হাতে কোনো বিকল্প না থাকায় দলীয় নেতাকর্মীদের অনীহা থাকা সত্ত্বেও করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতিতে পাঁচটি শূন্য হওয়া আসনের উপনির্বাচন ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। এরই মধ্যে পাবনা-৪ আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে দলটির সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ড। বাকি চারটি- ঢাকা-৫ ও ১৮, নওগাঁ-৬ ও সিরাজগঞ্জ-১ আসনের উপনির্বাচনের প্রার্থী চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। যদিও বগুড়া-১ ও যশোর-৬ উপনির্বাচনে প্রার্থী দিয়েও করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতির কারণে নির্বাচন বর্জন করে দলটি। এ করোনা পরিস্থিতির কারণেই স্থগিত রাখা হয়েছে বিএনপির তৃণমূল পুনর্গঠনের কাজ। এখন দলটির সব কার্যক্রমই ভার্চুয়াল উপায়ে হচ্ছে।
দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের অনেক নেতাই নির্বাচনে যাওয়ার বিপক্ষে। তারা মনে করেন, বিগত নির্বাচনগুলোয় ভোটারদের উপস্থিতির হারই বলে দেয় এই সরকার ও নির্বাচন কমিশনের ওপর জনগণের আস্থা কতটুকু। নেতাকর্মীদেরও রয়েছে ভোটের ব্যাপারে অনীহা। এরপরও বিকল্প না থাকায় জনগণের মতামতের বাইরে গিয়ে এ উপনির্বাচনে অংশ নিতে হচ্ছে বিএনপিকে। দেশের চলমান পরিস্থিতিতে জনগণের কাছে যাওয়ার একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে নির্বাচন। এ ছাড়াও নির্বাচন প্রক্রিয়ার ত্রুটি ও পক্ষপাতমূলক বাস্তবতা উন্মোচন করতে এবং নির্বাচনী এলাকার নেতাকর্মীদের মধ্যে চাঙ্গাভাব তৈরি হয়।
এ বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গণমাধ্যমকে বলেন, আমাদের বরাবরই সিদ্ধান্ত ছিল নির্বাচনে অংশ নেওয়ার। শুধু কোভিড ১৯-এর কারণে আমরা গত দুটি উপনির্বাচনে (যশোর ও বগুড়া) যোগ দিয়েও পরবর্তী সময়ে প্রচারে যাইনি, সরে দাঁড়িয়েছি। উপজেলা নির্বাচনসহ স্থানীয় নির্বাচনগুলোয় অংশগ্রহণ করব সেই সিদ্ধান্তই আছে।
তবে উপনির্বাচন নিয়ে দলটির সম্ভাব্য প্রার্থীদের তেমন আগ্রহ নেই। তাদের ভাষ্য, বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে কোনো নির্বাচনেই ভোটগ্রহণ নিরপেক্ষ হবেÑ এটা তারা বিশ্বাস করেন না। তবে তাদের আশা, এ সরকার ও কমিশন তো সারাজীবন থাকবে না; আবার বিএনপি দেশের একটি বড় রাজনৈতিক দল। এ উপনির্বাচনে মনোনয়ন পাওয়া মানে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য আসনটি বুকিং দেওয়ার মতো অবস্থা। এ কারণেই আর্থিক কিছুটা ক্ষতি হলেও তারা উপনির্বাচনে মনোনয়ন চাইছেন।
করোনা মহামারীর মধ্যে আওয়ামী লীগদলীয় পাঁচ সংসদ সদস্যের মৃত্যু হয়। তারা হলেনÑ পাবনা-৪ শামসুর রহমান শরীফ, ঢাকা-৫ হাবিবুর রহমান মোল্লা, ঢাকা-১৮ অ্যাডভোকেট সাহার খাতুন, নওগাঁ-৬ ইসরাাফিল আলম, সিরাজগঞ্জ-১ মোহাম্মাদ নাসিম। তাদের মৃত্যুতে এসব আসন শূন্য হয়। এরই মধ্যে পাবনা-৪ উপনির্বাচনে দলীয় প্রার্থী হিসেবে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিবের নাম ঘোষণা করেছে বিএনপির সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ড। নির্বাচন কমিশনের ঘোষণা অনুযায়ী পাবনা-৪ আসনে ভোট হবে আগামী ২৬ সেপ্টেম্বর।
ঢাকা-৫ ও নওগাঁ-৬ আসনের উপনির্বাচনের ভোটগ্রহণ আগামী ১৭ অক্টোবর। তফসিল অনুসারে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ১৭ সেপ্টেম্বর এবং যাচাই-বাছাই ২০ সেপ্টেম্বর। এ ছাড়া মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ২৭ সেপ্টেম্বর ও প্রতীক বরাদ্দ ২৮ সেপ্টেম্বর। তবে সিরাজগঞ্জ-১ ও ঢাকা-১৮ উপনির্বাচনের তফসিল এখনো ঘোষণা করেনি বিএনপি।
এসব আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে দলটি। সে অনুযায়ী আগামী ১০-১১ সেপ্টেম্বর দলের নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে সম্ভাব্য প্রার্থীদের মনোনয়ন ফরম নির্ধারিত ফি দিয়ে ক্রয় ও জমা দিতে বলা হয়েছে। ১২ সেপ্টেম্বর দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী প্রার্থীদের গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সাক্ষাৎ নেবে বিএনপির সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ড। বিএনপির স্থায়ী কমিটি ও সংশ্লিষ্ট জেলার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের নিয়ে গঠিত হয় সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ড।
দলের গুরুত্বপূর্ণ এক নেতা আমাদের সময়কে জানান, অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে যাদের মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল তারা যদি প্রার্থী হতে চান, এবারও তাদের পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। ঢাকা-১৮ আসনে গত নির্বাচনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের হয়ে আ স ম আব্দুর রবের জেএসডির শহীদ উদ্দিন মাহমুদ ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেছেন। এবারের নির্বাচনে উত্তরের যুবদলের সভাপতি এসএম জাহাঙ্গীরকে বেছে নেওয়া হতে পারে। যদিও বিষয়টি চূড়ান্ত করবেন সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ড।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আমাদের সময়কে বলেন, বর্তমান সরকার নির্বাচন ব্যবস্থাকে এমন এক অবস্থানে নিয়ে গেছে, এখন জনগণও নির্বাচন নিয়ে কোনো আগ্রহ প্রকাশ করছে না। তারপরও আন্দোলনের অংশ হিসেবে উপনির্বাচনে অংশ নিচ্ছে বিএনপি। এর মধ্য দিয়ে গণতন্ত্রের স্পেসকে বাড়ানোর চেষ্টা করছি। তাই উপনির্বাচনে যারাই মনোনয়ন পাবেন তারাই শেষ পর্যন্ত মাঠে থাকবেন, লড়াই করবেন।
ইতোমধ্যে তিনটি আসনে উপনির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। তফসিল অনুযায়ী, ২৬ সেপ্টেম্বর পাবনা-৪ আসনে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। আর ঢাকা-৫ ও নওগাঁ-৬ আসনের ভোটগ্রহণ হবে ১৭ অক্টোবর। এ ছাড়া সিরাজগঞ্জ-১ ও ঢাকা-১৮ আসনে উপনির্বাচন হবে। তবে এ দুই আসনে এখনো তফসিল ঘোষণা হয়নি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকা-৫ আসনে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেন মহানগর দক্ষিণের সহসভাপতি নবী উল্লাহ নবী। তিনিই দলের পছন্দ তালিকার শীর্ষে রয়েছেন। এর বাইরেও মনোনয়ন পেতে চান এই আসনেরই সাবেক সংসদ সদস্য বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদ ও শিক্ষকনেতা অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়া ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশার। তবে এরা দলের শীর্ষ নেতৃত্বের আশ্বাস ছাড়া কেউই মনোনয়ন ফরম সংগ্রহে আগ্রহী নন।
নওগাঁ-৬ আসনে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন পান সাবেক এমপি আলমগীর কবির। তিনি প্রার্থী হলে তাকেই মনোনয়ন দেওয়া হবে। তবে তিনি নির্বাচন না করলে তার ভাই আনোয়ার হোসেন বুলু মনোনয়নপ্রত্যাশী। এর বাইরেও মনোনয়ন পেতে আগ্রহী স্থানীয় উপজেলার নেতা রেজাউল ইসলাম ও জেলার নেতা ইশহাক আলী।
সিরাজগঞ্জ-১ আসনে গত নির্বাচনের বিএনপির প্রার্থী কণ্ঠশিল্পী রোমানা মোর্শেদ কনক চাঁপা। তাকেই উপনির্বাচনেও মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। তবে এর বাইরে মনোনয়ন পেতে চান স্থানীয় বিএনপি নেতা রেজাউল করিম, জেলা নেতা নাজমুল হাসান, টিএস তহযিবুল এনাম।
ঢাকা-১৮ আসনে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী ছিলেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) নেতা শহীদউদ্দিন মাহমুদ স্বপন। এখানে এবার বিএনপির নতুন মুখ দেখা যাবে। বিএনপির তিন প্রার্থীর ঢাকা মহানগর উত্তরের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এম কফিল উদ্দিন আহম্মেদ, ঢাকা মহানগর উত্তর যুবদলের সভাপতি এসএম জাহাঙ্গীর হোসেন ও ব্যবসায়ী বাহাউদ্দিন সাদী মনোনয়ন পেতে বেশ লবিং ও প্রচার করছেন। কফিলউদ্দিন বলেন, আমি উত্তরার আদি বাসিন্দা। ৩২ বছর বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। আশা করছি, দল আমাকে মনোনয়ন দেবে।
এসএম জাহাঙ্গীর বলেন, আমি ২০ বছর ধরে এলাকার রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত। আশা করি, দল তাকে মনোনয়ন দিয়ে নেতাকর্মীদের প্রত্যাশা পূরণ করবে। সুষ্ঠু ভোট হলে ধানের শীষ বিপুল ভোটে জয়লাভ করবে।
বাহাউদ্দিন সাদী বলেন, একাদশ সংসদ নির্বাচনে এ আসন থেকে প্রথমে বিএনপির মনোনয়নের চিঠি পেয়েছিলাম। এবারও আশা করি পাব। দলের মনোনয়ন পেলে আসনটি পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করব।