বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে দেশের এক-তৃতীয়াংশের বেশি মানুষকে সরকারি সহায়তার আওতায় আনা হয়েছে, বলেছেন তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ।
বৃহস্পতিবার (৭ মে) বিকেলে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে করোনা প্রতিরোধে করণীয় সম্পর্কে জনপ্রতিনিধি ও বিভিন্ন অংশীজনের সাথে জেলা প্রশাসন আয়োজিত সমন্বয় সভা শেষে সভাপতির ব্রিফিংয়ে তিনি এ তথ্য দেন।
মন্ত্রী বলেন, মানুষের জীবনরক্ষার পাশাপাশি সকারকে মানুষের জীবিকাকেও রক্ষা করতে হয়, সেকারণে জীবন ও জীবিকা দুটোই রক্ষায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, এক-তৃতীয়াংশের বেশি মানুষকে নানাভাবে সহায়তার আওতায় এনেছে। বৈশ্বিক এই দূর্যোগের সময় পৃথিবীর খুব বেশি দেশে এভাবে এক-তৃতীয়াংশ মানুষকে সরকারি সহায়তার আওতায় আনা হয়নি, জানান তিনি।
বিশ্বে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়ার পর থেকেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে নানাবিধ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন, সেকারণেই পৃথিবীর অনেক দেশের তুলনায় আমাদের দেশের পরিস্থিতি এখনো অনেকটা ভালো উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘তাই বলে সরকার বসে নেই। কারণ আপনারা দেখতে পাচ্ছেন সংক্রমণ বাড়ছে এবং যেকোন পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। সেজন্য আমরা সবার সহযোগিতা নিয়ে কাজ করছি।’
স্পেন, ইতালি, সিঙ্গাপুরসহ পৃথিবীর অনেক দেশে যেখানে এখনো প্রতিদিন আড়াই থেকে তিন’শ জন মানুষ মৃত্যুবরণ করছে, সেখানেও লকডাউন শিথিল করা হয়েছে উল্লেখ করে ড. হাছান বলেন, ‘জীবনরক্ষার জন্য মানুষের জীবিকাকেও রক্ষা করতে হবে। কিন্তু আমাদেরকে অবশ্যই অত্যন্ত সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। এসব কারণে সরকারের পক্ষ থেকে দোকানপাট সকাল ১০টা থেকে ৪টা পর্যন্ত সীমিত আকারে আগামী ১০ মে থেকে খোলার সিদ্ধান্ত দেয়া হয়েছে এবং সেখানে স্বাস্থ্যসুরক্ষার নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে।’
‘মার্কেট ও মসজিদ খুলে দেয়ায় সংক্রমণ বাড়বে কিনা’ সাংবাদিকের এ প্রশ্নে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘সবাই যদি সম্মিলিতভাবে মানুষকে সচেতন করতে পারি, তাহলে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা অনেক সহজ হবে। এজন্য গণমাধ্যমকর্মীরা শুরু থেকেই প্রচারণা চালাচ্ছেন, যাতে কেউ অপ্রয়োজনে বাজারে না যান। মানুষ যাতে সমস্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে মার্কেট ও মসজিদে যান।’
করোনা সঙ্কটে চট্টগ্রাম জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোস্তফা কামাল উদ্দিনের সঞ্চালনায় সমন্বয় সভায় আরো বক্তব্য রাখেন ওয়াসিকা আয়োশা খানম এমপি, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন, বিভাগীয় কমিশনার এবিএম আজাদ, চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক, জেলা প্রশাসক মো. ইলিয়াস হোসেন, বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক হাসান শাহরিয়ার কবির ও সিভিল সার্জন সেখ ফজলে রাব্বি।
করোনা মোকাবিলায় চট্টগ্রাম
ব্রিফিংয়ে করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় চট্টগ্রামের বিভিন্নমুখী ব্যবস্থাপনা নিয়েও সাংবাদিকদের বিশদভাবে জানান তথ্যমন্ত্রী ও চট্টগ্রাম ৭ আসনের সংসদ সদস্য ড. হাছান মাহমুদ।
চট্টগ্রামের হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতাল কোন ব্যবস্থাপনায় পরিচালনা করা হবে সেটি নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতা দূর করে সরকারি ব্যস্থাপনাতেই সেটি চালু করার সভার সিদ্ধান্ত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে জানানো এবং আনুসাঙ্গিক কাজ যতদ্রুত সম্ভব শেষ করার ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান মন্ত্রী।
‘করোনাপরীক্ষার রিপোর্ট পেতে দীর্ঘসময় লাগা ও আক্রান্তদের ঘোরাঘুরি’ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ড. হাছান বলেন, ‘স্বাস্থ্যবিভাগ থেকে আজ বলা হয়েছে, আগে টেস্টরিপোর্ট পেতে সাতদিন লাগতো, এখন চারদিনে হবে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়েও আরেকটি করোনাপরীক্ষার ল্যাব চালুর চেষ্টা করা হচ্ছে। চট্টগ্রামে অন্তত প্রতিদিন ৫’শ নমুনা পরীক্ষা যাতে করা যায়, সেই চেষ্টা চলছে।’
আর যারা নমুনা পরীক্ষার জন্য দিয়েছে, তারা যাতে অন্যের সাথে না মেশেন, সেই অনুরোধ জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, তিনি তো নিজেকে সন্দেহ করেই নমুনা পরীক্ষায় দিয়েছেন, তখন তার উচিত অন্য কারো সাথে মেলামেশা না করা।
তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রামের মার্কেটগুলোর প্রবেশ পথে ডিজইনফেকশন চেম্বার স্থাপন করতে হবে। মাস্ক ও স্যানিটাইজার ব্যবহারের পাশাপাশি যদি মার্কেটে ঢোকার সময় ডিজইনফেকশন চেম্বারের মাধ্যমে প্রবেশ করেন তাহলে ডিজইনফেক্টেড হয়ে যাবে। প্রতিটি শপিং মল ও বিপণী বিতানের সামনে ‘স্বাস্থ্য বিষয়ক সতর্কবাণী না মানলে মৃত্যুর ঝুঁকি আছে’ এমন ব্যানার সাঁটাতে হবে। প্রবেশপথে হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা রাখতে হবে।’
ক্রেতা-বিক্রেতা সবাইকে অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করতে হবে, সামাজিক ও শারিরীক দুরত্ব বজায় রাখতে হবে, বলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।
ভবিষ্যতের প্রস্তুতি সম্পর্কে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘করোনা রোগী সনাক্ত হবার কারণে বিভিন্ন জায়গায় লকডাউন করতে হচ্ছে। যেখানে লকডাউন হয় সেখানে দুইপাশে পুলিশ থাকতে হয়। কিন্তু আমাদের পুলিশ ফোর্স সীমিত। আক্রান্ত আরো যখন বাড়বে তখন আরো বেশি পুলিশের প্রয়োজন হবে। তখন পুলিশের যে অন্যান্য কাজ সেগুলো ব্যাহত হতে পারে। সেজন্য আজকের সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে যেখানে লকডাউন সেখানে প্রয়োজনে আরো বেশি সংখ্যক আনসার ও স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করা হবে।’