‘ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) অনেক রিপোর্টই একপেশে ও সরকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করার রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে মন্তব্য করেছেন তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ।
সোমবার (১৫ জুন) দুপুরে সচিবালয়ে তথ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে করোনা মোকাবিলায় সরকারের পদক্ষেপগুলোর বিষয়ে টিআইবির সমালোচনার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি একথা বলেন।
‘টিআইবির কাজ শুধু দোষ খুঁজে বেড়ানো, গত সাড়ে ১১ বছর আমাদের দেশ পরিচালনার কোনো কাজে টিআইবি সরকারের প্রশংসা করতে পারে না’ উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘এই টিআইবি বড় গলায় বলেছিল পদ্মা সেতুতে দুর্নীতি হয়েছে। যখন কানাডার আদালতেও বিশ্বব্যাংক হেরে গেল, টিআইবি’র তখন জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়া প্রয়োজন ছিল। এমন বহুক্ষেত্রে টিআইবি প্রমাণ করেছে, তারা প্রকৃতপক্ষে সঠিক গবেষণাপ্রসূত কোনো রিপোর্ট পেশ করে না। তাদের সবগুলো না হলেও অনেক রিপোর্টই একপেশে এবং সরকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করার রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।’
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘তাদের অনুরোধ জানাব যেন তারা তাদের প্রধান কার্যালয় জার্মানি এবং ইউরোপের অন্যান্য যে সব দেশ থেকে অর্থ পায়, সেখানকার পরিস্থিতির সঙ্গে বাংলাদেশের তুলনা করে। তাহলেই সেখানকার তুলনায় বাংলাদেশের পরিস্থিতি তারা বুঝতে পারবে।’
সাংবাদিকরা বিএনপির সাম্প্রতিক বিরূপ মন্তব্য নিয়ে প্রশ্ন করলে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এই মহামারির মধ্যেও বিএনপি’র নেতাদের ভাষা প্রচণ্ড রাজনৈতিক বিদ্বেষপূর্ণ। আমরা আশা করেছিলাম, তারা অন্যান্য দেশ এমনকি পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের কাছ থেকেও শিখবে। ভারতে বিরোধীদলীয় নেত্রী সোনিয়া গান্ধী প্রথমেই চিঠি লিখে সরকারকে জানিয়েছেন যে, ভারত সরকার যে পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করছে, সেগুলো তারা সমর্থন করেন এবং এই দুর্যোগে তারা সরকারের পাশে আছেন। বাংলাদেশে বিএনপি সেটি করতে ব্যর্থ হয়েছে।’
মন্ত্রী বলেন, ‘করোনা মহামারি মোকাবিলা এটি একটি যুদ্ধ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বয়স ৭৪ বছর, তিনি এক মুহূর্তও বসে নেই। তিনি প্রতিদিন কাজ করছেন, জেলা ও বিভাগীয় সদরের সঙ্গে কথা বলছেন। দলীয় নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দিচ্ছেন, সংসদ অধিবেশনে প্রতিদিন অংশগ্রহণ করছেন। আমরা প্রত্যেকেই জানি, যে কোনো মুহূর্তে আক্রান্ত হতে পারি, এরপরও আমরা বসে নেই। দাফতরিক কাজ যেমন করছি, রাজনৈতিক কাজও করছি, একই সঙ্গে নিজ নির্বাচনী এলাকা থেকে শুরু করে নিজ জেলার কাজগুলোও যতটা সম্ভব তদারকির চেষ্টা করছি।’
‘প্রয়াত শ্রদ্ধেয় নেতা মোহাম্মদ নাসিম এবং ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ আব্দুল্লাহ দু’জনই মানুষের মাঝে কাজ করতে গিয়েই করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন’ উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আমাদের দলের যে সব নেতা ও সংসদ সদস্য আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে আছেন কিংবা চিকিৎসা নিচ্ছেন, তারাও মানুষের জন্য কাজ করতে গিয়েই আক্রান্ত হয়েছেন। এগুলো প্রমাণ করে, আমাদের দলের কেন্দ্রীয় এবং মাঠ পর্যায়ের নেতা ও সংসদ সদস্যরা জনগণের পাশে থাকতে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছেন। এই যুদ্ধের মধ্যেই নিজেকে যতটুকু সম্ভব সুরক্ষায় রেখে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে হবে।’
সাধারণ মানুষের জন্য চিকিৎসা নেই- বিএনপির এই অভিযোগ খণ্ডন করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘সরকারের প্রাণান্তকর চেষ্টায় এখনো বাংলাদেশের পরিস্থিতি বিশ্বের উন্নত ও প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায়ও ভালো রয়েছে। স্বাস্থ্য ব্যবস্থার আরও উন্নতির জন্য সরকার নানামুখী ব্যবস্থা নিয়েছে। হাজার হাজার মানুষ যে সুস্থ হলো, তারা সেগুলো দেখেন না। হাজার মানুষ যে হাসপাতালে আছে এবং সেখানে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে চোখ থাকতেও যারা অন্ধের মতো সেগুলো দেখে না, তাদের চোখে তো আলো দেয়া সম্ভবপর নয়।’
‘এই সময় বিষোদগারের রাজনীতি পরিহার হোক- এটিই বিএনপির কাছে আমার অনুরোধ’ জানিয়ে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘আপনাদের গতানুগতিক বিদ্বেষপূর্ণ বক্তব্য এগুলো পরিহার করুন, জনগণের পাশে থাকুন। আপনারা লোক দেখানো কয়েকটা ফটোসেশন করবেন আর নিজেকে সুরক্ষিত রেখে প্রেস ব্রিফিং করে সেখানে বিষোদগার করবেন, এই সময় এটি সমীচীন নয়, জনগণ এটি কামনা করে না। তাই আসুন একসঙ্গে কাজ করি।’