উপমহাদেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলোর মধ্যে ‘৭০ সালের ঘূর্ণিঝড়ে স্মরণকালের মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল। প্রলয়ঙ্করী ওই ঝড়ে প্রায় ১০ লাখ মানুষ প্রাণ হারায়। দেশ ও জনসাধারণকে রক্ষায় উপকূলের সুরক্ষা ও মানুষের জীবনমান উন্নয়নে সরকারের ব্যাপকভিত্তিক কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা দরকার।
বৃহস্পতিবার (১২ নভেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ভয়াল ১২ নভেম্বর স্মরণে “জলোচ্ছাস-আইলা, সেতারা-সিডরে ক্ষতি থেকে রক্ষায় টেকনাফ থেকে সাতক্ষীরা পর্যন্ত বেড়ীবাঁধ নির্মানের দাবীতে” বাংলাদেশ জাতীয় গণতান্ত্রিক লীগ আয়োজিত মানবন্ধন কর্মসূচীতে বক্ততারা এসব মন্তব্য করেন।
সংহতি প্রকাশ করে বাংলাদেশ ন্যাপ মহাসচিব এম. গোলাম মোস্তফা ভুইয়া বলেন, ১৯৭০ সালের ১২ নভেম্বর ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ের পর ত্রাণকাজে পাকিস্তান সরকারের অমার্জনীয় অবজ্ঞা ও অবহেলার জন্য যেসব জননেতা প্রচন্ড প্রতিবাদ জানান, মজলুম জননেতা মাওলানা ভাসানী ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন তাঁদের অগ্রগামী। মওলানা ভাসানী শুধু পাকিস্তান সরকারের ত্রাণকাজে ব্যর্থতার প্রতিবাদ করেননি, তিনি এ অবজ্ঞাকে পূর্ব পাকিস্তানের সাথে বৈষম্যমূলক ব্যবহারের আরেকটা নজির হিসেবে উল্লেখ করেন। ঘূর্ণিঝড়ের পর মাওলানা ভাসানী উপদ্রæত এলাকা সফর করেন এবং বিভিন্ন অঞ্চলে জনসভায় ভাষন দেন। এবং পাকিস্তানী শাসদের কবল থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীন পূর্ব বাংলা প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানান।
তিনি আরো বলেন, জাতিসংঘের বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা (ডবলিউএমও) বিশ্বের পাঁচ ধরনের ভয়াবহ প্রাণঘাতি আবহাওয়া ঘটনার শীর্ষ তালিকা স্থান পায় এই ঘূর্ণিঝড়। ১২ নভেম্বর ১৯৭০ সালে বৃহত্তর বরিশাল ও নোয়াখালীতে জলোচ্ছ্বাসে ১০ লক্ষ লোক মারা যায়। জলোচ্ছাসের ঐ অঞ্চলের যে ধন সম্পদের ক্ষতি হয়েছিল। আজ ৫১ বৎসরেও তা পূরণ হয় নাই। যে পরিবারের ঘর বাড়ী ফসল গরু ছাগল হাস-মুরগী মাছসহ স্থাবর সম্পদ ছিল সেগুলো ধ্বংস হয়েছে সেই পরিবেশের বা সে রকম আজ পর্যন্ত করতে পারে নাই।
সভাপতির বক্তব্যে এম এ জলিল বলেন, বাংলাদেশের সর্বস্তরের মানুষের জান-মাল রক্ষা ও উন্নত পরিবেশের বাংলাদেশ গড়তে হলে জলোচ্ছ্বাস বন্যা ও নদী ভাঙন এই তিনটি সমস্যার জন্য পরিকল্পনা গ্রহণ করুন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরতœ শেখ হাসিনার কাছে বাংলাদেশের জনগণের আহ্বান।
তিনি বলেন, ভয়াবহ অবস্থার মধ্যেও বৃহত্তর বরিশালবাসী ৭০ এ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে ভোট দিয়ে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে সরকার প্রতিষ্ঠার জন্যও বাঙালিদের অধিকার প্রতিষ্ঠা পাবে সেই স্বপ্ন দেখেছিল। ৭০ সালে বঙ্গবন্ধু ভোলায় ক্ষতিগ্রস্থ লোকদেরকে বলেছিলেন পাকিস্তানের শাসক গোষ্ঠী আপনাদের জন্য কিছুই করবে না শুধু শোষণ শাসন নির্যাতন ছাড়া। আমি নির্বাচনের পর সরকার করার মাধ্যমে জল্লোচ্ছাসের ব্যাপারে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। কিন্তু বাঙালি জাতি দুর্ভাগ্য দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু মাত্র সাড়ে তিন বছর দেশ পরিচালনা করেছেন।
বাংলাদেশ জাতীয় গণতান্ত্রিক লীগ সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা এম এ জলিলের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে আরো বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ন্যাপ মহাসচিব এম. গোলাম মোস্তফা ভুইয়া, ন্যাপ-ভাসানী সভাপতি মোসতাক আহমেদ, গণঅধিকার পার্টির সভাপতি হোসেন মোল্লা, বনজারভেটিব পার্টির সভাপতি আনিচুর রহমান দেশ, লোকশক্তি পার্টির সভাপতি শাহিকুল ইসলাম টিটু, বাংলাদেশ জাসদ নেতা হুমায়ূন কবির, বরিশাল বিভাগ সমিতির যুগ্ম সম্পাদক আ স ম মোস্তফা কামাল, নির্বাহী সদস্য মো. শহীদুননবী ডাবলু, নারী নেত্রী এলিজা রহমান প্রমুখ।