জীবন যতটা না আনন্দের তার থেকে বেশি অনুধাবনের। পারিবারিক সঠিক শিক্ষার অভাবে বেড়ে ওঠা কিশোর-কিশোরীরা হারিয়ে ফেলতেছে নৈতিক মূল্যবোধ এবং তৈরি হচ্ছে সামাজিক অবক্ষয়। সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক সচেতনতা না পেয়ে তারা এগিয়ে যাচ্ছে মিশ্র সংস্কৃতি চর্চা করে ধ্বংসের শেষ মৌসমের দিকে। অথচ শিশুরা কাদামাটির মতো পরিবার যেভাবে চায় সেভাবে বেড়ে ওঠে। পারিবারিক শিক্ষা বয়ে বেড়ায় জীবনের সকল পথ গুলোতে।
সন্তান বেড়ে ওঠার সাথে লজ্জার প্রলেপে যতগুলো বিষয় জড়িত তার ভিতরে বিশাল একটা অংশ জুড়ে রয়েছে সেক্সুয়াল এডুকেশন। যা আধুনিক সভ্যাতয় এসেও অভিবাবকরা ভুল ভাবে উপস্থাপন করে থাকে। এবং শব্দটাকে ট্যাবু হিসাবে বিবেচনা করায় আজ-কালের কিশোর কিশোরীদের অজ্ঞাতা থেকে যায় প্রকৃত সেক্স এডুকেশনে। যার প্রভাবে নিষিদ্ধ শব্দ হিসাবে আয়ত্ত করে তাদের মস্তিস্কে বয়ে বেড়ায়। একটা সময় তাদের ফ্যান্টাসি আর কৌতূহল ভিন্ন ভাবে প্রভাবিত হয়ে ধর্ষণ ইভটিজিং তরুণদের মগজে অন্য ভাবে যায়গা করে নেয়।
বহুদিনের চর্চায় অভিববাকরা কিশোর কিশোরীদের কাছে মাসিক, স্বপ্নদোষ, এবং নারীদের শারীরগত ভাবে বেড়া ওঠা এসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো
লুকিযে রেখেছে। সেক্সুয়ল শিক্ষা পারিবারিক ও একাডেমিক ভাবে তাদের কে শেখানো হচ্ছে না। যার ফলে আজকাল কিশোর কিশোরীরা পাশ্চাত্য কালচার থেকে ইচ্ছে মত কাটাকাটি করে খারাপ টুকু আমাদের সংস্কৃতিতে জোড়া লাগিয়ে একটা ভয়ঙ্কর মিশ্র অন্ধকারে জগত নিজেদের ভিতর পুষে রেখে অভিবাবকদের চোখের সামনে বড় হচ্ছে।
বহুদিন ধরে অভিবাবকরা এমন ভাবে এটা চর্চা করে এমন পথ দিয়ে যাচ্ছে তাতে মনে হয় এটা এমন একটা নিষিদ্ধ বিষয় যা আপনের গোপনকে ও জানানো যাবে না। বিষয় গুলো বলা যাবে না অভিভাবক, শিক্ষক বড় বোন কাউকে প্রশ্ন করাই যেন এক মারাত্মক অপরাধ। যার দরুণ আজকাল কিশোর কিশোরীরা যতেষ্ট ম্যাচুয়েট না হয়ে ভালোবাসা প্রেম আড়ষ্টতা এই প্রলেপে ডেকে ভুলপথে হাটতেছে অপরদিকে
তরুণরা হাজার হাজার বছরের মজ্জাগত এই পিতৃতান্ত্রিক মানসিকতা লালন করে তাদের ভিতর।
পারিবারিক ভাবে সন্তানদেরকে যখনি শারীরিক বিষয়গুলো জাননো তখনি তারা অন্যভাবে জানার চেষ্টা করছে। গত বিশ বছরের সমীকরণ যদি আমরা মিলাতে যাই তাহলে স্পষ্ট দেখা যায় ৯০ এর শেষের দিকে বা ২০০০ সালের শুরুর দিকে আমাদের সমাজে কিশোর-কিশোরী যৌনতা বিষয়ক জ্ঞান পাওয়ার মূল উৎস ‘পর্ণগ্রাফি যা অবাস্তব বা স্কিপ্টের উপর দৃশ্যপট বিষয়।
আমাদের কিশোর কিশোরীরা অস্বাভাবিক সেই ফিল্ম দেখে অসুস্থ যৌনতার বিষয়ক যে জ্ঞান হয়, সেই জ্ঞান তাদেরকে রীতিমতো প্রতিবন্ধী করে দেয় এবং ধর্ষণের দিকে দাবিত করে। প্রকৃত যৌন শিক্ষা সম্পর্কে তাদের ধারনা থেকে যায় যোজন যোজন দুরে। যার ফলে তারা এই স্বীকৃতি নিয়ে বড় হয় যৌন সঙ্গম হচ্ছে কর্তৃত্ব খাটানো জোড় পূর্বক এই প্রভাবিত শখ থেকে জোর খাটানোটা মনোভাব তৈরী হয়ে এক সময় ধর্ষণের বহিঃপ্রকাশ ঘটে৷
৬ষ্ঠ শ্রেণি থেকে শারীরিক শিক্ষা ও স্বাস্থ্য নামের বইয়ে একটি করে অধ্যায় করা হয়েছে সেখানে খুব বেশি খোলামেলা নয় শুধু শিরোনামের জন্য ব্যবহার করা হয়েছে বয়ঃসন্ধি কাল, শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন, ভ্রান্ত ভাবনা, নিরাপদ থাকার উপায়, ঝুঁকি ও নিরাপত্তা, এইডস ও এইচআইভি। আধুনিক সমাজের শিক্ষকরাও এই বিষযগুলো এড়িয়ে যান খুব কৌশলে। পরীক্ষায় ও বিষয়গুলোতে তেমন প্রশ্ন করা হয়না। তাই কিশোর কিশোরীরা এই বিষয় গুলো জানতে অপারগার স্বীকার হয়। যার ফলে ধর্ষণ বাড়ছে, বাড়ছে ধর্ষণের পর হত্যা৷ একই সঙ্গে বাড়ছে নিষ্ঠুরতা।
ধর্ষণ বেড়ে যাওয়া পিছনে ক্ষুদ্র ভাবে তাকালে এই বিষয় গুলো উঠে আসে পর্নোগ্রাফির বিস্তার, স্বল্প পরিচয়ের পর ওই ছেলের মেলামেশা, এবং বর্তমান সময়ে তথা কথিত নাটক ওয়েব সিরিজে অশালীন ও অশোভন দৃশ্যে অশ্লীল সংলাপ থেকে রীতিমতো সেক্স প্রমোট করে। বিশেষ করে আগে পাশের দেশের বিভিন্ন চ্যানেলে যা দেখানো হয়, তা-ও ধর্ষণের মতো অপরাধকে উসকে দিচ্ছে। বিজ্ঞাপন দেখে একটি ছোট ছেলেও জানতে পারছে, শরীরকে উত্তেজিত করতে হলে কী খেতে হবে!
বৃহত্তর ভাবে চিন্তা করলে যার প্রভাবে দিনে দিনে ধর্ষণের মাত্রা বাড়তেছে তার অনেকটা জুড়ে রয়েছে আইনের সুস্থ বিচার না হওয়া। ধর্ষকদের ভিতর কোন ভয় ভীতি কাজ করতেছেনা যদি একটু উদাহরণ হিসাবে বলি পরিবারে যদি কেউ কোন অপরাধ করলে সাথে সাথে যদি তার শাস্তি দেওয়া হয় তাহলে সে পুনরায় সেই অপরাধ করার সময় ভাববে এইটা করলে আমার শাস্তি হবে এবং সাথে সাথে আশে পাশের সদস্যরা সতর্ক হয়। রাষ্ট্রে যখন এর সুস্থ বিচার হয়না ক্ষমতার কাছে নতজানু হয়ে পার পেয়ে যায় তখন এই বিষয় গুলো বাড়তে থাকে অবলিলায়।
গত কয়েকবছর আগওে দেখা গিয়েছে ফরেনসিক বিভাগের প্রয়োজনীয় নারী চিকিৎসক এবং নার্স না থাকার ফলে ধর্ষিতা পুরুষ চিকিৎসকের কাছে তার ধর্ষণের বিবরণ দিতে গিয়ে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়। যার ফলে ধর্ষণের স্বীকার নারী তার বিচার চাইতে ইতস্তবোধ করে। যার দরুন আড়ালেই থেকে যায় পাষণ্ড ধর্ষক।
মফস্বল শহরে ছেলে-মেয়ে আপত্তিকর অবস্থায় ধরা পড়লে সমাজের চাপে ধর্ষকের সাথেই মেয়েটির বিয়ের ব্যবস্থা করার ঘটনাও ঘটে অহরহ গ্রাম্য সালিশে। এ প্রথা কেমন যেনো একটা নিয়মে পরিনত হয়েছে। আমরা কখনই চিন্তা করিছিনা এ ব্যাপারটা আসলে কতখানি অমানবিক। মানষিক বিকার গ্রস্ত একটা পুরুষ নিষ্ঠুরভাবে ধর্ষণ করলো অথচ আমাদের সমাজের আইনে তাকেই ডেকে এনে আবার তার হাতে মেয়েটির জীবনটা সঁপে দিচ্ছি। কিন্তু চিন্তা করিনা বাকি জীবনটা তার কিভাবে কাটবে? এর ফলে নারীদের বহু আত্মহত্যার গল্প রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা পড়ে।
ধর্ষণ প্রতিরোধে কিশোর কিশোরীদেরকে পারিবারিক ভাবে সেক্সুয়াল এডুকেশনের বিকল্প নেই যা মেডিসেনিরে মতো কাজ করবে। সামাজিক ভাবে সচেতনতা তৈরী করতে হবে। অভিবাবকদের উচিত তাদের সাথে বনধুত্ব পূর্ণ আচরন করা। খেয়াল রাখা সন্তানরা কোথায় যাচ্ছে কাদের সাথে সময় কাটাচ্ছে কোন বিষয় নিয়ে তাদের আলাপ আলোচনা হচ্ছে। কোন সাইট গুলোতে তারা বিজিট করতেছে কোন ধরনের নাটক সিনেমা ওয়েভ সিরিজ দেখতেছে।
অপরদিকে আইনের দৃশ্যমান প্রয়োগের মধ্যো এই কমিয়ে আনা সম্ভব আমাদের রাষ্ট্রীয় কাঠামোগত ভাবে বাল্য-বিবাহ, মানব পাচার এবং এসিড সন্ত্রাসের মতো ঘটনার ক্ষেত্রে আলাদা আইন রয়েছে। ধর্ষণের বিচার সম্পর্কে আরেকটি আইন দরকার। অথবা বর্তমান বিদ্যমান আইনেই কিছু সংস্কার এনে এই বিষয়টি নিশ্চিত করা।
আগামীর ধর্ষণ মুক্ত পৃথিবী এবং ভ্রান্ত মস্তিক সুস্থের মেডিসিন হবে পারিবারিব শিক্ষা, সামাজিক সচেতনতা এবং আইনের যথার্থ প্রয়োগ। যার ফলে কমে আসবে্ নারী-পুরুষের মানসিক দূরত্ব।
লেখক ও পর্যটক: আম্বিয়া অন্তরা নিউইয়র্ক প্রবাসী।