প্রধানমন্ত্রী নিরাপদ সড়ক নিশ্চিতে জনসাধারণকে যত্রতত্র রাস্তা পারাপার বন্ধের আহ্বান জানিয়ে ট্রাফিক আইন মেনে চলারও পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন সড়কে শৃংখলা ফেরাতে চালকদের ডোপ করানোর ব্যবস্থা নিতে ও নির্দেশ দেন।
বৃহস্পতিবার জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস-২০২০ উদযাপনের অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে এ কথা বলেন তিনি।
চালকদের ডোপ টেস্ট করানোর প্রতি গুরুত্ব দিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, যারা গাড়ি চালাচ্ছেন, তারা মাদক সেবন করেন কিনা সেদিকে নজর রেখে তাদের ডোপ টেস্ট করা হবে। প্রত্যেকটি ড্রাইভারের এই পরীক্ষাটা একান্তভাবে অপরিহার্য। সেটি নিশ্চিত করতে হবে।
পথচারীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আমরা শুধু ড্রাইভারদের কথা বলি, ড্রাইভারদের দোষ দিই। পথচারীদেরও সচেতন থাকতে হবে।
‘আমরা মুখে খুব বলেটলে যাই, কিন্তু কাজের বেলা আমরা কী দেখি? পাশেই ফুটওভার ব্রিজ, রাস্তার মধ্যখান দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে। একটা গাড়ি আসছে একটু হাত দেখিয়েই হাঁটা দিল। এটি একটি যান্ত্রিক ব্যাপার। ব্রেক কষলেও সেটি থামতে কিন্তু কিছু সময় লাগে। হাত দেখালেই থেমে যেতে পারে না। সে কথাটায় সবাইকে সচেতন করতে হবে। সেটি প্রচার করতে হবে, বলতেও হবে, মানুষকে জানাতে হবে।’
গাড়িচালকদের দোষ দেয়ার প্রবণতার কথা তুলে ধরে সরকারপ্রধান বলেন, কেন ড্রাইভারকে দোষ দেব? দোষ তো ওই মায়ের, যে বাচ্চাকে নিয়ে যাচ্ছে বা আরেকজন বাবা দেখলাম বুকের মধ্যে বাচ্চাকে নিয়ে যেখানে রাস্তায় গ্রিল দেয়া… গ্রিলের ওপরে শার্প ইয়ে দেয়া, সেটি পার হয়ে যাচ্ছে। একটু পা পিছলালে ওই শার্প নেইলটাতে বাচ্চা একদম ফুটো হয়ে যাবে।
তিনি বলেন, কাকে দোষ দেবে? সড়কের দোষ, সরকারের দোষ, আন্দোলন হবে সরকারের বিরুদ্ধে, সরকারের পদত্যাগ চাইবে; কিন্তু দোষটা কার সেটি আর দেখবে না। এসব বিষয়ে নাগরিক সচেতনতা আমাদের দেশে খুব বেশি প্রয়োজন বলে আমি মনে করি।
চালকদের প্রয়োজনীয় বিশ্রাম নিশ্চিত করার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘প্রাইভেট সেক্টর বা সরকারি… সবাইকে বলব আপনারা যদি স্পট ঠিক করে রাখেন, এই ড্রাইভারটা এত মাইল চলবে, তার পর সে সেখানে বিশ্রাম নেবে। ওখানে অলটারনেটিভ ড্রাইভার থাকবে। এইভাবে যদি আমরা ব্যবস্থা করতে পারি আমাদের দুর্ঘটনা আরও কমে যাবে।’
প্রধানমন্ত্রী জনগণকে আইন নিজের হাতে তুলে না নিতে আহ্বান জানান। তিনি দুর্ঘটনার শিকার হলে বা কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে চালকদের লাঞ্ছিত করা বা যানবাহনে হামলা চালানোর মানসিকতা বর্জন করার জন্য আহ্বান জানান। কারণ এটি অনেক ক্ষেত্রেই আরও দুর্ঘটনার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
গাড়িচালকদের ওপর হামলার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মারতে মারতে মেরেই ফেলে দিল। কিন্তু বিচার করল না যে কার দোষে অ্যাকসিডেন্টটা হলো। বেচারা ড্রাইভার জীবনটা দিল কিন্তু এর ফলটা কী দাঁড়াচ্ছে… ফলটা এই দাঁড়াচ্ছে যে, একজন হয়তো ধাক্কা খেয়ে পড়ে গেল। মার খাওয়ার ভয়ে, প্রাণের ভয়ে ড্রাইভার কিন্তু গাড়ি চালিয়ে গেল। তার ওপর দিয়ে যদি গাড়ি না যায় সে কিন্তু বেঁচে যায়। কিন্তু যেহেতু ড্রাইভারের ওপর আক্রমণ হবে, যেহেতু ড্রাইভারকে মার খেতে হবে পাবলিকের, সে জন্য ড্রাইভার আর কিছু তখন দেখে না। সোজা গাড়ি চালায়।
চালকদের ওপর হাত না তোলার অনুরোধ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কেউ গাড়িচালকদের আক্রমণ করবেন না। যদি ড্রাইভারের দোষ হয়, আইন আছে। আইন তার ব্যবস্থা নেবে। কিন্তু আইন কেউ হাতে তুলে নেবেন না। এই আইন হাতে তুলে নেয়ার কারণে অনেক মানুষ কিন্তু মারা যায়। তাদের এ ব্যাপারে জনসচেতনতা তৈরির আহ্বানও জানান তিনি।
সরকার ৬০০ নতুন বাস, ৫০০ নতুন ট্রাক বিআরটিসিতে সংযোজনের পাশাপাশি ৬২৯টি দোতলা বাস এবং ২৮৭টি এসি বাসের মাধ্যমে নাগরিকদের সুবিধা নিশ্চিত করছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ভার্চুয়াল প্ল্যাটফরমের মাধ্যমে সংযুক্ত ছিলেন।
গণভবন প্রান্ত থেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিমসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।