বাংলাদেশে সনাক্ত হওয়া মহামারি করোনা ভাইরাস নিয়ে বিএনপি কোনও রাজনীতি করছে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেছেন, ‘বিশ্বজুড়ে করোনা ভাইরাস একটা মহামারি আকারে ধারণ করেছে। এর সাথে রাজনীতির কোনও সম্পর্ক নেই। কিন্তু এ ভাইরাস নিয়ে আমরা কি সরকারের দোষ-ত্রুটি ধরিয়ে দিতে পারব না? আমরা এ বিষয়ে কিছু বললেই তারা (ক্ষমতাসীনরা) বলবেন, ‘রাজনীতি করবেন না’।’
বৃহস্পতিবার (১২ মার্চ) নয়াপল্টন এলাকায় করোনা ভাইরাস নিয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে লিফলেট বিতরণ কর্মসূচির আগে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।
গতকাল বুধবার আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের করোনা ইস্যুতে বিএনপির সমালোচনা করে বলেছিলেন, ‘বিএনপি করোনা ভাইরাস নিয়েও নিকৃষ্ট রাজনীতির আশ্রয় নিয়েছে। আমি তাদের (বিএনপি) অনুরোধ করবো, এ ধরনের একটা মানবিক ও সংবেদনশীল বিষয় নিয়ে রাজনীতির বিষোদগার করা থেকে বিরত থাকতে। সব বিষয় নিয়ে রাজনীতি করা ঠিক নয়।’
এরই প্রতিক্রিয়ায় করোনা মোকাবিলায় নিজ দলের পদক্ষেপ তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘দেশের একটি সর্ববৃহৎ দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল হিসেবে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে আমরা আমাদের দায়িত্ব পালন করছি। এরই অংশ হিসেবে আজকে আমরা লিফলেট বিতরণ করবো। সারা দেশে আমরা আমাদের সমস্ত শাখাগুলোকে বলে দিয়েছি, নিজ নিজ অবস্থান থেকে এই ভাইরাস সম্পর্কে মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করতে এবং আক্রান্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে।’
বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, ‘আজকে বিশ্বের প্রায় প্রত্যেকটি দেশে করোনা ভাইরাস থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য জরুরি অবস্থা ঘোষণা করছে। কিন্তু দুর্ভাগ্য, আমাদের দেশে এ ব্যাপারে সচেতনতা সৃষ্টি করা হয়নি। এটাকে প্রথমে গুরুত্বই দেয়া হয়নি। তিনজন আক্রান্ত হওয়ার পর কিছু কিছু ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।’
দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থান বিমানবন্দর ও আদালতগুলোতে করোনা সনাক্তে থার্মাল স্ক্যানারের ব্যবস্থা নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বিমানবন্দরগুলোতে থার্মাল স্ক্যানার এতটাই অপর্যাপ্ত যে চীনা রাষ্ট্রদূতকে বলতে হয়েছে, ‘এখানে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই’। অন্যদিকে চিকিৎসা কেন্দ্রগুলোতে সব রকম সুযোগ সুবিধা এখনও তৈরি করা হয়নি।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমাদের বক্তব্য, সরকার অনেক দেরি করে এ কাজগুলো শুরু করেছে। এর কারণটা রাজনৈতিক, বিশেষ বর্ষ পালনের কারণে সরকার এদিকে নজর দিতে পারেনি। বিশ্বজুড়ে এ ভাইরাস সম্পর্কে খুব বেশি একটা ধারণা নেই। আমাদের দুর্ভাগ্য যে, সারা দেশে উন্নয়নের ডামাডোল বাজানো হচ্ছে, কিন্তু আমাদের স্বাস্থ্যখাত এতই দুর্বল যে সাধারণ মানুষ ন্যূনতম স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আজকে ব্যাঙের ছাতার মতো মেডিকেল কলেজ বেড়েছে, টাকা দিয়ে শুধুমাত্র ছাত্রদের সেখানে ঢুকানো হয় এবং সার্টিফিকেট দেয়া হয়। প্রকৃত অর্থে তাদের যে চিকিৎসক হতে সেখানে পাঠানো হয়েছে সেটা তারা মনে করছেন না। এটা গণতান্ত্রিক সভ্য দেশের জন্য কখনই কাম্য হতে পারে না।’
সরকারের সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘যেহেতু এ সরকার জোর করে ক্ষমতায় এসেছে, তাই তাদের জনগণের কাছে কোনও জবাবদিহিতা নেই। আর জবাবদিহিতা নেই বলে স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষাব্যবস্থার এই নাজুক দশা।’
খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয় তিনি বলেন, ‘দেশনেত্রীর মুক্তি আজ একটি জাতীয় দাবি, গণদাবি। এর সাথে রাজনীতির কোনও প্রশ্ন নেই। মানবিক কারণে বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেয়া একটি জরুরি বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
বুধবার রাতে প্রকাশিত হিউম্যান রাইটসের ওপর মার্কিন এক প্রতিবেদনের উদ্ধৃতি দিয়ে ফখরুল বলেন, ‘সেখানে বেগম খালেদা জিয়ার বিষয়টা অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে দেখা হয়েছে। বলা হয়েছে, বেগম জিয়ার বিরুদ্ধে জুডিশিয়াল যে মামলা হয়েছে তা ত্রুটিহীন নয় এবং তাঁর মুক্তি রাজনৈতিক কারণে বিলম্বিত হচ্ছে।’
এসময় বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদসহ দলটির নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।