
উপজেলা পরিষদ আইন বাস্তবায়নের মাধ্যমে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ, অনিয়ম, দুর্নীতি ও দৌরাত্ম্য বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন নির্বাচিত প্রতিনিধিরা। তারা সরকারের সংশ্নিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কাছে পাঁচ দফা দাবি জানিয়ে অবিলম্বে তা বাস্তবায়নের অনুরোধ করেছেন। দাবি বাস্তবায়ন না হলে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা গ্রহণ করা হবে বলেও জানিয়েছেন জনপ্রতিনিধিরা।
শনিবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) সংবাদ সম্মেলন করে এসব দাবি তুলে ধরেন বাংলাদেশ উপজেলা পরিষদ অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা। সংবাদ সম্মেলনে অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক নরসিংদীর মনোহরদী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানসহ দেশের বিভিন্ন উপজেলার ৬০ জন চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান উপস্থিত ছিলেন।
দাবি বাস্তবায়নে ১৭ জানুয়ারি থেকে দেশের সকল জেলা সদরে সকল স্তরের জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিক ও বিশিষ্টজনদের সঙ্গে জেলা কমিটি কর্তৃক মতবিনিময় ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হবে। এরপর আগামী ২৭ জানুয়ারি ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাব চত্বরে মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হবে। এরপরেও যদি নির্বাচিত উপজেলা পরিষদকে কার্যকর করতে চিহ্নিত প্রতিবন্ধকতা দূর করা না হয় তাহলে উপজেলা পরিষদ আইনকে কার্যকর করতে কঠোর আন্দোলনের হুমকিও দেওয়া হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হারুন-অর-রশীদ হাওলাদার বলেন, উপজেলা পরিষদে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা থাকলেও প্রজাতন্ত্রের একজন কর্মকর্তা (ইউএনও) সবকিছু উপেক্ষা করে উপজেলায় শাসকের দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি বলেন, উপজেলা পরিষদ আইন (সংশোধিত) ২০১১ অনুযায়ী সকল উপজেলাকে প্রশাসনিক একাংশ ঘোষণা করা হয়েছে। আইনটির তৃতীয় তফসিলে ১২টি মন্ত্রণালয়ের উপজেলাভিত্তিক ১৭টি বিভাগকে উপজেলা পরিষদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। হস্তান্তর করা এসব কাজ সম্পাদনে উপজেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী হিসেবে উপজেলা চেয়ারম্যানের অনুমোদন নেওয়ার কথা। ২০১০ সালের ১৭ জুন, ২০১৫ সালের ১৪ অক্টোবর ও সর্বশেষ ২০১৯ সালের ১২ নভেম্বর এ সংক্রান্ত আদেশও জারি করা হয় স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে।
পটুয়াখালীর দুমকী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হারুন-অর-রশীদ বলেন, উপজেলা চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানদের পাশ কাটিয়ে সরকারের নানা উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা এককভাবে সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। তারা উপজেলা পরিষদের বদলে নাম ব্যবহার করছেন উপজেলা প্রশাসন। চেয়ারম্যানের অনুমোদন ছাড়াই সমস্ত কাজ পরিচালনা করছেন। অথচ উপজেলা পরিষদের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে তাদের সচিবের দায়িত্ব পালন করার কথা।
তিনি আরও বলেন, উপজেলা পরিষদ আইন পুরোপুরি বাস্তবায়ন না করে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের আদেশ, পরিপত্র জারি করে উপজেলা চেয়ারম্যানদের ক্ষমতা খর্ব করা হচ্ছে। এছাড়া আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও সদস্যরা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছেন না।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, উপজেলা পরিষদ আইনের পুরোপুরি বাস্তবায়ন, উপজেলা পরিষদ কার্যক্রম বাস্তবায়নে বিধিমালা অনুসরণে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে গত বছর ২০ সেপ্টেম্বর স্থানীয় সরকার বিভাগের মন্ত্রী, মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিবসহ ১৫ সচিবের কাছে আইনি নোটিস পাঠানো হলেও দাবি বাস্তবায়নের দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ এখনও দেখা যায়নি। সরকারি কোনো পরিপত্র, আদেশ বিদ্যমান আইন বা সংবিধানকে লঙ্ঘন করলে উচ্চ আদালতে চ্যালেঞ্জ করার সুযোগ আছে।
বাংলাদেশ উপজেলা পরিষদ অ্যাসোসিয়েশন তা করবে কিনা জানতে চাইলে হারুন-অর-রশীদ হাওলাদার বলেন, আপাতত আন্দোলন-কর্মসূচি দিয়ে দাবি আদায়ের চেষ্টা করা হবে। না হলে সর্বশেষ আশ্রয়স্থল আদালতে যাব আমরা।