প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের চিকিৎসায় ভিআইপিদের জন্য আলাদা হাসপাতাল তৈরি হচ্ছে- এমন খবর অস্বীকার করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। গতকাল বুধবার রাতে একটি সংবাদমাধ্যমকে তিনি এ কথা জানান।
তার আগে বুধবার করোনা চিকিৎসায় ভিআইপিদের জন্য ঢাকার শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতাল প্রস্তুত হচ্ছে- বলে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়। পরে এ খবরটি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শুরু হয় ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনা।
এ বিষয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘সবার চিকিৎসা সব হাসপাতালে হবে। এখানে ধনী-গরিব, সাধারণ-ভিআইপি বলে কিছু নেই।’
তিনি বলেন, ‘আমরা যেসব হাসপাতালে কোভিড-১৯ চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছি সবার চিকিৎসা সেখানেই হবে। মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে এটা আমি দায়িত্ব নিয়ে বলছি। আমরা কোনো মন্ত্রী, এমপি বা কোনো শিল্পপতির জন্য আলাদা হাসপাতাল প্রস্তুত করার কথা বলিনি। এরপরও বিষয়টি নিয়ে যদি কেউ কিছু বলে থাকেন তাহলে তিনি তার নিজ দায়িত্বে বলেছেন। এটা মন্ত্রণালয়ের অবস্থান নয়।’
বাংলাদেশে অবস্থানকারী বিদেশিদের জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আলাদা একটি হাসপাতাল ব্যবস্থা করার জন্য অনুরোধ করেছিল বলে জানিয়েছেন জাহিদ মালেক। তবে এখন অন্যান্য রোগীদের পাশাপাশি বিদেশিরা শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে চিকিৎসা নেবেন বলে জানান তিনি।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আমাদের কাছে অনুরোধ করেছিল, বিদেশি কেউ আক্রান্ত হলে কোথায় চিকিৎসা করাবে, তাদের জন্য আলাদা একটা হাসপাতালে ব্যবস্থা করা যায় কি না। তাদের একটা ডিমান্ড ছিল। এজন্য আমরা প্রাথমিকভাবে শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের কথা বলেছিলাম। হাসপাতালটি নতুন, পরিচ্ছন্ন আছে। এখনো সেভাবে ব্যবহার করা হয়নি। এজন্য তাদের দেখানো হয়েছে। সেখানে সব কিছু ঠিকঠাক করে অন্যান্য রোগীর পাশাপাশি বিদেশিরাও চিকিৎসা নেবেন।’
গতকাল সংবাদ প্রকাশিত হয়, করোনাভাইরাস যদি বাংলাদেশের কোনো ভিআইপি, বিত্তশালী এবং দেশটিতে অবস্থানরত বিদেশি নাগরিকেরা আক্রান্ত হন, তাহলে তাদের জন্য আলাদা হাসপাতাল প্রস্তুত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এজন্য ঢাকার একটি হাসপাতাল নির্দিষ্ট করা হয়েছে এবং বেসরকারি কয়েকটি বড় হাসপাতালের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এ নিয়ে কথাবার্তা চলছে বলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে। এ খবর প্রকাশের পরই শুরু হয় সমালোচনা।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ‘ভিআইপিদের’ আলাদা হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা দেওয়ার বিষয়ে নিজেদের সিদ্ধান্তের পক্ষে বিবিসি বাংলাকে যুক্তি দিয়েছেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব হাবিবুর রহমান।
তিনি বলেন, ‘ভালো সচ্ছল পেশেন্ট আছে না? কথা উঠেছিল তারা কোথায় ভর্তি হতে পারে? সরকারিভাবে আমরা যা করছি, সেগুলো তো আপামর জনগণের জন্য। যে শত শত মানুষ অসুস্থ হচ্ছে, তাদের জন্যে তো একটা ব্যবস্থা আছেই।’
হাবিবুর রহমান বলেন, ‘ধরুন একজন প্রখ্যাত শিল্পপতি, উনি হয়তো করোনার চিকিৎসায় সরকারি যে ব্যবস্থাপনাগুলো আছে, এগুলোতো সাধারণ মানের, সেখানে যেতে উনি ইতস্তত করলেন। তো উনি অ্যাপোলো (বর্তমানে এভারকেয়ার হাসপাতাল), ইউনাইটেড বা স্কয়ারে গেলে যেন চিকিৎসা পায়। তারা টাকা দিয়েই চিকিৎসা করাবেন। এসব হাসপাতালের কর্তৃপক্ষকে আগে রাজি হতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘এখন এভারকেয়ার (সাবেক অ্যাপোলো হাসপাতাল), ইউনাইটেড বা স্কয়ারের সাথে যাতে একটা বোঝাপড়ায় আসা যায়, তা নিয়ে সরকারের কথাবার্তা চলছে। সরকার আলাপ করছে যাতে পুরো হাসপাতাল অথবা হাসপাতালের একটা ইউনিট করোনাভাইরাস চিকিৎসায় ভিআইপিদের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়।’
ভিআইপিদের মধ্যে কারা পড়বেন? এই তালিকায় মন্ত্রী, রাজনীতিবিদ, সরকারি কর্মকর্তারাও কি আছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে হাবিবুর রহমান বলেন, ‘প্রথমে শুধু বিদেশি কূটনীতিকদের জন্য এ ধরনের একটি ব্যবস্থার কথা ভাবা হয়েছিল। আমাদের কাছে বারবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে অনুরোধ এসেছিল যদি কোনো কূটনীতিক বাংলাদেশে অবস্থানরত অবস্থায় অসুস্থ হয়ে পড়েন, তাদেরকে কোথায় নেওয়া যায়? এজন্যে গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালটা (শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার ইন্সটিটিউট ও হাসপাতাল) নির্ধারণ করা আছে। পরে আমরা চিন্তা করেছি এটাও হতে পারে যে সরকারি কর্মকর্তা, চিকিৎসক আক্রান্ত হল, তাদেরও ওখানে নেওয়া যেতে পারে।’
সরকারের মন্ত্রী বা রাজনীতিবিদরাও কি এখানে যাবেন? এমন প্রশ্নের সরাসরি কোনো উত্তর দেননি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এই কর্মকর্তা।