সরকারি মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের মূল পরিকল্পনাকারী মেশিনম্যানকে রাজধানীর বনশ্রী এলাকা থেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর মালিবাগে সিআইডির প্রধান কার্যালয়ে এক প্রেসব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার আশরাফুল আলম।
সিআইডির উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এসময় উপস্থিত ছিলেন।
আশরাফুল আলম বলেন, সোমবার দিবাগত রাতে রাজধানীর বনশ্রী এলাকার জি-ব্লকের একটি বাসায় অভিযান চালিয়ে আব্দুস সালামকে গ্রেফতার করা হয়। তার বাড়ি মানিকগঞ্জ জেলায়। ২০১৫ সালে তার নামে একটি হত্যা মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করায় তাকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
সিআইডি জানিয়েছে, এ চক্রের মূল মাস্টারমাইন্ড হলো স্বাস্থ্য শিক্ষা ব্যুরোর মেশিনম্যান আব্দুস সালাম। এই চক্রটি ২০১৩ ও ২০১৫ সালের সরকারি মেডিকেল ও ডেন্টালের প্রশ্নপত্র ফাঁস করেছিল।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আব্দুস সালাম জানায়, এই চক্রের সঙ্গে পাঁচ-ছয় জন অসাধু চিকিৎসক এবং তিন-চারটি কোচিং সেন্টার জড়িত আছে।
সিআইডি’র এ কর্মকর্তা আরো বলেন, গত ১৯ জুলাই মিরপুরের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে মেডিকেলের প্রশ্নপত্র ছড়িয়ে দেওয়ার মাস্টারমাইন্ড জসিম উদ্দিন এবং তার সহযোগি জাকির হোসেন দিপু ও পারভেজ খানকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর (২০ জুলাই) মিরপুর মডেল থানায় মামলা করে সিআইডি সাইবার পুলিশ। তদন্তকালে প্রশ্ন ফাঁস চক্রের সঙ্গে জড়িত আরও সাত জনকে গ্রেফতার করা হয়। আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে উঠে আসে মূল মাস্টারমাইন্ড স্বাস্থ্য শিক্ষা ব্যুরোর মেশিনম্যান আব্দুস সালামের নাম।
বিশেষ পুলিশ সুপার আশরাফুল আলম বলেন, স্বাস্থ্য শিক্ষা বোর্ডের মেশিনম্যান আব্দুস সালাম ছাপার কাজ করার সময় কৌশলে একটি প্রশ্ন সরিয়ে ফেলে। পরবর্তীতে তার খালাতো ভাই প্রশ্ন ছড়ানোর আরেক মাস্টারমাইন্ড জসিম উদ্দিন টাকার বিনিময়ে একটি বড় চক্রের মাধ্যমে মেডিকেলে ভর্তি হতে ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের কাছে প্রশ্নপত্র ছড়িয়ে দেয়।
সিআইডির এ কর্মকর্তা জানান, ২০১৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়ে ঢাবি কর্তৃপক্ষের দায়েরকৃত মামলার তদন্ত করতে গিয়ে সরকারি মেডিকেল ও ডেন্টাল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসচক্রের সন্ধান পায় সাইবার পুলিশ। ঢাবি ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িত এস এম সানোয়ার হোসেনকে গ্রেফতারের পর সরকারি মেডিকেল ও ডেন্টাল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসে।
তিনি বলেন, জসিমের ৩৮টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট আছে। তার কাছ থেকে দুই কোটি ৩০ লাখ টাকার চেক, দুই কোটি ২৭ লাখ টাকা সঞ্চয়পত্র এবং তার সহযোগি পারভেজের কাছ থেকে ৮৪ লাখ টাকার চেক উদ্ধার করা হয়েছে।
এছাড়া জসিমের স্ত্রী শিল্পীরও ১৪টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের সন্ধান পেয়েছে সিআইডি। তার ব্যাংকেও তিন কোটি ১৮ লাখ টাকা জমা আছে।
গ্রেফতার সালামের সম্পদ সম্পর্কে জানতে চাইলে আশরাফুল আলম বলেন, তার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা নেই বললেই চলে। তার নেশা হলো জমি কেনা। তিনি কী পরিমাণ জমির মালিক তা জানার চেষ্টা চলছে।
আশরাফুল আলম আরও জানান, স্বাস্থ্য শিক্ষা ব্যুরোর মেশিনম্যান সালামের ১০ দিনের রিমন্ডের আবেদন করা হবে। রিমান্ডে এনে তার কাছ থেকে আরও বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যাবে বলে মনে করেন এ বিশেষ পুলিশ সুপার।- বাসস