কোভিড-১৯ থেকে যেভাবে সেরে উঠলেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস সংক্রমিত রোগ কোভিড-১৯ থেকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন অনেকেই। কেউ কেউ আবার জানিয়েছেন নিজেদের অভিজ্ঞতার কথা। এবার করোনাভাইরাস বিষয়ে নিজের অভিজ্ঞতার কথা শেয়ার করেছেন নরসিংদী সদর উপজেলার পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সবুজ হাওলাদার। সম্প্রতি এই ভাইরাস থেকে সুস্থ হয়েছেন তিনি।

সবুজ হাওলাদার ফেসবুকে তার নিজের অ্যাকাউন্টে লিখেছেন, আমি নরসিংদী সদর উপজেলায় উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত আছি। উপজেলার করোনা-১৯ প্রতিরোধ কমিটি এবং করোনা কুইক রেসপন্স কমিটির একজন সদস্যও আমি। এ ছাড়া উপজেলার ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত ছিলাম।

গত ১২ এপ্রিল আমরা কয়েকজন অফিসার করোনা টেস্টের জন্য স্যাম্পল সিভিল সার্জন অফিসে জমা দেই। আমরা যেহেতু উপজেলার বিভিন্ন কার্যক্রমে জড়িত ছিলাম, সেহেতু ইচ্ছা করেই টেস্টের জন্য স্যাম্পল দিয়েছিলাম।

পরদিন আমার টেস্টের রেজাল্ট পজিটিভ আসে। প্রথম শুনে আমি চমকে উঠলাম, কেননা আমার শরীরে করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) কোনো লক্ষণ ছিল না। আমি ডাক্তারের সঙ্গে আলাপ করে বললাম আমি হোম কোয়ারেন্টিনে থাকব। কিন্তু কর্তৃপক্ষ বলল আমাকে হাসপাতালে আইসোলেশনে থাকতে হবে।

আইসোলেশন ওয়ার্ডে চলে গেলাম। সেখানে আরও ১২ জন পজিটিভ রোগী ছিল। ওয়ার্ড থেকে দুই দিন পর আমি ও উপজেলা প্রকৌশলী (করোনা পজিটিভ) আলাদা একটি রুমে স্থানান্তরিত হই। করোনা পজিটিভ আসার পর আমার মধ্যে কোনো ভয়ের উদ্রেক হয়নি। নিয়ম মেনে চলার চেষ্টা করেছি এবং ৭ম দিনে ২য় টেস্টে নেগেটিভ আসে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ৩য় টেস্ট করানো হয় এবং নেগেটিভ আসে।

যেসব নিয়ম কানুন মেনে আমার করোনা নেগেটিভ হয়েছে-

– প্রতি এক ঘণ্টা পর পর গরম পানি পান করেছি।

– লাল চা (লবঙ্গ, আদা, দারুচিনি, গোলমরিচ) পান করছি দিনে চার থেকে পাঁচ বার।

– গরম পানির স্টিম (ভাপ) দিনে তিনবার নিয়েছি।

– লেবু চা খেয়েছি।

– কুসুম গরম পানি দিয়ে গলা খাঁকারি করেছি।

– যথাসম্ভব কমলা, মাল্টা, আপেল প্রভৃতি খেয়েছি।

– প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার যেমন ডাল প্রভৃতি খেয়েছি।

– প্রতিদিন সকালে ও বিকেলে কালোজিরা ও মধু খেয়েছি।

– সুষম খাবার খেয়েছি যেমন সবজি,মাছ মাংস প্রভৃতি।

– প্রতিদিন দুপুরে এক গ্লাস দুধ খেয়েছি।

আমার মনে হয় বাস্তব পরিস্থিতি মানুষের জানার প্রয়োজন রয়েছে। করোনা রোগীর সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা হলো গরম পানি পান, ফুটন্ত গরম পানির ভাপ নেওয়া ও চা পান করা।

আমি প্রথম দিন থেকেই প্রতিটি নিয়ম মেনে চলেছি। আমার মনে হয়েছে করোনা নিয়ে আমাদের আতঙ্ক, ভয় প্রভৃতি বেশি। করোনা নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। মানসিক শক্তি বজায় রাখলে করোনা কাউকেই দুর্বল করতে পারবে না। করোনা আমাদের জয় করতে হবে এবং এ মানসিকতা থাকলে এ যুদ্ধে আমরা জিতবই।