এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ অভিযান পরিদর্শনে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী ও মেয়র আতিক

ডেঙ্গু থেকে নগরবাসীকে সুরক্ষা দিতে চলমান ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) বিশেষ পরিচ্ছন্নতা অভিযান (চিরুনি অভিযান) পরিদর্শন করেন স্থানীয় সরকার, সমবায় ও পল্লী উন্নয়ন মন্ত্রী মোঃ তাজুল ইসলাম এবং মেয়র মোঃ আতিকুল ইসলাম। আজ সকাল সাড়ে ১০টায় রাজধানীর বারিধারায় তাঁরা চিরুনি অভিযান পরিদর্শনে আসেন।

এ সময় তাঁরা বারিধারায় ৯ নম্বর পার্ক রোডের একটি নির্মাণাধীন ভবনে বিপুল পরিমাণ এডিস মশার লার্ভার খোঁজ পান। পরে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে মন্ত্রী বলেন, “আমরা সকলে জানি এডিস মশা আবাসিক, অনাবাসিক ভবনে বংশবিস্তার করে। বিশেষ করে নির্মাণাধীন ভবন আমাদের জন্য হুমকিস্বরূপ। এজন্য আমরা সর্বসাধারণের কাছে বিভিন্নভাবে বিষয়টি অবহিত করেছি। কোনো ভবনে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে মর্মে ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। এটা খুব দুঃখজনক যে, বারবার সতর্ক করা সত্ত্বেও নির্মাণাধীন বাড়ির মালিকগণ সচেতন হচ্ছেন না। তাঁরা মানুষের জীবনকে হুমকির মুখে ঠেলে দিচ্ছেন। এজন্য আমি কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করার নির্দেশ দিচ্ছি”।

ডিএনসিসির মেয়র মোঃ আতিকুল ইসলাম বলেন, “এডিস মশার লার্ভা পাওয়ার কারণে আমরা ইতিমধ্যে অনেক ভবন মালিকদের আর্থিক জরিমানা করেছি, তবে এখন সময় এসেছে তাদেরকে সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করার”। মেয়র ঢাকাবাসীর প্রতি তিনদিন পরপর জমে থাকা পানি ফেলে দেয়ার আহবান জানান। তিনি বলেন যারা ভবন তৈরি করছেন তাঁরা অনেক টাকার মালিক। কিন্তু তাদের অবহেলার জন্য আমরা সবাই ঝুঁকিতে আছি। মেয়র শহরবাসীর প্রতি এডিস মশার প্রজননস্থল ধ্বংস করার আহবান জানিয়ে বলেন, এতে আপনি নিজে, আপনার পরিবার, সমাজ, শহর ও রাষ্ট্র বেঁচে থাকবে।

ডেঙ্গু থেকে নগরবাসীকে সুরক্ষা দিতে আজ সোমবার চিরুনি অভিযানের ৩য় দিনে মোট ১ হাজার ৩৪৯ টি বাড়ি, স্থাপনা, নির্মাণাধীন ভবন ইত্যাদি পরিদর্শন করা হয়। এসময় বিভিন্ন বাড়ি, প্রতিষ্ঠান, স্থাপনা, নির্মাণাধীন ভবন ও পরিত্যক্ত জায়গায় এডিসের লার্ভা পাওয়া যাওয়ায় ৭ টি মামলায় মোট ৭৬ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

অঞ্চল-১ (উত্তরা) এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা জুলকার নায়ন ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আনোয়রুল হালিমের নেতৃত্বে উত্তরা ৩ নম্বর সেক্টরে মোট ৭৪৯টি বাসাবাড়ি, নির্মাণাধীন ভবন ও প্রতিষ্ঠানে বেলা ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত অভিযান পরিচালিত হয়। এসময়ে প্রায় ৫৬৭ টি স্পটে এডিস মশার প্রজনন উপযোগী পরিবেশ পাওয়া যায়। এর মধ্যে ২৮ টি স্পটে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যাওয়ায় ৪টি মামলায় মোট ৯ হাজার টাকা জরিমানা করা হয় এবং এডিস মশার সকল প্রজননস্থলসমূহে কীটনাশক স্প্রে করা হয়।

অঞ্চল-২ (মিরপুর-২) এর ৬ নং ওয়ার্ডের মিরপুর সেকশন-৭ এলাকার ৮৩৫টি বাড়ি ও স্থাপনায় বেলা ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত চিরুনি অভিযান চালিয়ে ২টি বাড়িতে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যায়। এর মধ্যে একজনকে ৫ হাজার জরিমানা করা হয়, অন্যজনকে সতর্ক করা হয়। এছাড়া কয়েকটি বাড়িতে জমে থাকা পানি পাওয়ায় তাদেরকে সতর্ক করে দেয়া হয়।

অঞ্চল-৩ (মহাখালী) এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মীর নাহিদ আহসান এর নেতৃত্বে ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের বারিধারা এলাকায় ১৫৩টি বাড়ি, স্থাপনা ও নির্মাণাধীন ভবনে বেলা ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত চিরুনি অভিযান পরিচালিত হয়। এসময়ে ১৮টি প্রতিষ্ঠানকে এডিস মশার বংশবিস্তার রোধে সতর্ক করা হয়েছে এবং এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যাওয়ায় ২টি নির্মাণাধীন ভবনের মালিককে ২টি মামলায় মোট ৬০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

অঞ্চল-৪ (মিরপুর-১০) এর ১২ নম্বর ওয়ার্ডের পাইকপাড়া ও আহমেদ নগর এলাকায় ২১০টি নির্মাণাধীন ভবন ও স্থাপনায় চিরুনি অভিযান চালানো হয় । এসময় কয়েকটি বাড়িতে এডিস মশার প্রজনন উপযোগী পরিবেশ পাওয়া গেলে তাদেরকে সতর্ক করে সেসব স্থানে কীটনাশক স্প্রে করা হয়; তবে কোন জরিমানা করা হয়নি।

অঞ্চল-৫ (কারওয়ান বাজার) এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাসুদ হোসেনের নেতৃত্বে চিরুনি অভিযান পরিচালিত হয় মোহাম্মদপুরের ৩২ নং ওয়ার্ডের বাবর রোড থেকে হুমায়ুন রোড পর্যন্ত। এসময়ে ৭টি নির্মাণাধীন ভবনসহ মোট ২৩৭ টি বাড়ি ও স্থাপনা পরিদর্শন করে এডিস মশার প্রজননস্থল সমূহ ধ্বংসপূর্বক কীটনাশক প্রয়োগ করা হয়েছে। অর্ধ পরিত্যক্ত একটি ভবনে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যাওয়ায় ভবন মালিককে ১টি মামলায় ২ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, ১৬ মে থেকে চলমান চিরুনি অভিযান এবং গত ১০ মে থেকে শুরু হওয়া মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে আজ পর্যন্ত সর্বমোট ২ লক্ষ ৩৮ হাজার ৩ শত টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে ডিএনসিসির চিরুনি অভিযান অব্যাহত থাকবে।