তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘কুষ্টিয়ায় বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের ওপর যারা আঘাত হেনেছে, তাদেরকে খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া জনগণের দাবি। তাদেরকে শাস্তি দিতেই হবে।’
মন্ত্রী আরো বলেন, ‘যাদের কাছে ভাস্কর্য অগ্রহণযোগ্য, তাদের নিজের বা বাবার ছবিও তাদের রাখার কথা নয়। টেলিভিশনে তাদের চেহারা দেখানো এমনকি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তারা যে ভাস্কর্যবিরোধী পোস্ট দেন, তাদের বক্তব্য অনুযায়ী সেটিও তাদের কাছে গ্রহণযোগ্য হবার কথা নয়। অতএব এই সমস্ত বক্তব্য দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করা যাবে না। আমি তাদেরকে অনুরোধ জানাবো, দয়া করে ভাস্কর্য আর মূর্তি গুলিয়ে ফেলবেন না এবং মানুষকে ও আলেম সমাজকে বিভ্রান্ত করবেন না।’
রোববার (৬ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট আয়োজিত হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর ৩৭তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় সমসাময়িক প্রসঙ্গে তিনি একথা বলেন।
আজকে ভাস্কর্য আর মূর্তিকে এক বানিয়ে ফেলা হচ্ছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন ‘ভাস্কর্য পৃথিবীর সব দেশেই আছে এমনকি সৌদি আরবেও শাসকদের অবয়বসহ বহু ভাস্কর্য আছে। ইরানে ইসলামী বিপ্লবের নেতা আয়াতুল্লাহ খোমেনীর ভাস্কর্যসহ বহু ভাস্কর্য আছে, তুরস্কে আছে। যারা পাকিস্তানী ভাবধারায় বিশ্বাস করে, পাকিস্তান ভেঙ্গে গেল বলে যারা বুক চাপড়ায় তাদের অনুসারিদের সেই পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ’র ভাস্কর্য আছে, কবি ইকবালের ভাস্কর্য আছে।’
ড. হাছান বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশে প্রায় এক লাখ মসজিদভিত্তিক মক্তব্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, প্রতিজন আলেম সেখানে মাসে সাড়ে ৪ হাজার টাকার বেশি সরকারি ভাতা পাচ্ছেন, যা আরো বাড়বে। কওমী মাদ্রাসার স্বীকৃতির দাবি ১০০ বছরে কেউ পুরণ করেনি। বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা এই কওমী মাদ্রাসাকে স্বীকৃতি দিয়েছেন এবং এরপর সেখান থেকে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা সরকারি চাকুরিও পেয়েছে। এই উপমহাদেশে ইসলামী আরবী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি শতবর্ষের পুরনো। কেউ সেই দাবি পূরণ করেনি। জননেত্রী শেখ হাসিনা ইসলামী আরবী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছেন।’
‘ইসলামের কল্যাণের জন্য বাংলাদেশে আলেম সমাজের জন্য প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা যা কিছু করেছেন, কেউ এতো কাজ করে নাই, সেকারণে গুটিকয়েক মানুষের কথায় আপামর জনগণ এবং আলেম সমাজের কেউ বিভ্রান্ত হবেন না’ আহ্বান জানান তথ্যমন্ত্রী।
ড. হাছান বলেন, ‘হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান সবার মিলিত রক্ত শ্রোতের বিনিময়ে এই দেশ স্বাধীনতা অর্জন করেছে। সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র ব্যবস্থা ভেঙ্গে, অসম্প্রদায়িক রাষ্ট্র রচনার জন্যই বাংলাদেশ রাষ্ট্রের সৃষ্টি। এখানে কাউকে সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্প ছড়াতে দেয়া হবে না।’
অবিভক্ত বাংলার তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী গণতন্ত্রের মানসপুত্র হোসেন শহীদ সোহওয়ার্দীকে আওয়ামী লীগের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে শ্রদ্ধা জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সভাপতি হোসেন শহীদ সোহওয়ার্দীর নেতৃত্বে যখন আওয়ামী লীগ সর্বপাকিস্তান কেন্দ্রীয় সরকার গঠন করে তখনই ১৯৫৬ সালে পাকিস্তানের সংবিধান রচিত হয়, তার আগে পাকিস্তানের কোনো সংবিধান ছিল না। আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় সরকার গঠন করার পরই মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ২১ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন করা শুরু হয় এবং রাষ্ট্রীয়ভাবে দেশের বিভিন্ন স্থানে শহীদ মিনার নির্মিত হয়। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিজে হোসেন শহীদ সোহওয়ার্দীকে নেতা হিসেবে মানতেন এবং অগাধ শ্রদ্ধা রাখতেন।’
বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের উপদেষ্টা লায়ন চিত্ত রঞ্জন দাস এর সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি সাইফুল আলম, সাংবাদিক শাবান মাহমুদ, আওয়ামী লীগ নেতা এম এ করিম, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক অরুন সরকার রানা, মুক্তিযোদ্ধা সংগ্রাম পরিষদের মহাসচিব শফিকুর রহমান মজুমদার টিপু, অভিনেত্রী তারিন জাহান, বঙ্গবন্ধু পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত হোসেন টয়েল, সাংবাদিক মানিক লাল ঘোষ প্রমুখ।