বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী আহমেদ বলেছেন, ‘এখন দেশ চলছে উল্টোপথে। ক্ষমতাসীনরা নিজেদেরকে মনে করছেন আইন-আদালতের ঊর্ধ্বে। ফ্যাসিবাদ জেঁকে বসেছে হিংস্র রূপ নিয়ে। নিজেদের ইচ্ছেমতো রায় বের করার জন্য দেশের আদালতকে ব্যবহার করা হচ্ছে। কবি শামসুর রাহমানের ভাষায় আজ বলতে হয়- ‘উদ্ভট উটের পিঠে চলেছে স্বদেশ’।’
বুধবার (৪ মার্চ) দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, ‘গতকাল মঙ্গলবার আপনারা দেখেছেন, পিরোজপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালতে কি ভয়াবহ নজিরবিহীন ঘটনা ঘটেছে। ক্ষমতার অপব্যবহার, প্রতারণা, জালিয়াতি, অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে পিরোজপুর-১ আসনের সাবেক এমপি এবং জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ কে এম এ আউয়াল এবং তার স্ত্রী পিরোজপুর জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি লায়লা পারভীনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের দায়ের করা তিন দুর্নীতি মামলায় জামিন আবেদন বাতিল করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন জেলা ও দায়রা জজ আব্দুল মান্নান। আদালতের এই আদেশের বিরুদ্ধে দুর্নীতিবাজ আওয়ামী লীগ নেতার সমর্থকরা আদালতের বাইরে তাণ্ডবলীলা শুরু করে। পিরোজপুরের রাস্তা-ঘাট অবরুদ্ধ করে গাড়ি ভাঙচুর, হামলা, আগুন জালিয়ে বিক্ষোভ, যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দিয়ে ভয়ানক তাণ্ডব চালাতে থাকে। জেলা শহরকে মুহূর্তের মধ্যে এক আতঙ্কের জনপদে পরিণত করে।’
তিনি বলেন, ‘এখানেই শেষ নয়, তারপরে যা ঘটেছে তা আরো ভয়াবহ। রায় ঘোষনার ঘণ্টাখানেক পর বিচারক আবদুল মান্নানকে ওপরের বিশেষ নির্দেশে স্ট্যান্ড রিলিজ করা হয়। বিচারক কেন জামিন দিলো না সে অপরাধে তার বিরুদ্ধে তদন্ত করার ঘোষণাও দেয়া হয়। এরপর মাত্র চার ঘণ্টার মধ্যে আদালতে নতুন বিচারক বসিয়ে তার কাছ থেকে ইচ্ছেমতো রায় আদায় করে নেন। সাবেক এমপি এ কে এম এ আউয়াল কারাগারে না গিয়ে বীরদর্পে বাড়িতে চলে যান। এই হচ্ছে আওয়ামী লীগের নিশিরাতের সরকারের বিচার।’
রিজভী বলেন , ‘সেই স্বাধীন বিবেকের বিচারকের পরিণতি এখন কি হবে তা নিয়ে দেশবাসী শঙ্কিত। তার পরিণতি কি এস কে সিনহার মতো হবে, না মোতাহার হোসাইনের মতো হবে- তা নিয়ে দেশবাসীসহ সংশ্লিষ্ট সবাই গভীর শঙ্কায় অপেক্ষা করছে। এরপরও যখন নিশিরাতের সরকারের মন্ত্রীরা চিৎকার করে বলেন, সরকার আদালতের রায়ে হস্তক্ষেপ করে না, তখন আওয়ামী লীগ লজ্জা না পেলেও বিবেকবান দেশবাসীর লজ্জায় মাথা হেট হয়ে যায়।’
রিজভী বলেন, ‘এতসব ভনিতার কী দরকার? পরিষ্কার করে বলে দিলেই তো হয়-‘কিসের আবার আইন’! ‘শেখ হাসিনার কথাই তো চূড়ান্ত আইন’! কথায় বলে, হাকিম নড়ে তো হুকুম নড়ে না। অথচ নিশিরাতের সরকারের আমলে জনগণ কি দেখছে? হাকিমও নড়ে, হুকুমও নড়ে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হুকুম নড়ে না। এটাকেই বলে, আইন আদালত মাকড়সার জালের মতো। মন্ত্রী-এমপি, ক্ষমতাসীনরা এই জালে আটকাবে না, এই জালে আটকাবে সাধারণ জনগণ আর বিরোধীদলের নেতাকর্মীরা। এরই নাম আওয়ামী লীগ।’
তিনি বলেন, ‘দুঃখজনক হলেও সত্য, দেশের বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, স্বকীয়তা ও পৃথকীকরণের পরিবর্তে নিশিরাতের সরকার বিচার বিভাগকে আইন ও বিচার মন্ত্রণালয়ের একটি শাখা হিসেবে পরিণত করেছে। বিচারকের কাজ এখন ন্যায়বিচারের মাধ্যমে রায় দেয়া নয়, ক্ষমতাসীন মহলের কাছ থেকে পাঠানো রায় পড়া। আওয়ামী লীগ আইন আদালতকে তাদের পকেট আর ভ্যানিটি ব্যাগে ভরেছে। বাংলাদেশের বিচার বিভাগ স্বাধীন একথা এখন নিছক কৌতুক। আবার দুই বছরের বেশী সময় যাবৎ সম্পূর্ণ বিনা অপরাধে কারারুদ্ধ গুরুতর অসুস্থ দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জামিনের প্রসঙ্গ আসলেই এই সরকারের প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে মন্ত্রী-নেতারা বলেন, আদালতের ওপর নাকি তাদের হাত নেই। কি হাস্যকর কথা! তাহলে পিরোজপুরের আদালতে দিনে দুপুরে এটা কোন হাতের কালো থাবা ? বাস্তবে আইন এখন নিজস্ব গতিতে চলেনা, চলে সরকারের গতিতে। যদি আইনের শাসনের লেশমাত্র থাকতো তাহলে জনগণের প্রাণপ্রিয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া আজ জেলে থাকতেন না।’
রিজভী বলেন, ‘দেশনেত্রীকে কারাগারে রেখে বিনা চিকিৎসায় প্রাণনাশ করার জন্য মিডনাইট সরকারের প্রধানমন্ত্রী কেবল জামিনে বাধা দিয়েই ক্ষান্ত হচ্ছেন না, গণভবনে বসে মেডিকেল রিপোর্টও তুলে দিচ্ছেন পিজি হাসপাতালের ডাক্তারদের হাতে। সেই নির্জলা মিথ্যা রিপোর্ট ডাক্তাররা উপস্থাপন করছেন বিচারপতিদের সামনে। বাংলাদেশে এখন চলছে আইয়্যামে জাহেলিয়াতের আদলে আওয়ামী জাহেলিয়াত। বাংলাদেশের চারবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী, ৭৫ বছর বয়স্কা মহিয়সী একজন মরণাপন্ন অসুস্থ নারীকে কাগজ-কলমে সুস্থ দেখিয়ে যে অমানবিক দৃষ্টান্ত স্থাপন করছেন তার পরিণতি এই সরকারকে ভোগ করতেই হবে।’
সংবাদ সম্মেলনে দলটির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শাহিদা রফিক, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।