জমে উঠেছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোটের প্রচার-প্রচারণা। প্রতিদিনই বাড়ছে নির্বাচনী উত্তাপ। তীব্র শীত উপেক্ষা করে প্রার্থীরা ছুটছেন ভোটারদের দুয়ারে দুয়ারে। নাগরিকদের আকৃষ্ট করতে প্রার্থীরা যে যার মতো করে কৌশল অবলম্বন করছেন। তবে এরইমধ্যে চলছে হামলা, হুমকি আর প্রচারণায় বাধা দেয়ার মতো ঘটনায়ও। বিশেষত, উত্তর ও দক্ষিণ সিটিতে বিএনপি সমর্থিত দুই মেয়র প্রার্থীর অভিযোগ, কোনও কারণ ছাড়াই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী-সমর্থকরা প্রচারে বাধা দিচ্ছে, প্রার্থীদের বাড়িতে গিয়ে হুমকি দিচ্ছে, হামলা চালাচ্ছে, পুলিশ দিয়ে ধরিয়ে দিচ্ছে।
বিএনপির মেয়র প্রার্থীদের অভিযোগ, সরকার দলীয় সমর্থকরা সম্পূর্ণভাবে নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গ করছে। কোথাও কোনও লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নেই। সর্বত্র আওয়ামী লীগের একচ্ছত্র আধিপত্য। নির্বাচন কমিশনও এসব ব্যাপারে অভিযোগ আমলে নিচ্ছে না। কমিশন সরকারের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটাতে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নিচ্ছে। বর্তমান কমিশনের অধীনে নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ নির্বাচন নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করছেন ধানের শীষের দুই মেয়র প্রার্থী তাবিথ আওয়াল ও ইশরাক হোসেন। গত কয়েকদিন দুই সিটিতে প্রচারণা চালানোর সময় সাংবাদিকদের সঙ্গে কথাবার্তায় তাদের কাছ থেকে এমন বক্তব্যই উঠে এসেছে।
গেল ১২ জানুয়ারি পুরানঢাকার লক্ষ্মীবাজার কবি নজরুল মোড়ে সংক্ষিপ্ত পথসভায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী প্রকৌশলী ইশরাক হোসেন প্রতিপক্ষের প্রতি ইঙ্গিত বলেন, ‘কেউ আমাদের থামাতে পারবে না। আপনাদের কতো শক্তি আছে আপনার দেখান। আপনাদের কতো পুলিশ আছে আপনারা দেখান, আমাদের থামাতে পারবেন না। কোনো বাধা আমরা মানবো না। আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। কোনোভাবেই দমে যাবো না। ইনশাআল্লাহ বিজয় আমাদের আসবেই।’
এর একদিন পরই গণসংযোগ চলাকালে ভোটের মাঠে প্রতিপক্ষের হামলার প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, ‘এবার হামলা হলে কোনও ছাড় দেয়া হবে না। প্রতিপক্ষের সব হামলা মোকাবিলা করতে ও কঠোর জবাব দিতে এবার প্রস্তুত আছি।’
নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্র চলছে অভিযোগ করে ১৩ জানুয়ারি প্রচারণায় অংশ নিয়ে ঢাকা উত্তর সিটির বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল বলেছেন, ‘নির্বাচন নিয়ে অনেক ষড়যন্ত্র চলছে। আমরা সকলকে নিয়ে সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করবো। জনগণ জেগে উঠেছে। ধানের শীষের পক্ষে ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। জনগণ ভোট দিতে পারলে বিজয় এবার সুনিশ্চিত।’
এর একদিন পরই তাবিথ অভিযোগ করে বলেন, ‘কোথাও লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নেই। শত বাধার মুখেও আমরা এখনও শান্ত আছি, শান্তিপূর্ণভাবে মাঠে আছি এবং থাকবো। নির্বাচন কমিশনের ভূমিকায় সন্তুষ্ট হতে পারছি না। আমাদের প্রচার-প্রচারণায় বাধার সৃষ্টি করা হচ্ছে। কাউন্সিলরদের নির্বাচনী অফিস ভাঙচুর করা হয়েছে। ইসি এখনও কোনও ব্যবস্থা নেয়নি।’
গত ১৪ জানুয়ারি খিলগাঁওয়ে ভোটের প্রচার চালাতে গিয়ে ইশরাক বলেন, ‘আমরা অভিযোগ দিলে সরকারি দলের নেতারা, মন্ত্রীরা আমাদেরকে ‘অভিযোগের দল’ বলেন, ‘নালিশ পার্টি’ বলেন। আমাদের পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা হচ্ছে, পোস্টার লাগাতে গেলে হুমকি দেয়া হচ্ছে। নির্বাচন কমিশন নির্বিকার। অতএব আমরা এখন থেকে আর কোনও অভিযোগ দেবো না। এখন থেকে বাধা এলেই জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সকল অপশক্তির বিরুদ্ধে কঠিন প্রতিরোধ গড়ে তুলে দৃঢ় প্রত্যয়ে এগিয়ে যাবো।’
ভোটারদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘আমি আপনাদের কাছে প্রতিজ্ঞা করতে চাই, যদি আগামী ৩০ তারিখে আপনারা ভোট দিয়ে আমাকে নির্বাচিত করেন তবে আপনাদের যে অধিকার ফিরিয়ে দেয়ার আন্দোলন সেটিকে চূড়ান্ত রূপ দেয়ার জন্য আমি সকল কার্যক্রম করবো। আপনাদের কাছে প্রতিজ্ঞা করছি, আমি সব সময় সুখে-দুখে আপনাদের পাশে থাকবো এবং আমি আমার রক্ত, ঘাম দিয়ে পরিশ্রম করে ঢাকার শহরকে উন্নত করবো। ঢাকার পরিবেশকে দূষণমুক্ত করার জন্য সবকিছু করবো। এটি আমার ইশরাক হোসেনের লড়াই নয়। এটি ধানের শীষের লড়াই। জনগণের লড়াই। গণতন্ত্রের লড়াই। আপনারা সেই লড়াইয়ে শরিক হবেন। আপনারা ৩০ তারিখে উপস্থিত হয়ে ভোট দেবেন, আমরা সেই পরিবেশ নিশ্চিত করবো।’
লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ইশরাক বলেন, ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নয়, একটি ফিল্ড তৈরি হচ্ছে। আর সেই ফিল্ড হলো ভোট ডাকাতির একতরফা ফিল্ড। আমরা পোস্টার লাগাতে গেলে ছিঁড়ে ফেলছে। বাধা দেয়া হচ্ছে। মারধর করা হচ্ছে। এমনও বলা হচ্ছে, যদি আবার পোস্টার লাগাতে আসা হয় তাহলে পুলিশ ডেকে ধরিয়ে দেবে। পোস্টার লাগানো কি অপরাধ? পোস্টার লাগানো তো অপরাধ নয়। তাহলে কেন থানা পুলিশে দেওয়ার হুমকির দেবে পোস্টার লাগাতে গেলে।’
সবশেষ গতকাল বুধবার রাজধানীর উত্তর বাড্ডায় ভোটের প্রচারণা চালাতে গিয়ে উত্তরের মেয়র প্রার্থী তাবিথ বলেন, ‘এতদিন বিএনপি প্রার্থীদের পোস্টা ছিড়ে ফেলা হতো। এখন মাইক কেড়ে নেয়া হচ্ছে। পোস্টার না লাগাতে হুমকি-ধামকি দেয়া হচ্ছে। হামলা করা হচ্ছে। পুলিশ দিয়ে অনেককে গ্রেফতার করানো হচ্ছে। তিদিন নতুন নতুন পদ্ধতিতে প্রচার-প্রচারণায় বাধা দেয়া হচ্ছে। কোথাও লেভেলে প্লেয়িং ফিল্ড নেই। সবখানে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীরা নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গ করছেন।’
ইসর প্রতি আহ্বান জানিয়ে ধানের শীষের এই মেয়র প্রার্থী বলেন, ‘ভোটের প্রচারের আর মাত্র ১২ দিন বাকি আছে। এই সময়ে যেন সব প্রার্থী সমানভাবে প্রচারণা চালাতে পারে সেই ব্যবস্থা করুন।’
এদিকে বিএনপির মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণায় ইতোমধ্যে প্রতিপক্ষের হামলার খবর গণমাধ্যমে আসছে। গ্রেফতারও করা হচ্ছে প্রার্থীদের। তবে আওয়ামী লীগ সমর্থিত ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটির মেয়র প্রার্থীদের দাবি, নির্বাচনী আচরণবিধি মেনেই তারা ভোটের প্রচারণা চালাচ্ছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সফলভাবে পরিস্থিতি সুশৃঙ্খল রেখেছে। কোথাও কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। উত্তরে নৌকার প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ও দক্ষিণে মেয়র প্রার্থী ফজলে নূর তাপস দুজনেই আশাবাদী, ৩০ জানুয়ারি উন্নত ও আধুনিক ঢাকা গড়ার পক্ষে নৌকার বিজয় হবেই। জনগণ বিএনপির দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে বলেও মন্তব্য করছেন সরকারদলীয় এই দুই মেয়র প্রার্থী।