বীরকন্যা প্রীতিলতার ৮৮ তম আত্মাহুতি দিবস উপলক্ষে শোষণমুক্তির লড়াই ও নারীর মর্যাদা প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম বেগবান করার আহ্বানে সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরামের উদ্যোগে মানববন্ধন ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
বৃহস্পতিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরের দিকে জাতীয় প্রেস-ক্লাবের সামনে মহিলা ফোরামের মানববন্ধন ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
মুক্তা বাড়ৈ এর সঞ্চালনায় ও রুখশানা আফরোজ আশার সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম ঢাকা নগরের সংগঠক সুস্মিতা মরিয়ম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী লাবণী বন্যা, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আল কাদেরী জয় এবং বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ ঢাকা মহানগর শাখার এর সদস্য সচিব জুলফিকার আলী।
সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন, প্রীতিলতা ১৯৩২ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর রাতে মাত্র ৭ জন সঙ্গী নিয়ে আক্রমণ করেন পাহাড়তলীর ইউরোপিয়ান ক্লাব। দাম্ভিক ব্রিটিশেরা যেখানে সাইনবোর্ডে লিখে দিয়েছিল ‘কুকুর ও ভারতীয়দের প্রবেশ নিষেধ’। সফল আক্রমণ শেষে ফেরার পথে গুলিবিদ্ধ হন তিনি। জীবিত ধরা না পড়ার পূর্ব পরিকল্পনায় অবিচল থেকে তিনি পটাশিয়াম সায়ানাইড পান করে আত্মাহুতি দেন।
নেতৃবৃন্দ জানান, ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সূর্য অস্তমিত করা ও স্বাধীনতা সংগ্রামে পুরুষের পাশে নারীরাও লড়াই করতে পারেন এ চেতনা জাগাবার জন্যে মাস্টারদা বেছে নিয়েছিলেন প্রীতিলতাকে। প্রীতিলতাও মাস্টারদা সূর্যসেনের নেতৃত্বে গ্রহণ করেছিলেন জীবন দিয়ে জীবন জাগাবার মন্ত্র ‘do or die’। মাত্র একুশ বছরের সংক্ষিপ্ত জীবনে জাগিয়ে তুলেছিলেন ভারতবাসীকে, ত্বরান্বিত করেছিলেন স্বাধীনতা আন্দোলন, নারীদের সম্পর্কে সমাজের সংস্কারে করেছিলেন প্রচণ্ড আঘাত।
ইতিহাসের সংগ্রামী চেতনা, অতীতের বড় চরিত্র বর্তমান সংগ্রামে পথনির্দেশ করে। প্রীতিলতাসহ অগ্নিযুগের অগ্নি সন্তানেরা নতুন প্রজন্মকে সংগ্রামী মানুষ হতে শেখায়, অন্যায় করা নয়, অন্যায় মুখ বুজে সহ্য করা নয়, অন্যায়কে রুখে দিতে শেখায়।
আজ থেকে ৮৭ বছর আগে প্রীতিলতা যে স্বাধীনতা, শোষণমুক্তি ও সাম্রাজ্যবাদী শৃংখল মুক্তির জন্য নির্ভীক চিত্তে জীবন দিয়েছিলেন, বাংলাদেশে স্বাধীনতার ৪৯ বছর পরও মানুষ পুঁজিবাদী-সাম্রাজ্যবাদী শোষণ লুণ্ঠনের যাঁতাকলে পিষ্ট হচ্ছে, দেশের সকল প্রতিষ্ঠান দুর্নীতি-দখলদারিত্ব-দলীয়করণে নিমজ্জিত, নারী-শিশু নির্যাতন-ধর্ষণ-হত্যা বেড়েই চলেছে, মানুষের
জীবনের নিরাপত্তা নেই, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম আকাশ ছোঁয়া, শিক্ষা-চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করতে হিমসিম খাচ্ছেন অভিভাবকরা, বেকার সমস্যা ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। এমন দেশ পাওয়ার জন্য কি প্রীতিলতা আত্মাহুতি দিয়েছিলেন? এখনকার তরুণ প্রজন্মের দায়িত্ব হল একে পাল্টানোর জন্য লড়াই করা।