ব্যাগ সম্পূর্ণ পচনশীল ও পরিবেশ বান্ধব। এ পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার করার পর ফেলে দিলে ৫ ঘন্টা পর ধীরে ধীরে গলতে শুরু করে। ৫-৬ মাসের মধ্যে মাটিতে মিশে যায়। সোনালী ব্যাগ মাটিতে পঁচে যাওয়ার পর জৈব সারে পরিণত হয় প্লাস্টিকের পলিথিনের চেয়ে অধিক কার্যকর এ ব্যাগে দেড়গুণ ভারি দ্রব্য বহন করা যাবে। খাদ্য দ্রব্য সংরক্ষণ করাও যাবে। সোনালী ব্যাগ আগুনে পুড়লে ছাই হয়ে যায় । পানিতেও সময় নির্ধারণ (১- ৬ মাস) করে সোনালী ব্যাগ দ্রবীভূত করা যায় । ফলে, পানিতে মাছের খাদ্য হিসেবেও সোনালী ব্যাগ ব্যাবহার করা যায় ।
স্টলে কর্মরত সহকারী মার্কেটিং ম্যানেজার জহিরুল ইসলাম পলিটিক্স নিউজকে জানান , মূলত জনমনে এ ব্যাগের উপকারিতা ও প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্বি ও প্রতিক্রিয়া যাচাই এবং বাণিজ্যিক ভাবে উৎপাদনকে লক্ষ্য করেই মেলায় এ পাইলট প্রজেক্ট ব্যাগের পরিদর্শন কার্যক্রম চলছে । পাশাপাশি বাজার জরিপ ও এ ব্যাগের কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বা পরিবেশ দূষণের কোনো কারণ কাছে কি না তা নিয়ে গবেষণা চলছে বলে জানান ।
তিনি আরও বলেন , পাটের পলিথিন ব্যাগ ব্যবহারে পরিবেশ দূষণ, ভূমির উর্বরতা হ্রাস, শহরে, জলাবদ্ধতা সৃষ্টি সহ প্রভৃতি থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। ক্ষুদ্র পরিসরে ‘সোনালি ব্যাগ’ উৎপাদন শুরু হয়েছে। তবে এখনও তা বাজারে বাণিজ্যিকভাবে আনা হয়নি। এ ব্যাগ বিদেশে রফতানির ব্যাপক সম্ভাবনাও রয়েছে। সরকারের এ প্রকল্পের ফলে বহু লোকের কর্মসংস্থান সম্ভব হয়েছে বলে যোগ করেন তিনি । বাণিজ্যিক ভাবে উৎপাদনকে লক্ষ্য করেই প্রাথমিক পর্যায়ে পরিদর্শন কালে মেলাকে সামনে রেখে প্রত্যেক হরেক রকম রঙ্গের পিছ সোনালি ব্যাগের দাম ১০ টাকা করে ধরা হয়েছে বলেও জানান তিনি যা বাণিজ্যিক রুপ পেলে অনেকটাই শ্রাসয়ী মূল্যে পাওয়া যাবে ।
সোনালী ব্যাগের উদ্ভাবক ও বিজেএমসির বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা ড. মোবাবক হোসেন ফোন আলাপে পলিটিক্স নিউজকে জানান , এই ব্যাগ পলিথিন ব্যাগের চেয়ে দেড়গুণ বেশি শক্তিশালী। এটি পরিবেশ বান্ধব। সরকারের কাছে আবেদন এটি বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিতে শিগগিরই ব্যবস্থা নেবে। এজন্য বাজেট দরকার। এই ব্যাগ পঁচনশীল। এটিতে কোনো ধরনের প্লাস্টিক নেই। তাই পরিবেশের কোনো ক্ষতি করে না। এটা পুনরায় ব্যবহার করা যায়। তবে পলিথিনে তা সম্ভব হয় না।
তিনি আরও বলেন, ২০০৮ সাল থেকে আমি গবেষণা শুরু করেছি। সরকার যে সাপোর্ট দিয়েছে তাতে আশার আলো দেখতি পারছি। এজন্য আরও নতুন মেশিন দরকার। অটোমেশন করতে হলে বিদেশি মেশিন দরকার।
বিজেএমসির এক সূত্রে জানা যায় যে , বাংলাদেশি বিজ্ঞানীর আবিষ্কৃত পলিথিনের বিকল্প পচনশীল সোনালি ব্যাগ দেখতে প্রচলিত পলিথিনের মতোই হালকা, পাতলা ও টেকসই। পাটের সুক্ষ্ম সেলুলোজকে প্রক্রিয়াজাত করে এ ব্যাগ তৈরি করা হয়েছে। পাটের তৈরি সোনালি ব্যাগ মাটিতে ফেললে তা মাটির সঙ্গে মিশে যাবে। ফলে পরিবেশ দূষিত হবে না। এই ব্যাগ দামে সাশ্রয়ী হবে। এভাবে পাটের ব্যবহার বাড়লে ন্যায্য দাম পাবেন কৃষক। অতীতের মতোই, বাংলাদেশ পাট দিয়েই বিশ্বব্যাপী সুপরিচিত হবে।
উল্লেক্ষ্য, প্লাস্টিক ব্যাগের পরিবেশের ক্ষতিকর দিক বিবেচনায় এনে দেশে পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছেন সরকার। প্লাস্টিকের বিকল্প হিসেবে পাটের পলিথিন ব্যাগ নিয়ে এসেছে বাংলাদেশ জুট মিলস করপোরেশন (বিজেএমসি)। নিষিদ্ধ হলেও বাজার থেকে পলিথিন ব্যাগ যেমন উঠে যায়নি, তেমনি পাটের ব্যাগও সেভাবে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেনি। তবে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় পাটের তৈরি পলিথিন ‘সোনালি ব্যাগ’ শিগগিরই বাণিজ্যিকভাবে বাজারে ছাড়া হবে। এখন পরিবেশ বান্ধব পাটের তৈরি এ সোনালি ব্যাগ ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় প্রদর্শন করা হচ্ছে। ২০১৮ সালের ২ অক্টোবর পাট থেকে সোনালী ব্যাগ বাণিজ্যিক উৎপাদনের জন্য যুক্তরাজ্য এর একটি খ্যাতনামা কোম্পানি ফিউটামুরা কেমিক্যাল লিমিটেডের সঙ্গে বিজেএমসির একটি সমঝোতা স্বারক (এমওইউ) একটি এনডিএ স্বাক্ষরিত হয় ।