সারা দেশে নভেল করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এ পর্যন্ত বিএনপির ৭৩ নেতাকর্মী মৃত্যুবরণ করেছেন বলে জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এছাড়াও প্রাণঘাতী এ ভাইরাসে এখন পর্যন্ত দলের ২৮৪ জন নেতাকর্মী আক্রান্ত হয়েছেন বলেও জানান তিনি।
বৃহস্পতিবার (২৫ জুন) দুপুরে উত্তরার নিজ বাসা থেকে এক ভার্চ্যুয়াল সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা জানান তিনি।
করোনাকালে দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে সুস্থ রাখার জন্য কী ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে এবং বর্তমানে তিনি কেমন আছেন, জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘তাঁকে সুস্থ রাখতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। আপনারা জানেন, করোনা ভাইরাসের কোনো চিকিৎসা নেই। সেজন্য এ ভাইরাস প্রতিরোধ করতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। উনি করোনা থেকে মুক্ত আছেন। তবে ওনার যে পুরনো অসুস্থতা, সেটার তেমন উন্নতি হয়নি। চিকিৎসার তেমন সুযোগ নেই। হাসপাতালগুলোতেও যাওয়া যাচ্ছে না। বাইরে যাওয়ার ব্যাপারে তো সরকারের শর্তই আছে যে, বিদেশে যাওয়া যাবে না। অর্থাৎ তাঁর যে পুরোনো অসুখ সেগুলোর চিকিৎসা হচ্ছে না।’
‘করোনা নিয়ে বিএনপি ও বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা ভুল প্রমাণিত হয়েছে’, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের এমন বক্তব্যের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করলে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘তাদের যে ব্যর্থতা সেটা ঢাকতে গোটা জাতির সঙ্গে তারা মিথ্যাচার করছেন। আমাদের কথা নয়, চীনের যে বিশেষজ্ঞ দল এসেছিল তারা বলে গেছে, তাদের (বর্তমান সরকারের) কোনও প্রতিরোধ পরিকল্পনাই ছিলো না। আজ প্রমাণিত হয়ে গেছে, তারা সম্পূর্ণ ব্যর্থ। এটা বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞ ও সাধারণ মানুষকে জিজ্ঞাসা করলেই বুঝতে পারবেন। কত মানুষ টেস্ট করতে পারছেন না, কত মানুষ টেস্ট করতে গিয়ে মারা গেছেন, কত মানুষ অক্সিজেনের অভাবে মারা গেছেন, কত মানুষ সাধারণ চিকিৎসার জন্যও কোনও হাসপাতালে যেতে পারছেন না। স্বাস্থ্যব্যবস্থা যে পুরোপুরিভাবে ভেঙে পড়েছে এটাই তার প্রমাণ।’
সম্প্রতি ত্রাণ বিতরণে বিএনপিকে কোথায়, কে বাধা দিয়েছে- আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের তার প্রমাণ চেয়েছেন এবং অভিযোগ প্রমাণিত হলে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়াও আশ্বাস দিয়েছেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা স্পষ্টভাবে বলেছি, সাতক্ষীরায় সংসদ সদস্যের ছেলের নেতৃত্বে হামলা করা হয়েছে। ১৫/২০টি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। অনেককে আহত করা হয়েছে। নারায়ণগঞ্জের মহিলা কাউন্সিলর আয়শা আক্তারের ওপর হামলা হয়েছে। রাজশাহীতে ত্রাণ দেয়ার সময় ৬ মাসের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। কুষ্টিয়ায় জাহিদুল ইসলাম বিপ্লবকে আটক করা হয়েছে। আমি বলতে চাই সরকার অবৈধ ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করার জন্য সব রকমের কূটকৌশল প্রয়োগ করেছে।’
এ প্রসঙ্গে ফখরুল আরও বলেন, ‘আজকে পত্রিকায় আছে, ২২২ জন কারারক্ষী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। অথচ আমরা প্রথম থেকে বলে আসছি, যাদের মিথ্যা মামলা দিয়ে কারাগারে আটক রাখা হয়েছে, তাদের মুক্তি দেয়া হোক। আমাদের নেতা আব্দুস সালাম পিন্টু, লূৎফুজ্জামান বাবর- এরা অত্যন্ত অসুস্থ এবং বয়ষ্ক। এরা সবাই রাজনৈতিক মামলায় আটক আছেন। আমরা আশা করেছিলাম, সরকার এদের মুক্তি দিয়ে একটা পরিবেশ সৃষ্টি করবে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে তারাতো সেটা করেইনি, উপরন্তু সংসদে আমাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নাম উচ্চারণ করতে বাধা দিয়েছে। অর্থাৎ ক্ষমতাসীনরা ফ্যাসিবাদী কায়দায় দেশ চালাচ্ছে। তারা একদলীয় শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে চায়। ভিন্নমত, ভিন্নদলকে কোনোভাবেই সহ্য করতে চায় না।’
১৯৯১ থেকে ২০০৭ সালের মধ্যে বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালীন কয়টি জেলা হাসপাতালে আইসিইউ, সিসিইউ এবং অক্সিজেন ব্যবস্থা ছিলো- জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল সাংবাদিকদের বলেন, ‘আপনারা যে তথ্য চেয়েছেন সেটা সময় দিলে জানানো যাবে। পরিসংখ্যানটা বড় বিষয় নয়। (কিন্তু) গত এক দশকে বাজেটে স্বাস্থ্যখাতে কীভাবে বরাদ্দ কমানো হয়েছে, সেটা দেখলেই বুঝতে পারবেন, বর্তমান সরকারের আমলে স্বাস্থ্যখাতের কোনও গুরুত্বই দেয়া হয়নি। এমনকি এবারের বাজেটেও স্বাস্থ্যখাতকে গুরুত্ব দেয়া হয়নি।’
সম্প্রতি সংসদে বিএনপির সদস্যরা স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করেছেন, এটি দলীয় দাবি কিনা বা এ ব্যাপারে বিএনপি কী মনে করে, জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা তো এই সরকারকেই বলি, তাদের অবিলম্বে চলে যাওয়া উচিত। কারণ তারা নির্বাচিত সরকার নয়। তারাতো জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে আসেনি। তারা সব ক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়েছে। সে ক্ষেত্রে (আমাদের দলের নেতারা) স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পদত্যাগতো চাইতেই পারেন।’
সরকারের কঠোর সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘এ মহামারিতে সরকার দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে পারেনি।’
অপর এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘চীনা বিশেষজ্ঞরাই বলে গেছেন যে করোনা ভাইরাসে বাংলাদেশের কোনও প্রস্তুতি ছিল না। সরকার তাদের ব্যর্থতা ঢাকার জন্য মিথ্যচার করছে।’