লাগামহীন নিত্যপণ্যের দাম, ভোক্তাদের ক্ষোভ

বাজারে আলু থেকে শুরু করে পেঁয়াজ, চাল, ডাল, মরিচ, ডিমসহ সব ধরনের সবজির দাম চওড়া। যা কিনা ভোক্তাদের মাঝে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে পেঁয়াজের মূল্য দ্বিগুণ, আগের সকল ইতিহাস ভেঙ্গে আলুর দাম ৫৫-৫৭ টাকা, ৫০ টাকার চাউল ৮০ টাকায় নিতে হচ্ছে। এক কথায় লাগামহীন নিত্যপণ্যের দাম।

ক্রেতারা বাজারে অস্বাভাবিক পরিস্থিতির বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করে লিখেন, দেশে সব থেকে সস্তা খাবার বা গরিবের খাবার সবাই মনে করত ভাতের সঙ্গে কাঁচামরিচ দিয়ে তৈরি আলুভর্তা। কিন্তু মনে হচ্ছে এই খাবার এখন বিলাসিতার স্থান দখল করেছে। কারণ এক কেজি মরিচ এখন ২৫০-২৮০ টাকার নিচে পাওয়া যাচ্ছে না। খুচরা বাজারে আলুর কেজিও প্রায় ৬০ টাকা। পাশাপাশি সব ধরনের চালের দাম বাড়তি। বিশেষ করে মোটা চাল এখন প্রতি কেজি ৫০-৫২ টাকায় কিনতে হচ্ছে। এতে মনে হচ্ছে, এই খাবার এখন আর গরিবের বললে খুব বেশি ভুল হবে। এটা এখন ধনীদের খাবার।

রাজধানীর মহাখালী কাচা বাজার ও কাওরান বাজার ঘুরে মঙ্গলবার খুচরা বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এদিন প্রতি কেজি আলু বিক্রি হয়েছে ৫০-৫৫ টাকা। যা এক মাস আগে বিক্রি হয়েছে ৪০ টাকা। এছাড়া গত বছর একই সময়ে এই আলু প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ২০-২২ টাকা। বাজারের খুচরা চাল বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতি কেজি মিনিকেট চাল বিক্রি হয়েছে ৫৬-৫৮ টাকা, ১৮ দিন আগে ছিল ৫৩-৫৪ টাকা। বিআর ২৮ চাল বিক্রি হয়েছে ৫৫ টাকা, ছিল ৪৬-৪৭ টাকা। মোটা চালের মধ্যে স্বর্ণা জাতের চাল প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ৫০-৫২ টাকা, ছিল ৪০-৪২ টাকা।

পাশাপাশি রাজধানীর খুচরা বাজারে খোঁজ নিয়ে আরও জানা গেছে, ৫ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন কোম্পানিভেদে সর্বোচ্চ ৫২০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। যা সাত দিন আগে ছিল সর্বোচ্চ ৫১৫ টাকা। প্রতি লিটার পাম অয়েল (সুপার) বিক্রি হয়েছে ৯০ টাকা। যা এক মাস আগে ছিল ৭০ টাকা। প্রতি কেজি আমদানি করা আদা বিক্রি হয়েছে ২৮০ টাকা। যা সাত দিন আগে ছিল ১৬০ টাকা। দেশি আদা প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ১৬০ টাকা। যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ১৪০-১৫০ টাকা। এছাড়া খুচরা বাজারে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৯০-১০০ টাকা। যা সাত দিন আগে ছিল ৮৫-৯০ টাকা। এবং আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৭০-৮০ টাকা। যা সাত দিন আগে ৬৫-৭০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে নিত্যপণ্য কিনতে এক গৃহিণী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সব পণ্যের দাম বাড়ানো হয়েছে। এই দাম বাড়ার পেছনে কি কোনো যৌক্তিক কারণ আছে? যে যেভাবে পারছে ভোক্তার পকেট কাটছে। এসব বিষয়ে যে বা যারা তদারকি করবে সবাই নাকে তেল দিয়ে ঘুমাচ্ছে। এ সুযোগে অসাধুরা একটি একটি করে সব ধরনের পণ্যের দাম বাড়াচ্ছে।

কনসাস কনজুমার্স সোসাইটির (সিসিএস) নির্বাহী পরিচালক পলাশ মাহমুদ বলেন, যে কোনো অজুহাতে ব্যবসায়ীরা পণ্যের দাম বাড়াচ্ছে। সিন্ডিকেট করে কোনো যৌক্তিক কারণ ছাড়াই প্রতি সপ্তাহে একটি একটি করে প্রায় সবগুলো পণ্যের দাম বাড়ানো হয়েছে। ফলে একসঙ্গে সব ধরনের পণ্যে বাড়তি দর গুনতে ভোক্তার ওপর বেশ চাপ পড়ছে। যে কারণে ভোক্তারা পণ্য কিনতে এসে দিশেহারা হয়ে পড়ছেন। তাই সরকারসংশ্লিষ্টদের উচিত কঠোরভাবে বাজার তদারকি করে দাম নিয়ন্ত্রণে আনা। এতে ভোক্তার একটু হলেও স্বস্তি মিলবে।

জানতে চাইলে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক মো. আবদুল জব্বার মণ্ডল বলেন, বাজারে অধিদফতরের একাধিক টিম তদারকি করছে। পাশাপশি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তদারকি টিমও কাজ করছে। নিত্যপণ্যের দাম কমিয়ে আনতে অধিদফতরের মহাপরিচালকের নির্দেশে মনিটরিং জোরদার করা হয়েছে। তদারকিকালে কোনো অনিয়ম পেলে সঙ্গে সঙ্গে অসাধুদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। কাউকেই ছাড় দেয়া হচ্ছে না।