একইদিনে ১২টি বাসে সিরিজ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণের মাধ্যমে জড়িতদের একাংশের চেহারা চিহ্নিত করেছেন পুলিশ। এদের মদ্যে কয়েকজনের নাম পরিচয় পাওয়া গিয়েছে এবং তাদের গ্রেফতারের চেষ্ট চলছে। ফুটেজ থেকে নেয়া ছবি, ফেসবুকে লাইভ ভিডিও ও পারিপার্শ্বিক অবস্থান দেখে অন্য দুষ্কৃতকারীদের তথ্য সংগ্রহ হচ্ছে।
এদিকে বাসে নাশকতাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। শনিবার দুপুরে নিজ বাসভবনে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন। পুলিশ জানিয়েছে, অগ্নিকাণ্ডে ১৬টি মামলার আসামিদের ওপর বিশেষ নজর রাখা হয়েছে। কয়েকটি ঘটনাস্থলের স্পষ্ট ফুটেজ পাওয়া যায়নি। ফলে ওইসব স্থানের আশপাশের ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। পরনের কাপড়ের রং, দেহের গড়ন ও হাঁটাচলার ধরন দেখে পৃথক ফুটেজ থেকে নেয়া ছবি মিলিয়ে চলছে আসামি শনাক্তের কাজ। যেসব স্থানে সরাসরি অগ্নিসংযোগের ছবি ও ভিডিও পাওয়া গেছে তাদের ধরতে গোয়েন্দা তৎপরতা অব্যাহত। ইতোমধ্যে এমন কয়েকজন আটকও হয়েছে। অতি দ্রুতই অগ্নিসন্ত্রাসের পরিকল্পনাকারীদের পাশাপাশি সরাসরি জড়িত আরও বেশ কয়েকজন গ্রেফতার হতে পারেন বলে জানা গেছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, নির্বাচনে পরাজিত হলেই বিএনপি নাশকতার অপচেষ্টা করে। কিন্তু কোনো জায়গায়ই তারা সাকসেসফুল (সফল) হয়নি। এবারই কয়েকটি বাসে এরা অগ্নিসংযোগ করেছে। আমরা এটার ব্যবস্থা নিচ্ছি। যারা এই কাজে সম্পৃক্ত ছিল, যারা এই অগ্নিসংযোগ করেছে, তাদের সবাইকে আইনের মুখোমুখি হতে হবে। অপতৎপরতা দমনে সরকার সবকিছু করবে। ভিডিও ফুটেজের মাধ্যমে বেশ কয়েকজনকে আমরা চিহ্নিত করেছি।
পল্টন থানার একটি সূত্র জানায়, নাইটেঙ্গেল মোড় থেকে কিছুটা দূরে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় জড়িত একজনের নাম-পরিচয় শনাক্ত করা গেছে। সে একটি রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ পদে আছে। গায়ে লাল জামা, পরনে জিন্স প্যান্ট ও মাথায় নীল ক্যাপ পরে পার্কিং করা একটি বাসে অগ্নিসংযোগ করেছিল সে। পুলিশ তার খোঁজে রয়েছে। তার সঙ্গে সরাসরি আগুন দিয়েছে এমন আরেকজন পেস্ট রংয়ের একটি শার্ট পরা ছিল। তারও বিষয়েও গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য পাওয়া গেছে। এদের ধরতে পারলেই এই এলাকার অগ্নিসন্ত্রাসী ও মূলহোতাদের ধরা সম্ভব হবে বলে আশাবাদ পুলিশের।
বাসে আগুন দেয়ার ঘটনায় দায়েরকৃত মামলাগুলোর তদন্তে অগ্রগতি আছে বলে জানিয়েছে পুলিশ সূত্র। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (ক্রাইম) মো. শাহ আবিদ হোসেন বলেন, এই হামলা পরিকল্পিত। এটা খুবই জঘন্য একটি কাজ হয়েছে। মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। যে বাসগুলোতে আগুন দেয়া হয়েছে সেগুলোতে এক্সপ্লোসিভ (বিস্ফোরক) ব্যবহার হয়েছে। এগুলো স্পর্শকাতর। তিনি বলেন, এ ঘটনার পর পুলিশ বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করছে। এসব ঘটনায় দায়েরকৃত ১৬টি মামলা গুরুত্ব সহকারে তদন্ত হচ্ছে।
জানতে চাইলে পুলিশের মতিঝিল জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) জাহিদুল ইসলাম বলেন, সিসিটিভি ফুটেজ দেখে আসামি শনাক্তের চেষ্টা চলছে। ইতোমধ্যে বেশকিছু অগ্রগতিও হয়েছে। আশা করছি শিগগিরই এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে পারব। তিনি বলেন, হামলার ধরন দেখে মনে হয়েছে এটি পূর্বপরিকল্পিত। সে কারণে সরাসরি জড়িতদের বিষয়টি আমরা গুরুত্ব দিয়ে দেখছি। এতে এসব ঘটনায় জড়িত অন্যদের এবং মূলহোতাদের শনাক্ত করা সহজ হবে। বিস্ফোরকের উৎস ও সরবরাহ নিয়েও অনুসন্ধান অব্যাহত রয়েছে বলে জানান তিনি।
এর আগে বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত সর্বমোট ১২টি বাসে আগুন দেয়া হয়। দুপুর ১২টা থেকে বিকাল সাড়ে ৪টার মধ্যে রাজধানীতে একে একে ৯টি বাস পুড়িয়ে দেয়া হয়। বিকাল থেকে রাত পর্যন্ত আরও তিনটি বাসে আগুন দেয়া হয়। পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, দুপুর ১২টার দিকে নয়াপল্টনে পার্ক করে রাখা একটি সরকারি বাসে প্রথম আগুন দেয়া হয়। বিকাল সাড়ে ৪টায় ভাটারা এলাকায় আরেকটি বাসে কে বা কারা আগুন ধরিয়ে দেয়। সন্ধ্যা সাতটার দিকে উত্তরার আজমপুরে একটি বাসে আগুন দেয়া হয়। রাতে এয়ারপোর্ট ও খিলক্ষেত এলাকায় আরও দুটি বাসে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। এসব ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় গ্রেফতার ৩৫ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ডের আদেশ দেন আদালত। ঘটনার পর থেকেই আওয়ামী লীগ-বিএনপি একে অপরকে দোষারোপ করে আসছে।
ফলাফল মানতে পারেনি বলেই বিএনপি এমন করেছে- স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংবাদিকদের বলেছেন। যে ফলাফল মেনে নিতে পারেনি বলেই তারা (বিএনপি) এমনটি করেছে। যেখানেই তারা পরাজিত হয়েছে সেখানেই তারা নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চায়। যারা এ অগ্নিসংযোগ করেছিলেন, ভিডিও ফুটেজের মাধ্যমে কয়েকজনকে আমরা চিহ্নিত করেছি।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আসাদুজ্জামান খান বলেন, গোয়েন্দাদের ব্যর্থতা নেই। তাদের তৎপরতা চলছে বলেই এখন দেশ শান্তিতে রয়েছে। আমরা এতটুকু বলতে পারি দেশে আমরা কোনো অরাজক পরিস্থিতি হতে দেব না। সরকারি এজেন্টরা বাসে অগ্নিসংযোগ করেছে- বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের এই বক্তব্যের কোনো সত্যতা নেই বলেও উল্লেখ করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।