ধর্ষণ আইন সংশোধনের দাবি জানিয়ে বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আনিসুল হকের নিকট স্মারকলিপি প্রদান করে বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রী। বুধবার সকাল ১১টায় ধর্ষণ আইন সংশোধনের দাবিতে ঢাকাস্থ জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ শেষে স্মারকলিপি জমা দেন দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা।
সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি ফারুক আহমেদ রুবেল এবং সাধারণ সম্পাদক কাজী আব্দুল মোতালেব জুয়েলে সঞ্চালনায় সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় সহসভাপতি অতুলন দাস আলো, সাহিত্য, সাংস্কৃতিক ও ক্রিড়া সম্পাদক অদিতি আদৃতা সৃষ্টি, ঢাকা মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক তানভীন আহমেদ প্রমুখ।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, “সর্বাঙ্গে ব্যাথা মলম দিবেন কোথা”-এই চিন্তাতে ডুবে থাকতে তীরে গিয়ে যে সরকারের তরী ডুবে যাবে তা হয়ত সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের
দায়িত্বে থাকা মানুষগুলো বুঝতে পারছে না। বিচারহীনতা, আইনে শুভঙ্করের ফাঁকি ধর্ষকদের রক্ষাকবচে পরিনত হয়েছে। দেশের অর্ধেক জনগোষ্ঠী অনিরাপদ রেখে লুটপাট আর ক্ষমতার সুখে বিভোর থাকার পরিনতি যে কত ভয়ঙ্কর তা দায়িত্বশীল না সরকার ঠিক বুঝতে পারবে। সরকারের যদি জনগণের প্রতি নূন্যতম দায়বোধ থাকে তবে দেশে চলমান ধারাবাহিক ধর্ষণ ও নারী নির্যাতন প্রতিরোধে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। অত্যাবশ্যকীভাবে ধর্ষণ আইনকে সংশোধন করে ১ মাসের মধ্যে প্রতিটি ধর্ষণ মামলার বিচারকার্য সম্পন্ন করতে হবে।”
স্মারকলিপিতে সংগঠনটি ধর্ষন আইন সংশোধনের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা তুলে ধরে
এবং সেগুলো হচ্ছে-
১. আইন সংশোধনের ক্ষেত্রে প্রথমেই ধর্ষণের পশ্চাৎপদ প্রচলিত সংজ্ঞা পরিবর্তন করে ধর্ষণের শিকার যেকোন পেশা, বৈবাহিক অবস্থা, লিঙ্গ, ধর্ম, বর্ণ, গোত্র, জাতিসত্তা বা
প্রতিবন্ধীতার বিচারের বিষয়ে অস্পষ্টতা দূর করতে হবে।
২. ধর্ষণ মামলায় ভাষা, শ্রবণ এবং বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সাক্ষ্য দেওয়ার সুযোগ,
ভিকটিমের বয়স ও মানসিক স্বাস্থ্য বিবেচনায় কাউন্সিলিং সুবিধা, ভিকটিম ও সাক্ষীর
নিরাপত্তা, প্রয়োজনে পুলিশ দিয়ে সাক্ষীর উপস্থিতি নিশ্চিত করা, ডিএনএ’র নমুনা
সংগ্রহের সময়সীমা নির্ধারণ ও রিপোর্ট প্রদানকারীর সাক্ষ্যের বিধান রাখতে হবে।
৩. বিচারক, আইনজীবী, ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ ও সমাজকর্মীদের জন্য আইন সম্পর্কে
নিয়মিত প্রশিক্ষনের বিধান ও গাইডলাইনের ওপর আইনে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন
করতে হবে।
৪. ফরেনসিক চিকিৎসক ও পুলিশের অসত্য প্রতিবেদন দাখিলে শাস্তির বিধান, ভিকটিমের
মামলা পরিচালনার খরচ ও ক্ষতিপূরণ সুবিধা নিশ্চিত করা, বৈবাহিক ধর্ষণ, হিজড়া,
আদিবাসী বা প্রতিবন্ধীদের ধর্ষণের বিচার নিশ্চিতের জন্যও আইনে সুনির্দিষ্ট বিধান
উল্লেখ করতে হবে।
৫. ইতোমধ্যে ধর্ষণের বিচার ও বিচার প্রক্রিয়ায় অস্পষ্টতা থাকায় বিভিন্ন মামলার সূূত্র ধরে
সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগ যেসকল রায় ও আদেশ দিয়েছেন
তা আইন সংশোধনের ক্ষেত্রে আমলে নিতে হবে।
৬. বিচার বিভাগ ও তদন্ত বিভাগের সমন্বয় নিশ্চিত করতে নীতিমালা প্রনয়ন করতে হবে।
৭. ব্রিটিশ আমলে ১৮৭২ সালে প্রণীত সাক্ষ্য আইনের ১৫৫ (৪) ধারা বাতিল করাসহ
সংশোধিত আইনে অভিযুক্তদের আগাম জামিনের সুযোগ রদ করে ধর্ষণের একমাত্র শাস্তি
মৃত্যুদন্ড করতে হবে।
এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রীর কেন্দ্রীয় সহসাধারণ সম্পাদক শাফিউর রহমান সজীব, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক তারিকুল ইসলাম, রাজনৈতিক শিক্ষা ও গবেষণা সম্পাদক ইয়াতুন্নেসা রুমা, দপ্তর সম্পাদক হাসিদুল ইসলাম ইমরান, ঢাকা মহানগর শাখার সহধারণ সম্পাদক হিশাম খান ফয়সাল, মহানগর সদস্য সুমাইয়া ঝরা, তামিম হাসান চন্দন ও আরশিসহ আরো অনেকে।