তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ন সাধারন সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ এমপি বলেছেন, উন্নত জাতি গঠনে শিক্ষার সাথে দীক্ষা ও বিদ্যার সাথে বিনয় প্রয়োজন। প্রধানমন্ত্রী ২০৪১ সাল নাগাদ বাংলাদেশকে একটি উন্নত রাষ্ট্রে রূপান্তর করতে চান। সেই উন্নত রাষ্ট্র রূপান্তর করতে হলে উন্নত জাতি গঠন করতে হবে।
তিনি বলেন, আমাদের সন্তানেরা বড় ডাক্তার হবে, সরকারি বড় কর্মকর্তা হবে, কিন্তু গ্রামের দরিদ্র কৃষকের জন্য তার দরজা খোলা রাখেনা, তেমন উন্নয়ন আমরা চাই না। আমাদের নতুন প্রজন্ম নিজেদেরকে এমনভাবে গড়ে তুলবে তাদের মধ্যে মেধা, মূল্যবোধ, দেশাত্মবোধ ও মানুষের প্রতি মমত্ববোধ থাকবে।
শনিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার মরিয়মনগর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের সুবর্ণ জয়ন্তী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সুবর্ণ জয়ন্তী উদ্যাপন পরিষদের আহবায়ক শওকত হোসেন সেতু’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন, বিদ্যালয়টির প্রাক্তন ছাত্র চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট) এর ভিসি ড. মোহাম্মদ রফিকুল আলম, রাঙ্গুনিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাসুদুর রহমান, আমেরিকা প্রবাসী অধ্যাপক ড. আবুল কালাম আজাদ, অর্থোপেডিক বিশেষজ্ঞ ডা. ইমাম উদ্দিন, রাঙ্গুনিয়া সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মো. আবু ইউসুফ, আবুধাবী বঙ্গবন্ধু পরিষদ কেন্দ্রিয় কমিটির সভাপতি ইফতেখার হোসেন বাবুল, ইঞ্জিনিয়ার অমর কান্তি বড়ুয়া, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আলী শাহ, প্রকৌশলী আব্দুল লতিফ, ইউপি চেয়ারম্যান মুজিবুল হক হিরু, সুবর্ণ জয়স্তী উদযাপন পরিষদের সদস্য সচিব জি এম এইচ সিরাজী প্রমুখ।
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, পারিবারিক ও সামাজিক মূল্যবোধে আমরা প্রাশ্চাত্যের চাইতেও অনেক বেশি ধনী। কিন্তু প্রাশ্চাত্যের অন্ধ অনুকরণে আমাদের পারিবারিক এবং সামাজিক মূল্যবোধ যেন হারিয়ে না যায়, সেগুলো যেন আরও সমৃদ্ধ হয়। ২০৪১ সাল নাগাদ প্রাশ্চাত্য যেন দেখে আমরা তাদের মতোই বস্তগতভাবে উন্নত হয়েছি, একই সাথে তাদের চেয়ে আমাদের নতুন প্রজন্ম দেশাত্মবোধ, মূল্যবোধ ও মমত্ববোধে অনেক বেশি উন্নত। তারা যেন আমাদেরকে অনুকরণ করে, আমরা রাষ্ট্রকে সেই জায়গায় নিয়ে যেতে চাই।
তিনি বলেন, আমরা তেমন উন্নয়ন চায়না, যেটা প্রাশ্চাত্যে ঘটেছে। সেখানে দেখা যায়, পাশের বাড়িতে কি হচ্ছে সেটা কেউ দেখেনা। পাশের বাড়িতে একাকি ৮৫ বছরের বৃদ্ধ থাকে। হঠাৎ একদিন দেখা গেলো সেই বাড়ি থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। তিনি একাকি মৃত্যুবরণ করেছেন। পাশের বাড়িতে খবর না রাখার কারণে দুর্গন্ধের কারণে তার মৃত্যুর খবর পান। অথচ এতোদিন কেউ খবর রাখেনি। আমরা চাইনা আমরা যখন বৃদ্ধ হবো তখন আমাদের সন্তানেরা আমাদের বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে দিক। সে ধরণের উন্নয়ন আমরা চায়না।
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশ এখন খাদ্য উৎপাদনে উদ্বৃত্তের দেশ। এখন খাদ্যের জন্য মানুষকে হাহাকার করতে হয়না। মানুষের মাঝে হাহাকার এখন মমত্ববোধের জন্য, ভালোবাসার জন্য। যা ধীরে ধীরে লোপ পাচ্ছে। তাই শিক্ষকদের অনুরোধ জানাবো শিক্ষার্থীদের মেধাবিকাশের পাশাপাশি তাদের মধ্যে মমত্ববোধ, দেশাত্মবোধ এবং মূল্যবোধের অনুপ্রবেশ ঘটাতে হবে। শিক্ষার সাথে দিক্ষা, বিদ্যার সাথে বিনয়কে যুক্ত করে নতুন প্রজন্ম গঠন করতে হবে। না হয় আমাদের দেশকে স্বপ্নের ঠিকানায় পৌছে দেওয়া সম্ভব নয়। ২০৪১ সাল নাগাদ শুধুমাত্র বস্তুগত উন্নয়নের মাধ্যমে অবকাঠামোগত দিক দিয়ে উন্নত রাষ্ট্র গঠন করতে চাইনা। আমরা চাই একটি উন্নত জাতিও গঠন করতে।
তিনি বলেন, আমরা যদি আমাদের জীবনের পেছনে ফিরে থাকায় তাহলে আমাদের শ্রদ্ধেয় শিক্ষকদের স্মরণ করতে হয়। তাদের দেয়া শিক্ষা এবং দীক্ষায় জীবন চলার পথে বহু পথ পেরিয়ে আজকের এই অবস্থানে এসেছি। আমাদের উন্নত নতুন প্রজন্ম গঠন করতে হবে। সেটি করতে হলে শিক্ষার সাথে দীক্ষাকে যুক্ত করতে হবে এবং বিদ্যার সাথে বিনয়কে যুক্ত করতে হবে। এটি না হলে পড়ে সঠিক মানুষ গঠন করা সম্ভবপর নয়।