প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমাদের খাদ্যের কোনো অভাব হবে না। তাছাড়া এখন ধান উঠছে। ধান কাটাও শুরু হয়ে গেছে। আগামীতেও ফসল উঠবে। সেই সঙ্গে তরিতরকারি ফলমূল যে যা পারেন উৎপাদন করবেন।
আজ সোমবার সকালে গণভবন থেকে সর্বশেষ করোনাভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ে ঢাকা এবং ময়মনসিংহ বিভাগের আটটি জেলার জনপ্রতিনিধি ও পদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে মতবিনিময়কালে তিনি একথা বলেন।
তিনি বলেন, এই সংকটে দেশে যেন খাদ্যর সমস্যা না হয় সেজন্য সব জমিতে ফসল ফলাতে হবে। দেশের এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদি না থাকে সেদিকে সকলে দৃষ্টি দেবেন। আমরা ইতিমধ্যে ৯৫ হাজার ৬১৯ কোটি টাকার প্রণোদনা ঘোষণা করেছি, যা জিডিপির ৩ দশমিক ৩ শতাংশ। কৃষিখাতে আরও বেশি। মাত্র ৪ শতাংশ সুদে আমরা কৃষি ঋণ দিচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ধাপে ধাপে রপ্তানিমুখী খাত, বৃহৎ শিল্প, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প থেকে শুরু করে সব ধরনের ব্যবসায়ীর জন্য প্রণোদনা ঘোষণা করেছি। পরে কৃষি খাতের জন্য প্রণোদনা দিয়েছি। এই প্রণোদনা কেবল ধান চাষিদের জন্য নয়, মৎস্য-পোল্ট্রি-ডেইরি সব খাতকে প্রণোদনার আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে এবং কোনো খাত প্রণোদনা থেকে বাদ পড়বে না।
করোনা যুদ্ধ মোকাবেলায় সরকারের সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার অংশই এই প্যাকেজ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে, তা শুধু এই বছরের জন্য না। আগামী তিন বছর দেশের অর্থনীতির চাকা যাতে সচল থাকে সেটা মাথায় রেখেই এই প্রণোদনা। এটা অব্যাহত রাখা হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, সামাজিক নিরাপত্তাবলয়ের কর্মসূচির আওতায় পরিচালিত ৫০ লাখ সুবিধাভোগীর সঙ্গে রেশন কার্ডের মাধ্যমে আরো ৫০ লাখ যোগ করে সুবিধাভোগীর সংখ্যা এক কোটিতে উন্নীত করা এবং এর মাধ্যমে প্রায় ৫ কোটি লোককে সহযোগিতা প্রদানের সরকারের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তটি বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। তারা ১০ টাকা কেজি দরে ওএমএস’র চাল ক্রয়ের সুযোগ পাবেন।
তিনি নতুন ৫০ লাখ লোকের তালিকায় দলমত নির্বিশেষে যাদের প্রয়োজন সেরকম কেউ যেন বাদ না পড়ে এবং যারা হাত পাততে পারেন না তেমন কেউ যেন খাদ্য সাহায্য বঞ্চিত না হন, তা নিশ্চিত করতে প্রশাসনকে নির্দেশ দেন।
শেখ হাসিনা বলেন, আরেকটু সচেতন হলেই বাংলাদেশে করোনা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে। আপনারা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন এবং অযথা ঘোরাঘুরি করে নিজেকে এবং অন্যের জীবনকে ঝুঁকির মুখে ফেলবেন না।
সারা দেশে করোনা চিকিৎসায় কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করার জন্য ৫০৭ প্রতিষ্ঠান প্রস্তুত রয়েছে বলেও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।
ভিডিও কনফারেন্সে জেলা প্রশাসনসহ মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি, সিভিল সার্জনসহ চিকিৎসক, স্থানীয় মসজিদের ইমাম, আইন-শৃংখলা রক্ষাকারি বাহিনী ও সশস্ত্র বাহিনীর প্রতিনিধি এবং স্থানীয় সাংবাদিকসহ ঢাকার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং আইইডিসিআর সংযুক্ত ছিল।
জেলাগুলো হচ্ছে ঢাকা বিভাগের মানিকগঞ্জ, গাজীপুর, টাঙ্গাইল ও কিশোরগঞ্জ এবং ময়মনসিংহ বিভাগের জামালপুর, শেরপুর, নেত্রকোনা ও ময়মনসিংহ সদর।
এর আগে শেখ হাসিনা করোনাভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ে ৪ দফা পৃথক ভিডিও কনফারেন্সে ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, সিলেট এবং বরিশাল বিভাগের ৪৩টি জেলার সঙ্গে মতবিনিময় করেন।
মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস ভিডিও কনফারেন্সটি সঞ্চালনা করেন। মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম, পিএমও সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া এবং প্রেস সচিব ইহসানুল করিম গণভবন প্রান্তে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন।