
বাংলা ও বাঙালির নিখাদ আপনজন বঙ্গবন্ধু এ দেশের মানুষের জন্য লড়াই করতে গিয়ে জীবনের অধিকাংশ সময় কাটিয়েছেন নির্জন কারাগারে। তিনি ছিলেন নিপীড়িত, শোষিত, বঞ্চিত শ্রমজীবি মেহনতী মানুষের মহান নেতা। তিনি বিশ্বের সকল মুক্তিকামী মানুষের অনুপ্রেরণার অনিঃশেষ উৎস।
বাংলার মানুষের ভাগ্যোন্নয়নের জন্য, শোষণ-বঞ্চনা-নির্যাতন মুক্ত করার জন্য যিনি ‘রাজনীতি’ বেছে নিয়েছিলেন সেই মহৎ মানুষটি ও তার পরিবারের সদস্যদের রয়েছে ক্রীড়াঙ্গনে বর্ণাঢ্য পদচারণা; রয়েছে স্বর্ণোজ্জ্বল অতীত, রয়েছে ক্রীড়ার প্রতি অনুরাগ আর অবদানের অসংখ্য স্বাক্ষর। বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্র অর্জনে যে পরিবারটির সংগ্রাম-ত্যাগ-অবদানের কথা জাতির সামনে সুস্পষ্ট সেই পরিবারটিই বাংলাদেশের একটি বৃহৎ ‘ক্রীড়া-পরিবার’।
তিনি বলেন, বিস্মিত হওয়ারই বিষয়, এক পরিবারে এতজন ক্রীড়াবিদ-ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব! যারা কি না এ দেশের ক্রীড়াঙ্গনে এক একটি বাতিঘর! স্বাধীনতার আগে ও স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনের উন্নয়নে বঙ্গবন্ধু এবং তার পরিবারের অবদান অনস্বীকার্য। তিনি আজ জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ আয়োজিত আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুর পিতা শেখ লুৎফর রহমানও ছিলেন একজন সুপরিচিত ফুটবলার। বঙ্গবন্ধু নিজেও ছিলেন কৃতী ফুটবলার; খেলতেন হকি, ভলিবলও। খেলাধুলার অনুরাগের পাশাপাশি ক্রীড়া-উন্নয়নে ছিল তার বিশেষ নজর। আপাদমস্তক ক্রীড়াপ্রাণ বঙ্গবন্ধুর বড় ছেলে শেখ কামাল এ আঙিনায় যেন পিতাকেও ছাড়িয়ে গিয়েছিলেন। মেজ ছেলে শেখ জামাল ছিলেন ফুটবল ও ক্রিকেট খেলোয়াড়।
এদিকে শেখ কামালের সহধর্মিণী মেধাবী ক্রীড়াবিদ সুলতানা কামালের নাম যেন ক্রীড়াঙ্গনের সবুজ মাঠের প্রতিটি ঘাসের সঙ্গে মিশে রয়েছে। তারা সবাই আজ ফ্রেমবন্দি। কিন্তু জীবনের বাঁকে বাঁকে তারা এ দেশের ক্রীড়াঙ্গন করেছেন সমৃদ্ধ।
তিনি আরও বলেন, ক্রীড়াপ্রাণ বঙ্গবন্ধু-কন্যা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করতে হয়। যিনি ক্রীড়াবিদ না হয়েও ক্রীড়াঙ্গনের সবচেয়ে আপনজন, দায়িত্বশীল অভিভাবক, নিবেদিতপ্রাণ দর্শক, ক্রীড়াঙ্গনের প্রধান পৃষ্ঠপোষক।
ক্রীড়াবান্ধব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাষ্ট্র পরিচালনাকালেই বাংলাদেশ ক্রীড়াঙ্গনের সবচেয়ে বড় অর্জনগুলো স্পর্শ করেছে। জাতির পিতার ছোট মেয়ে শেখ রেহানারও ক্রীড়ার প্রতি রয়েছে বিশেষ উৎসুক্য। তাকেও বড় আয়োজনে দর্শকসারিতে সরব দেখা গেছে। কখনও ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়, কখনও সায়মা ওয়াজেদ হোসেন পুতুল কিংবা মুজিব ববিকেও স্টেডিয়ামে মাঝে মধ্যে দেখা যায়।
স্বাধীনতার অব্যবহিত পরেই ক্রীড়ার উন্নয়নে বঙ্গবন্ধুর নেওয়া নানা পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন,একজন সফল রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশের ক্রীড়াক্ষেত্রের উন্নয়নে রেখেছিলেন অনন্য ভূমিকা। খেলাধুলা একটি জাতির মন ও মানস গঠনে এবং বিশ্বের বুকে পরিচয় এনে দিতে যে দারুণ ভূমিকা রাখে, সবসময় এই ব্যাপারটি স্মরণে রেখেছিলেন তিনি। সেজন্য নিয়েছিলেন নানান অসামান্য উদ্যোগ এবং করেছিলেন সেগুলোর বাস্তবায়ন। ক্রীড়াবিশ্বে বাংলাদেশ আজ আপন দ্যুতিতে ভাস্বর। এর যাত্রাটি বঙ্গবন্ধুর আমলে শুরু হয়েছিল বললে অত্যুক্তি হবে না।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অনুপ্রেরণায় স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল গঠিত হয়েছিল। মহান মুক্তিযুদ্ধে তাদের ভূমিকা আজও চিরভাস্বর। তার ইচ্ছায় ১৯৭২ সালের ১৩ ই ফ্রেব্রুয়ারি দেশের প্রথম ফুটবল ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়। যে ম্যাচের উদ্বোধন তিনি নিজে করেছিলেন।
তিনি ১৯৭২ সালেই আজকের জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ ( ক্রীড়া নিয়ন্ত্রণ সংস্থা) , বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড গঠন করেছিলেন। তিনি ক্রীড়াঙ্গনকে আইনী ভিত্তি দিতে ১৯৭৪ সালে জাতীয় সংসদে পাস করেন বাংলাদেশ স্পোর্টস কাউন্সিল অ্যাক্ট। আজকের যে বিকেএসপি সেটিও তিনি প্রতিষ্ঠা করছেন। মৃত্যুর মাত্র ৯ দিন অসহায় দুস্থ ক্রীড়াবিদদের জন্য বঙ্গবন্ধু ক্রীড়াসেবী কল্যাণ ফাউন্ডেশন গঠন করেছিলেন।
দেশের ক্রীড়াঙ্গন নিয়ে জাতির পিতার যে স্বপ্ন ছিল তা বাস্তবায়িত হবে উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ ক্রীড়া ক্ষেত্রে আরো এগিয়ে যাবে, ইতিমধ্যে আমরা যুব বিশ্বকাপ ক্রিকেটে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হবার গৌরব অর্জন করেছি। আমরা একদিন সব খেলাতেই বিশ্বসেরা হবো। আর এর মধ্য দিয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবে।
আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সচিব মোঃ মাসুদ করিম, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের শ্রম ও জনশক্তি বিষয়ক সম্পাদক মোঃ হাবিবুর রহমান সিরাজ, জাতীয় শ্রমিক লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ ফজলুল হক মন্টু ও জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের কর্মকর্তা কর্মচারীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।