জেনারেল জিয়া ও বেগম জিয়া দু’জনই হত্যার রাজনীতির পথে হেঁটেছেন:তথ্যমন্ত্রী

‘জেনারেল জিয়া ও বেগম জিয়া দু’জনেই হত্যার রাজনীতির পথে হেঁটেছেন’ বলেছেন তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ।

সোমবার (২৪ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীতে জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে ‘জাতীয় শোক দিবস ও ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার বিচারের রায় কার্যকর করার দাবিতে’ আওয়ামী হকার্স লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় মন্ত্রী একথা বলেন। বক্তব্যের শুরুতেই তথ্যমন্ত্রী ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট শহীদ জাতির পিতা, তার পরিবারের সদস্যদের এবং ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় শহীদদের প্রতি ও শহীদ আইভি রহমানের ষোড়শ মৃত্যুবার্ষিকীতে তার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান ও তাদের আত্মার শান্তি কামনা করেন। এর আগে সকালে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের সাথে বনানী কবরস্থানে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় শহীদ আইভি রহমানের সমাধিতে পুষ্পিত শ্রদ্ধা নিবেদন করেন তিনি।

‘১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের হত্যাকান্ড এবং ২০০৪ সালের ২১ আগস্টের হত্যাকান্ড দু’টি একই সূত্রে গাঁথা’ উল্লেখ করে মন্ত্রী এসময় বলেন, ‘দেশি-বিদেশি অপশক্তি ও একাত্তরের পরাজিত শক্তি যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা চায়নি এবং যারা বঙ্গবন্ধুকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হয়েছিল তারাই ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছিল।

একইভাবে ২০০৪ সালেও যারা জননেত্রী শেখ হাসিনাকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হয়েছিল তারাই তাকে চিরতরে সরিয়ে দেয়ার লক্ষ্যে এবং আওয়ামী লীগকে নেতৃত্ব শূণ্য করার উদ্দেশ্যে গ্রেনেড হামলা পরিচালনা করেছিল।’

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইতিহাসের দিকে লক্ষ্য করে বলেন, ‘আপনারা লক্ষ্য করে দেখুন ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট শুধু বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়নি, বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করা হয়েছে। এমনকি ১০ বছরের শিশু শেখ রাসেল, শেখ ফজলুল হক মণি, শেখ আবু নাছের এবং আব্দুর রব সেরনিয়াবাত যিনি বঙ্গবন্ধুর ভগ্নিপতি ও মন্ত্রিসভার মন্ত্রী ছিলেন তাকেও হত্যা করা হয়েছে।

অর্থাৎ আওয়ামী লীগকে নেতৃত্ব শূণ্য করা, দেশকে আবার পরাধীনতার দিকে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যেই বঙ্গবন্ধুকে সেদিন হত্যা করা হয়েছিল। এবং এই হত্যাকান্ডের মুল কুশীলব ছিল খন্দকার মোশতাক এবং জিয়াউর রহমান।’

‘আর ২১ আগস্টের হত্যাকান্ডের মুল কুশীলব, মুল পরিকল্পনাকারী এবং পরিচালনাকারী জিয়াউর রহমানের পুত্র তারেক রহমান, অর্থাৎ দুই হত্যাকান্ডেই একই পরিবার যুক্ত এবং আজকে এই কথাগুলো দিবালোকের মতো সত্য এবং স্পষ্ট’ বলেন ড. হাছান।

তিনি বলেন, ‘২১ আগস্টের হত্যাকান্ডের জন্য তারেক রহমানের বিচার হয়েছে, যাবজ্জীবন কারাদন্ড হয়েছে। কিন্তু বেগম খালেদা জিয়া তো তখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। বেগম জিয়ার জ্ঞাতসারে, অনুমোদনে তারেক রহমানের পরিচালনায় ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা হয়েছিল।

এজন্য আজকে যখন দাবি উঠেছে, বেগম খালেদা জিয়াকেও হুকুমের আসামী হিসেবে বিচারের আওতায় আনা প্রয়োজন, তখন বিএনপির নেতারা আবোল-তাবোল বলা শুরু করেছে। তাদের একটি বক্তব্য হচ্ছে যে, বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য না কি ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের মিটিংয়ে গ্রেনেড হামলা পরিচালনা করা হয়েছিল! এই কথা শুনে পাগলও হাসে।’

‘তাই আজকে জনগণের দাবি হচ্ছে শুধু তারেক রহমানের বিচার হলে হবে না, বেগম খালেদা জিয়াকেও ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার আসামী করতে হবে’ উল্লেখ করেন তথ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘জিয়াউর রহমান যেমন হত্যার পথ বেছে নিয়েছিলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যার অন্যতম কুশীলব ছিলেন সেই পথ থেকে বেগম খালেদা জিয়াও ফিরে আসতে পারে নাই। বেগম খালেদা জিয়াও তার ক্ষমতাকে নিষ্কন্টক করার জন্য এবং তার ক্ষমতাকে ভবিষ্যতে চিরস্থায়ী করার লক্ষ্যেই ২১ আগস্ট জননেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে তার পুত্রের মাধ্যমে গ্রেনেড হামলা পরিচালনা করেছিলেন। এটিই হচ্ছে বাস্তবতা।’

বাংলাদেশ আওয়ামী  হকার্স লীগের সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক জাকারিয়া হানিফের সভাপতিত্বে কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক মো: জাহেদ আলীর সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথি হিসেবে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম নাদেল ও ঢাকা দক্ষিণ মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব আবু আহমেদ মান্নাফী, বিশেষ বক্তা হিসেবে আওয়ামী হকার্স লীগ উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য মো: শাহিন আহমেদ ও বক্তা হিসেবে মানিক লাল ঘোষ প্রমুখ সভায় বক্তব্য রাখেন।