পৃথিবী হঠাৎ করে বদলে গেলেও বাংলাদেশ সরকার বদলায়নি বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী আহমেদ। বুধবার ত্রাণ কার্যক্রমে অংশ নিয়ে তিনি এ মন্তব্য করেন।
বিএনপির সহ-দফতর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপুর পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, আজ নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার দাউদপুর ইউনিয়নে স্থানীয় বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের উদ্যোগে থানা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক চেয়ারম্যান শরীফ আহমেদ টুটুলের ব্যবস্থাপনায় ইউনিয়নের অসহায়, কর্মহীন মানুষদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করা হয়। সকাল ৮টায় এই ত্রাণ বিতরণ অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।
ত্রাণ বিতরণ শেষে উপস্থিত নেতাকর্মী ও এলাকাবাসীর উদ্দেশ্যে রিজভী বলেন, ভাইরাস নামক অদৃশ্য শক্রুর হাত থেকে বিশ্বের অধিকাংশ গ্রাম আর নগর প্রাণহীন মৃত্যুপুরিতে পরিণত হয়েছে। তামাম দুনিয়ায় শিল্প-কলকারখানার চাকা বন্ধ হয়ে গেছে। শেয়ার বাজারে ধস নেমেছে, অর্থাৎ অর্থনীতির চরম বিপর্যস্ত অবস্থা বিরাজ করছে। সমুদ্রগামী জাহাজ, বিমান, সড়ক পরিবহন একরকম বন্ধ হয়ে গেছে। খাদ্যের সংকটে চারদিকে হাহাকার শুরু হয়েছে। রাস্তাঘাট শূন্য, স্কুল-কলেজ বন্ধ অর্থাৎ পৃথিবী যেন হঠাৎ করেই বদলে গেছে। কিন্তু বদলায়নি বাংলাদেশ সরকার।
তিনি বলেন, তারা নিপীড়ন-নির্যাতন বিরোধীদল দমন ও সরকারের সমালোচনাকে উচ্ছেদ করতে স্বভাবসুলভ স্বৈরাচারী নীতিরই জয়জয়কার অব্যাহত রেখেছে। আর সেজন্যই আমরা দেখতে পারছি, নিরন্ন, ক্ষুধার্ত মানুষের অন্ন কেড়ে নিয়ে চাল, ডাল, তেল, আলু চলে যাচ্ছে ক্ষমতাসীন দলের ঘরের ভেতর। অনাহারি মানুষকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়ার জন্য বিএনপি ও এর অংঙ্গ সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীদের দেশজুড়ে ত্রাণ কার্যক্রমে বাধা দিয়ে তাদের মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে গ্রেফতার করা হচ্ছে। অথচ সরকারি দলের নেতাকর্মীদের সরকারি ত্রাণ নিয়ে তেলেসমাতির মহাধুমধাম মহাসমারোহে চলছে।
রিজভী বলেন, সাধারণ ক্ষুধার্ত মানুষ ত্রাণের দাবিতে সড়ক অবরোধ করছে, ত্রাণের দাবিতে বিক্ষোভ করছে। অথচ ইসলামপুরে, সিরাজগঞ্জে, লালমনিরহাট, হাতিবান্ধা, বকশিগঞ্জ, জামালপুর, দিনাজপুরসহ দেশের নানা স্থান থেকে হাজার হাজার বস্তা চাল, আটা, ভোজ্য তেল প্রায় প্রতিদিনই উদ্ধার হচ্ছে। আর এই হাজার হাজার বস্তা লুটপাটে শাসকদলের লোকেরাই জড়িত। বিনাভোটে ক্ষমতায় থাকা, নানা ধরনের কালো আইন প্রণয়ন, বিরোধী দলকে নিশ্চিহৃ করার এজেন্ডা বাস্তবায়ন এবং সরকারের সমালোচকদের মুখ বন্ধ করতে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করার কারণেই আত্মসাৎ, চুরি ও লুটের সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা হয়েছে। যার ফলে বাংলাদেশে করোনার পদধ্বনী শোনার পরেও কোনো প্রস্তুতি গ্রহণ না করে নির্বিকার থেকেছে ক্ষমতাসীনরা।
তিনি বলেন, এ জন্যই এখন করোনাভাইরাসের তীব্র আঘাত বাংলাদেশকে সইতে হচ্ছে। রাজধানীসহ জেলাগুলোর অধিকাংশ হাসপাতালে করোনা রোগীদের জন্য একটি শয্যাও প্রস্তুত হয়নি। করোনা মোকাবিলায় মেডিকেল সরঞ্জামাদি ক্রয় নিয়েও চলছে নানা কেলেঙ্কারি- যখন দেশব্যাপী মেডিকেল সরঞ্জামাদির প্রচণ্ড ঘাটতি বিদ্যমান।
রিজভী আরও বলেন, যে ডাক্তার, স্বাস্থ্যকর্মী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোকেরা করোনা মোকাবিলায় ফ্রন্টলাইনে লড়াই করছেন তাদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা না থাকায় ইতোমধ্যে করও মৃত্যু হয়েছে এবং তাদের অনেকেই করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন।
সরকারের উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অবহেলার কারণেই বাংলাদেশে এখন করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে।