তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, বৈশ্বিক এই দুর্যোগের সময় কোনো ধরণের চাকুরিচ্যুতি অনভিপ্রেত ও দুঃখজনক।
সোমবার দুপুরে রাজধানীতে সচিবালয়ে তথ্য মন্ত্রণালয় সভাকক্ষে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) নবনির্বাচিত পরিষদের সাথে বৈঠকে সম্প্রতি এসএ টিভি থেকে ২৭ জন ও আগামী নিউজ থেকে ৭ জন গণমাধ্যমকর্মীকে চাকুরিচ্যুতির প্রতিবাদ ও তাদের পুণর্বহালের জন্য ডিইউজে’র পক্ষে সভাপতি কুদ্দুস আফ্রাদ ও সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলম খান তপু উত্থাপিত দাবি’র প্রেক্ষিতে তথ্যমন্ত্রী একথা বলেন। সেইসাথে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে সরকারের পাশাপাশি সাংবাদিক সমাজকে একসাথে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘এখন বৈশ্বিক দুর্যোগ। এই দুর্যোগের মধ্যে সবাই অত্যন্ত উৎকণ্ঠিত। এই সময় কারো উৎকণ্ঠা বাড়ানো সমীচীন নয়। এই সময় কোনো ধরণের চাকুরিচ্যুতি অনভিপ্রেত, দুঃখজনক।এই সময়ে গণমাধ্যম সংস্থার মালিক পক্ষের কোন কারণে যদি অসুবিধাও হয়, তাহলেও চাকুরিচ্যুতি না করার জন্য আমি অনুরোধ জানাই। আমার কাছে ব্যক্তিগতভাবে এই সময় কাউকে চাকুরিচ্যুত করা অনভিপ্রেত ও দুঃখজনক।’
সবারই আইনী সুরক্ষা প্রয়োজন উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী এসময় বলেন, ‘সম্প্রচার আইন ও গণমাধ্যমকর্মী আইন -এ দু’টি আইন হলে সমস্ত টিভিসহ সমস্ত গণমাধ্যমকর্মীকে আইনী সুরক্ষা দেয়া সম্ভবপর হবে।গণমাধ্যমকর্মী আইন মন্ত্রিসভা হয়ে সংসদের আগামী অধিবেশনেই নিয়ে যাওয়ার জন্য আমরা চেষ্টা করছি। সেটি যদি পাস হয় তাহলে শুধু ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া নয়, অনলাইন মিডিয়ার সাংবাদিকদেরও আইনি সুরক্ষা দেয়া সম্ভব। এর পাশাপাশি সম্প্রচার আইনের খসড়া নিয়ে এখন আইন মন্ত্রণালয় কাজ করেছে।’
‘এখন বাদানুবাদ বা একে অপরকে দোষারোপ করার সংস্কৃতি বাদ দিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে এই করোনা ভাইরাসের বৈশ্বিক দুর্যোগ মোকাবিলা করা প্রয়োজন বলে আমি মনেকরি’ উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার নানাবিধ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।জনগণ অনেক সচেতন হয়েছে, তবু গ্রামে-গঞ্জে সচেতনতার কিছুটা অভাব রয়েছে। সবাই যাতে আরো সচেতন হয়, সেজন্য আমাদের ও সাংবাদিক সমাজকে একসাথে কাজ করতে হবে।’
ডিইউজে’র এবারের তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নির্বাচিত নতুন কমিটিসহ পুরো সাংবাদিক সমাজকে অভিনন্দন ও করোনা ভাইরাস নিয়ে অত্যন্ত সজাগ থাকার জন্য গণমাধ্যমকর্মীদের ধন্যবাদ জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘জাতি ও সমাজকে সঠিকখাতে প্রবাহিত করার ক্ষেত্রে সাংবাদিকদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আপনারা ইতোমধ্যেই অনেক উদ্যোগী ভূমিকা নিয়েছেন।আমরা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সাথে আলাপ করে আমাদের মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সাংবাদিক ইউনিয়নের সাথে যোগাযোগ করে সাংবাদিকদের সুরক্ষার জন্য পদক্ষেপ নেবো।’
ডিইউজে উত্থাপিত সাংবাদিকদের জন্য স্বাস্থ্যবীমা দাবিকে সর্বেোতভাবে সমর্থন জানান মন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘এটি করা প্রয়োজন। আমি এটি ইতিপূর্বে আমি সাংবাদিক ইউনিয়নগুলোকে বলেছিলাম, গ্রুপ ইনস্যুরেন্স করলে ভালো হয়। গ্রুপ ইনস্যুরেন্স করলে মিডিয়া হাউজের জন্যই ভালো। কারণ তখন সেখানে একজনকর্মী অসুস্থ হলে কিম্বা কোনো দুর্ঘটনা বা অন্য কোন কারণে অসুবিধা হলে ইনস্যুরেন্সের মাধ্যমে তাদেরকে সহায়তা দেয়া সম্ভবপর হয়। এক্ষেত্রে সাংবাদিক ইউনিয়নগুলো যোগ দিতে পারে। সংগঠনগুলো উদ্যোগ নিতে পারে সদস্যের জন্য গ্রুপ ইনস্যুরেন্স করা। এটি সবার জন্য কল্যাণকর হয়।
ওয়েজবোর্ড সংস্কার দাবি প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, ‘নবম ওয়েজবোর্ড নিয়ে অনেক কথাবার্তা হয়েছে। যেহেতু এটি একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে হয়েছে, চাইলেই আমার পক্ষে এককভাবে কিছু করা করা সম্ভবপর না।আপনাদের বিষয়গুলো আমি জানি। তবে, যে ওয়েজবোর্ড ঘোষণা হয়েছে, সেটি বাস্তবায়ন করা অত্যন্ত প্রয়োজন। সেই লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় মনিটরিং কমিটি আমরা করে দিয়েছি। সেখানে সাংবাদিক ইউনিয়নের প্রতিনিধিরিাও থাকবেন। আমি আশা করবো, সংবাদপত্রগুলো নবম ওয়েজবোর্ড বাস্তবায়ন করবে।’
করোনা ভাইরাস মোকাবিলার এসময়ে আমাদেরকে সংবাদ সম্মেলন ও গণমাধ্যম সম্পর্কিত সভা অবশ্যই স্বল্প পরিসরেই করতে হবে এবং প্রয়োজনে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে করার কথা আমি ইতিপূর্বে বলেছি ও সে মোতাবেক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে, জানান তথ্যমন্ত্রী।
বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কালাম আজাদ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সহ-সভাপতি এম. এ কুদ্দুস, বার্তা সম্পাদক খায়রুল আলম, সাংগঠনিক সম্পাদক জিহাদুর রহমান জিহাদ, দপ্তর সম্পাদক জান্নাতুল ফেরদৌস চৌধুরী, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক দুলাল খান, জনকল্যাণ সম্পাদক সোহেলী চৌধুরী, প্রচার সম্পাদক আসাদুজ্জামান, নির্বাহী পরিষদ সদস্য রাজু হামিদ প্রমুখ বৈঠকে অংশ নেন। ডিইউজে নেতৃবৃন্দ তাদের দাবিসম্বলিত একটি পত্র এসময় তথ্যমন্ত্রীর কাছে হস্তান্তর করে।