বর্তমান সরকারের অগণতান্ত্রিক আচরণ, নির্বাচনী ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে ফেলা ও জনগণের ভোটাধিকার হরণ করায় দেশের ‘মানুষ একদম অসহ্য হয়ে গেছে’ বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন।
ঢাকা সিটিতে যে নির্বাচন হয়েছে তাকে মোটেই ভালো নির্বাচন বলা যাবে না উল্লেখ করে ড. কামাল বলেন, ‘সরকার দায়িত্বহীনভাবে সংবিধান পরিপন্থি কাজ করছে। নির্বাচনের প্রক্রিয়া পদ্ধতিকে ধ্বংস করেছে। যার ফলে আজকে দেশে ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। আমরা এ কথাগুলো জনগণকে বলতে থাকবো, বলার দিক থেকে আমাদের কোনও কমতি নেই। আমরা বলতে থাকবো, মানুষকে জানাতে থাকবো। মানুষ একদিন ঘুরে দাঁড়িয়ে বলবে- সরকার যে কাজগুলো করছে সেটা সঠিক নয়।’
মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে মতিঝিলে নিজ চেম্বারে ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিয়মকালে তিনি এসব কথা বলেন।
ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘স্বৈরাচারকে মানুষ কখনোই গ্রহণ করেনি। এখনও করবে না।’
এসময় সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, ‘আপনারা সাংবাদিকরা পুরো নির্বাচনে আমাদের সঙ্গে ছিলেন, এজন্য আপনাদেরকে ধন্যবাদ জানাই। তিন সপ্তাহ পর্যন্ত আমাদের যে ভোটের মাঠে ক্যাম্পেইন ছিল আপনারা সর্বাত্মক সহযোগিতা আমাদের করেছেন। জনগণ আমাদের সাথে ছিল না- এ বক্তব্য সঠিক নয়। আপনাদের ক্যামেরা প্রকাশ করেছে, প্রমাণ হয়েছে জনগণ আমাদের সঙ্গে কিভাবে মাঠে ছিল।’
মঈন খান বলেন, ‘উত্তরে বলেন কিংবা পুরান ঢাকায়- সবখানে মানুষ আমাদের সঙ্গে ছিল। আমরা যখন জনগণের কাছে গিয়েছি তখন হাজার হাজার মানুষ আমাদের ডাকে সাড়া দিয়েছে। আমাদের দুজন প্রার্থীর সঙ্গে জনগণ একাত্মতা পোষণ করেছে। জনগণ আমাদের সঙ্গে পুরো নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় যুক্ত ছিলো। মানুষের জনস্রোতে প্রমাণ হয়েছে আসলে জনগণ কাকে চায়।’
জাসদ সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে জনগণের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে ধৈর্য সহকারে রাজনৈতিক দলকে দৃঢ়তার সঙ্গে আন্দোলনে নামতে হবে। অস্থির হলে চলবে না। সময় বলে দেবে কখন কি করতে হবে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট প্রয়োজন অনুযায়ীই পদক্ষেপ নেবে।’
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘আমরা ধৈর্যের পরীক্ষা দিচ্ছি। জনগণের অধিকারকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য এখন থেকে আমরা রাস্তায় পথে ঘাটে মিটিং-মিছিলসহ সব ধরনের সভা কর্মসূচি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। মানুষ আন্দোলন নিয়ে যে আশার কথা বলছে এখন থেকে সেটারই প্রতিফলন ঘটবে।’
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার কারাবরণের দুই বছরকে সামনে রেখে বৈঠক থেকে আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় প্রতিবাদ সভার কর্মসূচি ঘোষণা করেছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট।
বৈঠকে ড. কামাল হোসেনের পক্ষে লিখিত বক্তব্য গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট মহসীন রশীদ বলেন, ‘আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার দুই বছর কারাবাসের প্রতিবাদে ও তাঁর মুক্তির দাবিতে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে প্রতিবাদ সমাবেশ করবে ঐক্যফ্রন্ট। ওইদিন বেলা ১১টা থেকে এ সমাবেশ শুরু হবে। ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতারা সমাবেশে উপস্থিত থাকবেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘সদ্যসমাপ্ত ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সরকার, নির্বাচন কমিশন ও নির্বাচন প্রক্রিয়ার ওপর যুবসমাজ ও জনগণ অনাস্থা প্রকাশ করেছে। নির্বাচিত মেয়ররা মাত্র ৫-৭ শতাংশ মানুষের রায় পেয়েছে। বাকি ফলাফল ইভিএমের জাল ভোট। বর্তমান সরকারের আমলে গণতন্ত্র, আইনের শাসন ও নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে গেছে। সরকার চায় ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে না যাক। সরকার ভোটারদের ভয় পায়। তাই সরকার নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়েছে। জনগণ ভোটকেন্দ্রে না যাওয়ার অর্থ তারা মনে করে তাদের ভোটে এই সরকারের পরিবর্তন হবে না। গণতন্ত্রের জন্য এটা একটা অশনিসংকেত।’
ড. কামাল হোসেনের সভাপতিত্বে বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন- বিকল্পধারা বাংলাদেশের চেয়ারম্যান অধ্যাপক নুরুল আমিন বেপারী, গণফোরামের সুব্রত চৌধুরী, মোস্তাক আহমদ, নাগরিক ঐক্যের সমন্বয়কারী শহিদুল্লাহ কায়সার, বিকল্পধারা বাংলাদেশের মহাসচিব অ্যাড. শাহ আহমেদ বাদল ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের দফতর প্রধান জাহাঙ্গীর আলম মিন্টু প্রমুখ।