বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘বিগত ১২ বছরে এদেশে ‘ক্যাসিনো ক্যাপিটালিজম’ এর জন্ম দিয়েছে সরকার। কুয়েতে লক্ষ্মীপুর-২ আসনের এমপি পাপলু গ্রেফতার এরই বহিঃপ্রকাশ। পাপলুদের অপকর্মের দায় সরকার এড়াতে পারে না।’
বুধবার (১০ জুন) দুপুরে দলীয় কার্যালয়ে এক ভিডিও কনফারেন্সে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, ‘মানবপাচার ও হাজার হাজার কোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগে কুয়েতে লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য কাজী শহীদ ইসলাম পাপুলকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সম্প্রতি এ বিষয়ে গণমাধ্যমে রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। যা বাংলাদেশের জন্য চরম লজ্জার হলেও সরকারের টনক নড়েনি।’
তিনি বলেন, ‘বর্তমান সরকার ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর বাংলাদেশ থেকে টাকা পাচারের হিড়িক চলে। বর্তমানে এমপি হতে ভোটের প্রয়োজন হয় না। নির্বাচনের আগের রাতেই নির্বাচনে দায়িত্বরত কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা রাতের ভোটে এমপি বানিয়ে দেন। লক্ষ্মীপুরের সেই এমপি তারই একটি উদাহারণ।’
বিএনপির এই শীর্ষ নেতা বলেন, ‘বিগত ১২ বছরে সুইস ব্যাংকসহ মালয়েশিয়া, কানাডায় লাখ লাখ কোটি টাকা পাচার করেছে ক্ষমতা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। ব্যাংক লুট, শেয়ারবাজার লুট, মেগা প্রকল্পের নামে হাজার হাজার কোটি টাকার মহাদুর্নীতি, দখল ও নিয়োগ বাণিজ্যের মাধ্যমে দেশজুড়ে যে লুটের মহোৎসব চলছে কুয়েতে এমপি গ্রেফতার তারই একটি নমুনামাত্র।’
রিজভী অভিযোগ করে বলেন, ‘বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে অনেকটাই অপরিচিত পাপলু শুধু একাই এমপি হননি, তার স্ত্রীকেও এমপি বানিয়েছেন। যাদের ধনস্ফীতির কোনও বৈধ উৎস জানা যায় না, তাদেরকেই রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে, দুর্বৃত্তায়নের মাধ্যমে প্রকৃত রাজনীতিক ও রাজনীতিকে ধ্বংস করে। এরা ক্ষমতাসীন হওয়ার পর থেকে ‘জনগণই ক্ষমতার উৎস’- এই সত্যকে বাংলাদেশের রাজনীতির অঙ্গন থেকে বিদায় করে পাপলুদের পরিচর্যা করা হয়েছে নিরন্তরভাবে। পাপলুদের অপকর্মের দায় সরকার এড়াতে পারে না। বিশ্বে প্রচলিত অর্থনীতির ধারণার সাথে বাংলাদেশের ফটকাবাজি অর্থনীতির মিল নেই। কারণ বিগত ১২ বছরে এদেশে শুধু ‘ক্যাসিনো ক্যাপিটালিজম’ এর জন্ম দেয়া হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘করোনায় সংক্রমণ ও মৃত্যু থামছেই না। সরকারের ব্যর্থতায় প্রতিদিনই পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃত্যুর মিছিল। সরকারি প্রেসনোটে প্রতিদিন যে খবর প্রকাশিত হচ্ছে বাস্তবতার সাথে তার কোনও মিল নেই। একটি অক্সিজেন সিলিন্ডার একটি ভেন্টিলেটরের জন্য মানুষ হাহাকার করছে। বাজেটে প্রতি বছরই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জন্য ১০ হাজার থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ থাকে। এই বরাদ্দের টাকা দিয়ে যদি স্বাস্থ্যখাতের উন্নতি করা হতো তাহলে কোভিড-১৯ মোকাবিলায় বাংলাদেশ এখন মুখ থুবড়ে পড়তো না।’
তিনি বলেন, ‘করোনা মোকাবিলায় সমন্বিত ও গোছানো কোনও কাজ হয়নি। সরকারের মন্ত্রী ও নেতাদের দায়িত্বজ্ঞানহীন ও ঔদ্ধত্যপূর্ণ কথাবার্তার মাধ্যমে তারা এই সংকটকে আড়াল করার চেষ্টা করছেন। রোগীদের দুর্দশা চরম আকারে পৌঁছেছে। এখন অসুস্থ মানুষ হাসপাতালে হাসপাতালে ঘুরেও চিকিৎসা পাচ্ছে না, জনগণ দিশাহারা হয়ে রাস্তাতেই ঘুরতে ঘুরতে প্রাণ হারাচ্ছে। দিনের পর দিন ঘুরেও করোনার পরীক্ষা করানো যাচ্ছে না। এই সরকারের স্বাস্থ্যসেবা এমনই যে, করোনা আক্রান্ত মানুষ চরম ভোগান্তির মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। দেশজুড়ে চলছে শোকার্ত মানুষের আহাজারি। চলছে করোনার ত্রাণ চুরির মহোৎসব।’
রিজভী বলেন, ‘ক্ষমতা-অন্ধ ওবায়দুল কাদের সাহেবরা নির্জন কক্ষ থেকে প্রায় প্রতিদিনই ভার্চুয়াল সংবাদ ব্রিফিং করে বিরোধী দলের মুখ বন্ধ করার চেষ্টা করছেন অবান্তর কথা বলে।’