ট্রাম্পের ফোনালাপ ফাঁস নিয়ে তোলপাড়

President Donald Trump pauses while speaking with reporters before departing on Marine One on the South Lawn of the White House, Wednesday, Aug. 21, 2019, in Washington. Trump is headed to Kentucky. (AP Photo/Alex Brandon)

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচনের ফলাফল পাল্টে দেওয়ার জন্য রাজ্যস্তরের এক কর্মকর্তাকে সরাসরি নির্দেশ দিয়েছেন। এজন্য প্রয়োজনীয় ভোট সংগ্রহে জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের সেক্রেটারি অব স্টেটকে টেলিফোনে নির্দেশ দিয়েছেন ট্রাম্প।

ডোনাল্ড ট্রাম্প ২ জানুয়ারি জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের সেক্রেটারি অব স্টেট ব্র্যাড রাফেনসপারজারকে ফোন করেন। তাদের দীর্ঘ ফোনালাপের অডিও দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট রবিবার প্রথম প্রকাশ করলে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়। ট্রাম্প নির্বাচনের ফলাফল পাল্টানোর জন্য আর কত নিচে নামবেন, আর কত কী করবেন, এ নিয়ে মার্কিন মিডিয়া সরগরম হয়ে উঠেছে।

ফোনালাপের সূত্র ধরে দেখা যায়, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সেক্রেটারি অব স্টেটকে ১১ হাজারের বেশি ভোট কোনোভাবে খুঁজে বের করার জন্য বারবার বলছেন বলে ফোনালাপে শোনা যায়।

জর্জিয়ার জনগণ ক্ষুব্ধ, আমেরিকার লোকজনও ক্ষুব্ধ বলে ট্রাম্প উল্লেখ করেন। আবার গণনা করা করে ‘ভোট পাওয়া গেছে’ বলার মধ্যে কোনো ‘ভুল নেই’ বলে ব্র্যাড রাফেনসপারজারকে টেলিফোনে বলছিলেন ট্রাম্প।

ট্রাম্প বলছিলেন, ‘আমি এই একটা জিনিসই চাইছি, কোনোভাবে ১১ হাজার ৭৮০ ভোট খুঁজে বের করা।’ ট্রাম্পের এই চাওয়ার কারণ, তাহলে জো বাইডেনের চেয়ে এক ভোট বেশি হয়ে যাবে এবং জর্জিয়ার নির্বাচনে তিনি জয়লাভ করেছেন, তা প্রমাণিত হবে। এমনিতেই নির্বাচনে তিনি জয়লাভ করেছেন বলে উল্লেখ করেন।

ট্রাম্পের কথার পরিপ্রেক্ষিতে ব্র্যাড রাফেনসপারজারকে বলতে শোনা যায়, তিনি (ট্রাম্প) ভুল তথ্যের ওপর ভিত্তি করে কথা বলছেন। রাজ্যের ভোট ঠিকই একাধিকবার গণনা করা হয়েছে। এখন ডোনাল্ড ট্রাম্পের কথায় নতুন ভোট খোঁজে পাওয়ার কাজ যে তিনি করবেন না, এমন কথা বিনয়ের সঙ্গে বলেন ব্র্যাড রাফেনসপারজার।

রিপাবলিকান পার্টির লোকজন ব্র্যাড রাফেনসপারজারের ওপর অসন্তুষ্ট বলে ট্রাম্প উল্লেখ করেন ফোনালাপে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে এমন ব্যবহার রিপাবলিকানরা নাকি মেনে নিতে পারছেন না। ৫ জানুয়ারি জর্জিয়ায় দুই সিনেট নির্বাচনেও এর প্রভাব পড়বে বলে ট্রাম্প উল্লেখ করেন। এখন যদি তার কথামতো সব ঠিক করে নেওয়া হয়, রিপাবলিকান পার্টির নেতারা সেক্রেটারি অব স্টেটকে ‘খুবই শ্রদ্ধা’ করবেন বলে ট্রাম্প বলতে থাকেন।

দ্য ওয়াশিংটন পোস্টে প্রকাশিত ফোনালাপের অডিও এমন একটি প্রমাণ, যার মাধ্যমে দেখা যাচ্ছে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দেশের সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর ব্যক্তি হয়ে অধস্তন রাজ্য কর্মচারীদের ভোটের ফলাফল পাল্টে দেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছেন। এর আগে জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের গভর্নর ব্রায়ান কেম্পকে এমন চাপ দিয়েছেন।

ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ট্রাম্প প্রথমে ব্র্যাড রাফেনসপারজারকে নানাভাবে বোঝানোর চেষ্টা করেন। তার প্রশংসায় নানা কথা বলেন। তার ইচ্ছা অনুযায়ী কাজ করার জন্য বলেন। এতেও কাজ না হলে অপরাধের ভুয়া অভিযোগে ফাঁসানোর হুমকি দেন। একপর্যায়ে ট্রাম্প বলে বসেন, ব্র্যাড রাফেনসপারজার খুব বড় ঝুঁকি নিচ্ছেন।

রাজ্যের রিপাবলিকান গভর্নর এবং সেক্রেটারি অব স্টেট দুজনই রিপাবলিকান। তারা প্রেসিডেন্টের সরাসরি চাপ সত্ত্বেও নিজেদের নৈতিক অবস্থান থেকে সরে দাঁড়াননি। একই কাজ করেছেন পেনসিলভানিয়া, অ্যারিজোনাসহ বেশ কিছু রাজ্যের কর্মকর্তারা। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের চাপ, হুমকি ও প্রলোভনের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন রাজ্যপর্যায়ের এসব কর্মকর্তা।

গতকাল ডোনাল্ড ট্রাম্পের পক্ষ থেকে এক টুইটবার্তা দেওয়া হয়। সেখানে ব্র্যাড রাফেনসপারজারর সঙ্গে কথা বলার বিষয়টি জানান ট্রাম্প। কিন্তু তার ভাষ্য, ব্র্যাড রাফেনসপারজার নির্বাচন-সংক্রান্ত জালিয়াতি নিয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হননি।

ব্যালট পেপার নষ্ট করা, মৃত ভোটারদের ভোটার হিসেবে দেখানোর বিষয়টি আলোচনা করা হয়। কিন্তু তার (ব্র্যাড রাফেনসপারজার) এসব নিয়ে কোনো ধারণা নেই।

তবে ব্র্যাড রাফেনসপারজার ফিরতি টুইটবার্তায় বলেছেন, ‘শ্রদ্ধার সঙ্গে বলতে হচ্ছে মি. প্রেসিডেন্ট, আপনি যা বলছেন, তা ঠিক নয়। সত্য বেরিয়ে আসবে।’

পুরো ফোনালাপে ট্রাম্পকেই বেশি কথা বলতে শোনা যায়। তিনি ব্র্যাড রাফেনসপারজারকে ‘শিশু’ হিসেবে উল্লেখ করেন। ব্র্যাড রাফেনসপারজারকে ট্রাম্প বলেন, ‘ব্রাড, আমাকে বলুন, কী করতে যাচ্ছেন? আমরা নির্বাচনে জিতেছি। এভাবে আমাদের কাছে থেকে ফল অন্যরা নিয়ে যাবে, তা ঠিক না। এর জন্য চড়া মূল্য দিতে হবে। আমার মনে হয়, আপনার বলা উচিত যে, আপনি ভোট আবার গুনবেন।’