নাইট পার্টিতে আটকেছে দেশের চলচ্চিত্র!

বিশ্বের দরবারে দেশের সংস্কৃতি চলচ্চিত্র নির্মাণের মাধ্যম প্রকাশ পেয়ে থাকে। প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পওয়া গত কয়েক দশকের চলচ্চিত্রে অভিনয় করা অভিনেতা-অভিনেত্রীদের সফলতার ধারে কাছেও নেই উঠতিরা। গত বছর মাত্র ১৮টি ছবির মুক্তি পাওয়ায় চলচ্চিত্রের ভবিষ্যৎ নিয়ে নির্মাতাদের চিন্তা থাকলেও এর তোয়াক্কাই না করে উল্টো নাইটক্লাবের পার্টিতে মজে আছে নতুন নায়ক-নায়িকারা।

এবিষয়ে দেশের বহুল জনপ্রিয় দৈনিক পত্রিকাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে পরিচালক সমিতির মহাসচিব বদিউল আলম খোকন বলেন, আমি যখন সহকারি পরিচালক ছিলাম তখন বছরে ছবি নির্মাণ হতো শতাধিক। মুক্তি পেত ৯০টার মতো। যখন পরিচালক হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করলাম তখন ছবি নির্মাণ হতো ৮০টির মতো। মুক্তি পেত ৭০টির মতো। আর এখন তো বলার মতো ছবি মুক্তি পায় ১০টি। এখন সুদিন ফিরিয়ে আনতে হলে সবাই মিলে চেষ্টা করতে হবে। কেউ হাল ছেড়ে দিলে, দায়িত্ব ভুলে গেলে হলো না।

নতুনরা ইন্ডাস্ট্রির কথা ভাবেনা আপসোস করে তিনি আরও বলেন, অভিনেতা-অভিনেত্রীরা অনেকের সঙ্গে ওঠা বসা করেন। তাদের অনেক-ফ্যান ফলোয়ার। তারা চেষ্টা করলে অনেক প্রযোজক আনতে পারেন। এখন তারা যদি ইন্ডাস্ট্রির কথা না ভেবে শুধু নিজের কথা ভাবেন তাহলে আর কি করা!

করোনার পুরো বছর জুড়ে হাতে গোনা দু-একটা ছবির শুটিং হয়েছে আপসোস করে অভিনেত্রী মাহিয়া মাহি বলেন, ‘নায়ক-নায়িকাদের গ্ল্যামার খুব কম সময় পর্যন্ত থাকে। দশ থেকে পনের বছর আবেদন থাকে তাদের। এই সময়টা কাজে না লাগাতে পারলে তারা মূল্যহীন হয়ে পড়ে। আমার তো এরমধ্যে আট বছর হয়ে গেল। বাকি সময়টা আর বেকার কাটাতে চাই না। একের পর এক ছবি করে যেতে চাই। যেন সবাই আমাকে মনে রাখে।

তিনি বলেন, এখনকার ছেলে-মেয়েরা কাজের চেয়ে সেলফি তুলতে বেশি ব্যস্ত। অনেক ছেলে-মেয়ে দেখি প্রতিদিন হেলায় ফেলায় সময় কাটাচ্ছে। নির্মাতা হিসেব এটা খুব খারাপ লাগে। তারা বুঝতে পারছে না কি হারাচ্ছে। যখন সংবাদপত্রে বিভিন্ন নায়িকাদের নিয়ে নিউজ পড়ি কষ্ট পাই। জি কে শামীম মামলায় কয়েকজন নায়িকার নাম এসেছে জানার পর থেকে লজ্জায় আছি। আগে একজন শাবান মাদাম, বিটা মাদাম, সুচরিতা মাদামকে অনেক কোটি-পতি দাওয়াত দিয়ে নিতে পারেনি। আর এখন শুনি মুদি দোকান উদ্বোধন করতেও হাজির হন তারকারা। এছাড়াও শুনেছি অনেক মাদকেও আসক্ত। আমরা আসলে চলচ্চিত্রের খুব বাজে সময়ে আছি। জানি না সামনে কি অপেক্ষা করছে।’

হলের দর্শকদের উল্লেখ করার মতো সিনেমা উপহার না দিতে পারলেও নায়ক-নায়িকারা প্রায় প্রতি রাতেই নানান পার্টিতে ব্যস্ত থাকেন। রাতভর পার্টি করে সেই ছবি সামাজিক যোগাগোগ মাধ্যম ফেসবুকেও আপলোর্ড করতে দেখা গিয়েছে অনেকেকে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রযোজক বলেন, নতুন অভিনেতা-অভিনেত্রীদের বেপরোয়া জীবন যাপন চলতে থাকলে দেশিও সংস্কৃতি অচিরেই ঘোর অন্ধকারে হারাবে। দেশিও সাস্কৃতিকে এই দুরাবস্থা থেকে বাঁচাতে চলচ্চিত্রে সরকারের হস্তক্ষেপ এবং নতুন অভিনেতা, অভিনেত্রীদের বেপরোয়া চলাফেরা আইন-সৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরদারির আওতায় আনা দরকার।

এদিকে বিভিন্ন পার্টি গুলোতে নায়ক-নায়িকার পরিচয়টা বিক্রি করতে মেধার প্রয়োজন হয় না বলে অনেকে অভিযোগ করে বলেন, নতুন অভিনেতা-অভিনেত্রীরা দেশের সংস্কৃতি বাঁচানোর চিন্তা না করে তাদের আসল পরিচয় বিক্রির মাধ্যমে পার্টিগুলোতে অংশগ্রহণ করছেন। সবকিছু মিলিয়ে যেখানে চলচ্চিত্রাঙ্গনে হতাশা চলছে সেখানে সিনিয়ররা এখনো আশা রাখছেন নতুনদের উপর। যারা হয়ত আনবে নতুন ভোর। কিন্তু নতুনরা কি ভাবছে সেসব! নাকি উদাস চিত্তে তকমা নিয়েই নিজের কথা ভাবছে তারা?