একুশে পদক প্রাপ্ত সাহিত্যিক রশীদ হায়দারের মৃত্যু

একুশে পদক প্রাপ্ত কথাসাহিত্যিক ও প্রথিতযশা গবেষক রশীদ হায়দার পরলোক গমন করেছেন (ইন্না…রাজিউন)। মঙ্গলবার সকাল ১০টায় রাজধানীর নিজ বাসায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স ছিল ৭৯ বছর।

রশীদ হায়দারের মেয়ে শাওন্তি হায়দার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

১৯৪১ সালের ১৫ জুলাই পাবনার দোহারপাড়ায় জন্ম রশীদ হায়দারের। তার পুরো নাম শেখ ফয়সাল আবদুর রশীদ মোহাম্মদ জিয়াউদ্দীন হায়দার, ডাকনাম দুলাল। তিনি ১৯৫৯ সালে গোপালগঞ্জ ইনস্টিটিউশন থেকে মাধ্যমিক ও ১৯৬১ সালে পাবনা এডওয়ার্ড কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন। ১৯৬৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি করেন।

১৯৬১ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবস্থায় রশীদ হায়দার জনপ্রিয় পত্রিকা চিত্রালীতে কাজ শুরু করেন। তার বড়ভাই জিয়া হায়দারও ওই পত্রিকায় কাজ করতেন।

১৯৬৪ সালে চিত্রালীর পাশাপাশি পাকিস্তান রাইটার্স গিল্ডের মুখপত্র পরিক্রম পত্রিকার সহকারী সম্পাদক হিসেবে কাজ করার সুযোগ পান।

১৯৭০ সালে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের ত্রৈমাসিক কৃষিঋণ পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে যোগদান করেন। দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭২ সালে তিনি বাংলা একাডেমিতে চাকরি পান। দীর্ঘদিন চাকরির পর ১৯৯৯ সালে বাংলা একাডেমির পরিচালকের পদ থেকে অবসর নেন। পরে নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ছিলেন।

বাংলা একাডেমিতে কর্মরত থাকাকালীন অবস্থায় তার শ্রেষ্ঠ কীর্তি ছিল মুক্তিযুদ্ধে স্বজন হারানো মানুষের স্মৃতিচারণা ১৩ খণ্ডের ‘স্মৃতি: ১৯৭১’।

১৯৬৭ সালে ১ জানুয়ারি প্রকাশ হয় রশীদ হায়দারের প্রথম গল্পগ্রন্থ ‘নানকুর বোধি’। ১৯৭২ সালে দৈনিক সংবাদ পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে লেখা শুরু করেন জীবনের প্রথম উপন্যাস ‘গন্তব্যে’। অর্ধেক মুদ্রিত হওয়ার পর কোনো এক অজানা কারণে লেখাটি তিনি আর লিখে শেষ করতে পারেননি। তবে বেশ পরে এটি অন্য নামে প্রকাশ হয়।

১৯৭৪ সালে দিল্লিতে ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামায় তিন বছরের জন্য লেখাপড়ার সুযোগ পান। তিন মাস ক্লাস করার পর বাংলা একাডেমির চাকরি হারানোর ভয়ে তাকে ফিরে আসতে হয়।

১৯৬৪ সালে মুনীর চৌধুরীর পরিচালনায় তিনি অভিনয় করেন ‘ভ্রান্তিবিলাস’ নামে একটি নাটকে কিংকর চরিত্রে।

রশীদ হায়দার গল্প-উপন্যাস-নাটক-অনুবাদ-নিবন্ধ-স্মৃতিকথা ও সম্পাদনা সব মিলিয়ে ৭০ এর অধিক বই রচনা করেছেন। তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৮৪), একুশে পদক (২০১৪), হুমায়ুন কাদির পুরস্কার, অগ্রণী ব্যাংকসহ বিভিন্ন পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।

রশীদ হায়দারের প্রকাশিত গ্রন্থগুলোর মধ্যে রয়েছে- চিম্বুকের নিচে আলোর প্রভা, তিনটি প্রায়োপন্যাস, বাংলাদেশের খেলাধুলা, মুক্তিযুদ্ধের নির্বাচিত গল্প, শহীদ বুদ্ধিজীবী কোষাগ্রন্থ, সামান্য সঞ্চয় (নির্বাচিত গল্পসংকলন), স্মৃতি’৭১ (১৩ খন্ড), ১৯৭১ : ভয়াবহ অভিজ্ঞতা, শহীদ বুদ্ধিজীবী কোষ গ্রন্থ, খুঁজে ফিরি, অসম বৃক্ষ, নানকুর বোধি।