দেশজুড়ে চলমান মহামারি করোনা পরিস্থিতিতে ‘সরকারের ব্যর্থতায়’ প্রতিদিনই লাশের সারি দীর্ঘ হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী আহমেদ।
রবিবার (২৬ এপ্রিল) সকালে আড়াইহাজারে ত্রাণ বিতরণের সময় তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, ‘বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে দলের নেতা-কর্মীরা অসহায় দুস্থ ও কর্মহীন মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। সরকারের অনেক নিপীড়ন নির্যাতনের পরও নিজেদের পকেট টাকায় সারাদেশের মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে বিএনপির নেতাকর্মীরা। বিএনপির নেতাকর্মীরা ১২ লক্ষ মানুষকে এখন পর্যন্ত ত্রাণ দিতে পেরেছে। আজকে আড়াইহাজারে মাহমুদুর রহমান সুমন নগদ অর্থ ও খাদ্য দিচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘জনগণের টাকায় কেনা ত্রাণের চাল ডাল তেল পাওয়া যাচ্ছে সরকারি দলের লোক, আওয়ামী লীগের লোক, দলীয় চেয়ারম্যান-মেম্বারদের ঘরে, খড়ের পালা থেকে, খাটের নিচে। এই ধরনের রাজনৈতিক দল দিয়ে প্রধানমন্ত্রী করোনা মহামারিতে দুর্ভিক্ষ মোকাবিলা করতে পারবেন না। হাজার হাজার বস্তা চাল ধরা পড়ছে চেয়ারম্যান-মেম্বার অথবা আওয়ামী লীগ নেতার বাড়িতে। গোটা দেশকে দুর্ভিক্ষের মধ্যে ফেলে দিয়ে দেশ পরিচালনা করবেন, মানুষ সেটা মেনে নেবে না।’
ত্রাণ বিতরণের সময় রিজভী বলেন, ‘চীনে যখন করোনা ভাইরাস শুরু হল তখন বাংলাদেশ সরকার কোনও পদক্ষেপ নিলেন না। মার্চ মাসে করোনা শুরু হয়েছে সরকার তা জানায় নাই। অন্য কাজে ব্যস্ত ছিল। দেশের প্রতি জনগণের প্রতি এই সরকারের কতটুকু দায়িত্ব আছে তা আপনারাই বুঝতে পারছেন।’
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘আজকের চিকিৎসকেরা মারা যাচ্ছে। হাসপাতালে চিকিৎসা নেই। করোনার বিরুদ্ধে যে প্রস্তুতি নেয়ার দরকার ছিল তা নেয়নি। গতকাল বলছে সিটিতে গার্মেন্টস খুলে দেবে। সকল শ্রমিক আসলে কি ভয়াবহ অবস্থা হবে তা অনুমান করা যায়। একজনের হলে সকলে আক্রান্ত হবে। ব্যাপক বিস্তার লাভ করতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘চীন-যুক্তরাষ্ট্র স্পেন ইতালির মতো দেশগুলোতে হাজার হাজার লোক মারা যাচ্ছে। আর আমাদের দেশে হাসপাতালে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেই, প্রয়োজনীয় ওষুধই নেই। চিকিৎসকরা নার্সরা ভয় পাচ্ছেন। যারা চিকিৎসা দেবে তারা যদি ঝুঁকির মধ্যে থাকে করোনা আক্রান্ত হয় তাদের জীবন চলে যায় তাহলে কে যাবে চিকিৎসা সেবা দিতে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিশ্বে যে পরিস্থিতি দেখছি, আল্লাহ না করুন- ওইসব দেশের মত যেন না হয়। উন্নত দেশগুলো লাশের সারি ঠেকাতে পারছে না, সে তুলনায় আমাদের তো কিছুই নাই। সরকারও কোনও দায়িত্ব পালন করতে চায় না। বুঝেও না। মন্ত্রীরা ঘরের মধ্য থেকে ভিডিও বার্তা দিচ্ছে আর বিএনপির নেতাকর্মীরা ঝুঁকির মধ্যেও অসহায় মানুষদের পাশে ছুটে যাচ্ছে, সহযোগিতা করছে।’
সরকারের সমালোচনা করে রিজভী বলেন, ‘প্রতিদিন আমরা ৪০০ থেকে ৫০০ লোকের আক্রান্ত হওয়ার খবর পাচ্ছি । মারা যাচ্ছে বহু লোক। যথাযথ পদক্ষেপ নিলে এত আক্রান্ত হতো না। ভিয়েতনাম ও ভুটান পদক্ষেপ নেয়ায় সে দেশে আক্রান্ত হয়নি। কিন্তু আমাদের দেশে সরকার পদক্ষেপ নেয়নি বরং সরকারি দলের লোকেরা আত্মসাৎ করছে ত্রাণের মালামাল। আর তাতে সহযোগিতা করছে সরকার। আবার যারা চুরি করছে তাদেরকে দিয়ে ত্রাণ সহায়তার কথা বলছে। অর্থাৎ চোরকে দিয়ে ঘর পাহারা দেয়ার কথা বলছে সরকার। তাহলে এই সরকার দিয়ে দেশের সঙ্কট মোকাবেলা করা যাবে না। মহামারি মোকাবিলা করতে হলে সকলের ঐক্যবদ্ধ পদক্ষেপ নিতে হবে। তা না করে সরকার মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে। মানুষের জীবন নিয়ে খেলতে গিয়ে ভয়ঙ্কর ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে দেশ। লাশের সারি প্রতিদিনই দীর্ঘ হচ্ছে।’
রিজভী জানান, ‘বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া কয়েকদিন আগে মুক্তি পেয়েছেন। তাঁকে অন্যায় ভাবে কারাবন্দি করে রাখা হয়েছিল। তিনি জেল থেকে বেরিয়ে এসে নেতাকর্মীদের স্পষ্ট বলেছেন, যেন মানুষের পাশে সবাই একযোগে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দাঁড়ায়। করোনায় সাধারণ মানুষের যেন কষ্ট না হয়। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডন থেকে প্রতিনিয়ত খোঁজখবর নিচ্ছেন। তিনিও দলীয় নেতাকর্মীদের অসহায় গরিব দুস্থ ও কর্মহীন মানুষের পাশে দাঁড়াতে নির্দেশ দিয়েছেন।’
এদিন নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি মাহমুদুর রহমান সুমনের উদ্যোগে খাদ্য ও নগদ অর্থ বিতরণ করা হয়। এসময় জেলা ছাত্রদলের সভাপতি মশিউর রহমান রনিসহ বিএনপি, ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।