ডিএসসিসির সড়কে ব্যাটারি ও ইঞ্জিনচালিত রিকশা-ভ্যান চলাচল নিষিদ্ধ

ব্যাটারিচালিত রিকশা-ভ্যানসহ অযান্ত্রিক যানবাহনে মোটর-ব্যাটারি-ইঞ্জিন সংযোজন করে ‘যান্ত্রিক’ বানানো যানবাহনগুলো ডিএসসিসি’র সড়কে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এধরনের ইঞ্জিনচালিত রিকশা বা যানবাহন সড়কে পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ার করেছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস।

রবিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) সকালে নগর ভবন প্রাঙ্গণে রিকশা, ভ্যান, ঠেলা গাড়ি, টালি গাড়ি ও ঘোড়ার গাড়ি নিবন্ধন, নবায়ন ও মালিকানা পরিবর্তন কার্যক্রমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ডিএসসিসি ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস একথা বলেন।

ডিএসসিসি মেয়র বলেন, ঢাকা শহরকে অনেক কবি সাহিত্যিক ‘সিটি অব রিকশা বা রিকশার নগরী’ বলে চিত্রিত করেছেন। এটা আমাদের ঐতিহ্য। রিকশাসহ আমাদের যে ধীরগতির অযান্ত্রিক যানবাহনগুলো রয়েছে, সেগুলোকে নতুন করে আমরা নিবন্ধন ও নবায়নের আওতায় আনছি। এর মাধ্যমে সড়কে শৃঙ্খলা আনা আমাদের মূল উদ্দেশ্য।

তিনি বলেন, নিবন্ধন ছাড়া আর কোন যানবাহনকে ঢাকা শহরে চলাচল করতে দেওয়া হবে না। এরই মাঝে ডিএসসিসি এলাকার সড়কগুলোতে যানবাহনের কার্যকারিতা নিরুপণের কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। এর ফলে কোন সড়কে ধীরগতির যানবাহন চলবে, কোন সড়কে দ্রুতগতির যানবাহন চলাচল করবে, এগুলো আমরা নির্ণয় করব। এই নিবন্ধন কার্যক্রমের মাধ্যমে ধীর গতির যানবাহনগুলো নিবন্ধনের আওতায় আসবে।

শেখ তাপস বলেন, এটা শুধু নিবন্ধন কার্যক্রমই নয়। এই কার্যক্রম নির্বাচনী ইশতেহারে বর্ণিত সচল ঢাকা গড়তে পরিকল্পনার প্রথম ধাপ। সুনির্দিষ্টভাবে অযান্ত্রিক যানবাহনগুলোকে নিবন্ধনের আওতায় এনে আমরা তাদের সড়ক নির্ধারণ করে দেবো এবং চালকদেরও আমরা নিবন্ধনের আওতায় আনব। এর ফলে অযান্ত্রিক যানবাহনগুলো সুশৃঙ্খলভাবে যাতায়াত ব্যবস্থার আওতায় আসবে।

রিকশাসহ অযান্ত্রিক যানবাহনগুলোকে নিবন্ধন দেয়ার মাধ্যমে যানজট নিরসনে ইতিবাচক ভূমিকার চাইতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে কি না— সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে ডিএসসিসি মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, আমার নির্বাচনী ইশতেহারে সচল ঢাকা গড়ার যে রূপরেখা আমি দিয়েছি, সে পরিকল্পনায় যেমনি দ্রুতগতির যানবাহন থাকবে তেমনি ধীরগতির অযান্ত্রিক যানবাহনও থাকবে বলে উল্লেখ করেছি। এই ঢাকা শহরের দীর্ঘ তিন দশকেরও বেশি সময় রিকশা ও অযান্ত্রিক যানবাহনের কোন নিবন্ধন দেয়া হয়নি। কিন্তু তাই বলে কি ঢাকায় রিকশা চলে না? বাস্তবতা হলো, ঢাকায় রিকশা চলে এবং সেগুলো সবই অবৈধভাবে চলে। আর নিবন্ধনের আওতায় আনা মানে অযান্ত্রিক যানবাহনকে নিয়ন্ত্রণের আওতায় আনা। আমরা এই কার্যক্রমের মাধ্যমে সুনির্দিষ্ট সংখ্যক রিকশা-ভ্যান তথা অযান্ত্রিক যানবাহনকে নিবন্ধন প্রদান করবো।

ডিএসসিসির প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা আরিফুল হকের সঞ্চালনায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এবিএম আমিন উল্লাহ নূরী এ সময়ম অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা এয়ার কমডোর মো. বদরুল আমিন, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (ডা.) শরীফ আহমেদ, প্রধান প্রকৌশলী রেজাউর রহমান, ডিএসসিসি সচিব আকরামুজ্জামান, আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তাগণ এবং করপোরেশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, ডিএসসিসি’র আওতাধীন এলাকায় অযান্ত্রিক যানবাহন নিবন্ধন, নবায়ন ও মালিকানা পরিবর্তনের জন্য করপোরেশন ইতোমধ্যে এক গণবিজ্ঞপ্তি প্রচার করেছে। আগ্রহী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান আজ ১৩ সেপ্টেম্বর হতে আগামি ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২০ তারিখ পর্যন্ত নগর ভবনের ভাণ্ডার ও ক্রয় বিভাগ এবং আঞ্চলিক কার্যালয়গুলোর দফতর থেকে অফিস চলাকালে নিবন্ধন/নবায়ন/মালিকানা পরিবর্তনের জন্য ১০০ টাকার (অফেরতযোগ্য) বিনিময়ে আবেদনপত্র সংগ্রহ ও জমা দিতে পারবেন। গৃহীত আবেদনগুলো যাচাই-বাছাই করে যোগ্য বিবেচিত হওয়া আবেদনগুলোর অনুকূলে নির্ধারিত ফি জমাদান সাপেক্ষে নিবন্ধন প্রদান করা হবে। প্রকাশিত গণবিজ্ঞপ্তি অনুসারে আজ থেকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এলাকায় মোটর, যন্ত্র, ইঞ্জিন ও ব্যাটারিচালিত রিক্সা-ভ্যান চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ ধরণের যানবাহন নিবন্ধন প্রদান করা হবে না এবং এই ধরণের সকল অবৈধ যানবাহনের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।