করোনা মহামারির এই অন্ধকারাচ্ছন্ন সময়ে সরকার ‘মানুষের জীবন নিয়ে খেলা করছে’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।
ক্ষমতাসীন সরকারের প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেছেন, ‘করোনার ভুয়া সার্টিফিকেট দেয়া হাসপাতালগুলোকে সরকারই স্বীকৃতি দিয়েছিল। এখন সনদ জালিয়াতিতে সরকারের স্বাস্থ্যমন্ত্রী, স্বাস্থ্য অধিদফতর ও সংশ্লিষ্টরা একে অপরের ওপর দোষারোপ করছে। কেউ দায় নিচ্ছে না। যারা জালিয়াতির মাধ্যমে ভোট করে ক্ষমতায় থাকে তারা করোনার সনদ জালিয়াতির সার্টিফিকেট দেবে, মানুষের জীবন বাঁচানোর কোনও উদ্যোগ নেবে না- এটাই তো স্বাভাবিক।’
বিএনপির সম্পর্ক এদেশের মাটি ও মানুষের সাথে, তাই ষড়যন্ত্র করে বিএনপিকে ধ্বংস করা যাবে না বলেও দাবি করেন রিজভী।
তিনি বলেন, ‘আমরা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আদর্শ ধারণ করে চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাথে আছি। তাঁরা মানুষের কল্যাণের জন্য, এদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য লড়াই করেছেন, এখনও করে যাচ্ছেন। তাই কোনও অপশক্তিই আমাদেরকে ধ্বংস করতে পারবে না। পুলিশ দিয়ে, মিথ্যা মামলা দিয়ে আমাদেরকে বঞ্চিত করতে পারবে না। আমরা জেগে উঠবো, কারণ আমরা মানুষের পক্ষে, জনগণের পক্ষে, জনগণের আর্থিক উন্নয়নের পক্ষে আছি। তাই যতই দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র হোক- এই জাতীয়তাবাদী দলকে ধ্বংস করা যাবে না।’
রবিবার (২৬ জুলাই) জাতীয় মৎস সপ্তাহ ২০২০ উপলক্ষে খিলগাঁওয়ে বালু নদীর মোহনায় উন্মুক্ত জলাশয়ে মৎস পোনা অবমুক্তকরণের পর তিনি এসব কথা বলেন। জাতীয়তাবাদী মৎসজীবী দল এ কর্মসূচির আয়োজন করে।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান দেশের সমৃদ্ধি ও উন্নতির জন্য যে কাজগুলো দরকার সেগুলো করেছেন। বর্ষা ও শুকনো মওসুমে যেনে খালে-বিলে পানি থাকে এবং সেগুলোতে যেন মৎস চাষ করা যায় এজন্য কিলিমিটারের পর কিলোমিটার খাল খনন করেছেন। নিজে কোদাল ধরেছেন। এভাবেই জিয়াউর রহমান দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পন্ন করেছিলেন। এজন্য আমরা এক মুঠো হলেও ডালে মাছে ভাতে এখন খেয়ে বাঁচতে পারছি।’
রিজভী বলেন, ‘জিয়াউর রহমানের হাত ধরেই আমরা এগিয়ে যাচ্ছিলাম, এই যে অর্থনৈতি উন্নয়ন-সমৃদ্ধি এগুলো যারা পছন্দ করেন না তারাই ১৯৮১ সালের ৩০ মে গভীর চক্রান্তের মাধ্যমে আধুনিক বাংলাদেশের স্থপতিকে নির্মমভাবে হত্যা করে। তাঁর যে উন্নয়নমূলক কাজ চক্রান্তকারীরা এগুলো নানাভাবে ব্যাহত করার চেষ্টা করেন।’
বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, ‘জিয়াউর রহমান যা রেখে গেছেন, দিয়ে গেছেন তার ওপর ভিত্তি করে বাংলাদেশ এগিয়েছে। আজকে যারা সরকারে আছে তারা রাতের বেলা ভোট করে, তারা মানুষের স্বাস্থ্যের নামে হাসপাতালে ভুয়া সার্টিফিকেট বিতরণ করে, জালিয়াত সার্টিফিকেট বিতরণ করে। এখন এই পরিস্থিতির মধ্যে দিয়েই দেশ চলছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘অন্যদিকে আপনারা দেখেছেন- বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দল আরও বিভিন্ন অঙ্গসংগঠন প্রত্যেকটি মানুষের উন্নয়নের জন্য, মানুষের পাশে থাকার জন্য উন্নয়ন কর্মসূচি পরিচালনা করছে। মানুষের স্বাবলম্বী হওয়ার কর্মসূচিগুলো যেমন করছে তেমনই গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার জন্য, অর্থনৈতিক স্বাধীনতার জন্য কাজ করছে।’
তিনি বলেন, ‘আপনারা দেখেছেন, এই করোনার সময়ে সরকারের ত্রাণ যেগুলো জনগণের টাকায় কেনা সেগুলো পাওয়া গেছে আওয়ামী লীগের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের ঘরের ভেতরে, খাটের নিচে। ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মী, মন্ত্রী-এমপিরা যারা মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলে, মানুষের পক্ষে না দাঁড়িয়ে ত্রাণের মালামাল আত্মসাতের জন্য সুযোগ গ্রহণ করেছে। নিজেদের পকেট ভারি করেছে।’
যারা গত ১২ বছর ধরে ব্যাংকগুলো লুট করেছে, দেশকে লুট করেছে, কানাডায় বেগম পল্লী বানিয়েছে, মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোম বানিয়েছে, তাদের কাছে জনগণের জন্য কোনও কিছু প্রত্যাশা করা যায় না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
বালু নদীর মোহনায় উন্মুক্ত জলাশয়ে মৎস পোনা অবমুক্তকরণ কর্মসূচির জন্য জাতীয়তাবাদী মৎস্যজীবী দলকে আন্তরিক অভিনন্দন জানান রিজভী।
এসময় উপস্থিত ছিলেন মৎসজীবী দলের সভাপতি রফিকুল ইসলাম মাহতাব, সদস্য সচিব আব্দুর রহিম, যুগ্ম আহ্বায়ক সেলিম মিয়া, জাকির হোসেন খান, ওমর ফারুক পাটোয়ারী, হাবিবুল হক হাবিব, কবির উদ্দিন মাস্টার, জহিরুল ইসলাম, ছাত্রদলের সাবেক কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী ইফতেখায়রুজ্জামান শিমুল, স্বেচ্ছাসেবক দলের মোর্শেদ আলম, মৎসজীবী দলের সদস্য আমির হোসেন, হেমায়েত উদ্দিন হিমু, শাহিন উদ্দিন স্বপন চৌধুরী, তানভীর, রজব আলী, সুমন মুন্সি, কে এম সোহেল, লিয়াকত, স্বপন, তবারক ফজলে কবির সোহেল ও বাকি বিল্লাহ প্রমুখ।