স্থানীয় সরকার পরিষদের অন্যতম শক্তিশালী স্তর পৌরসভা নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপে ৬০টিতে ভোট হচ্ছে। শনিবার সকাল ৮টা থেকে শুরু হওয়া ভোট গ্রহণ চলবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত।
তবে তৃণমূল হলেও এই নির্বাচন ঘিরে উত্তেজনা জাতীয় নির্বাচনের চেয়ে কোনো অংশেই কম নয়। কারণ ভোটের আগ মুহূর্তেও প্রার্থীর সমর্থকের মধ্যে সংঘর্ষে লাশ পড়ার ঘটনা ঘটেছে। এমনকি প্রার্থীরও লাশ পড়েছে। নির্বাচনী সংঘাত-সহিংসতার কারণে কোথাও কোথাও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানই চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই সুষ্ঠু ভোট অনুষ্ঠান এবং ভোটের দিন নির্বাচনী পরিবেশ যাতে সহিংস হয়ে না ওঠে সে জন্য ভোটকেন্দ্রগুলোতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
নির্বাচন কমিশন (ইসি) সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, প্রথম ধাপে ২৩ পৌরসভার ভোট মোটামুটি শান্তিপূর্ণ হলেও দ্বিতীয় ধাপে সংঘাত-সহিংসতা বেড়েছে। এ ধাপে ১৭টি পৌরসভার মোট ১৪৪টি ভোটকেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ ও অধিক ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করে সেগুলোতে বেশি সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
এদিকে, নির্বাচন ঘিরে কোনো রক্তপাত এড়াতে সতর্ক রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সংঘাত রোধে কঠোর হওয়ার বার্তা দেওয়া হয়েছে সংশ্লিষ্ট সব জেলার পুলিশ সুপার, ডিআইজি ও মেট্রোপলিটনে কর্মরত পুলিশ সদস্যদের। আগাম গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করে যাদের নৈরাজ্যে জড়ানোর আশঙ্কা রয়েছে তাদের আইনের আওতায় নেওয়ার পরামর্শও দেওয়া হয়েছে।
ইসি সূত্র জানিয়েছে, ৬০টি পৌরসভার ৫৬টিতে মেয়র পদে ভোট হবে। নারায়ণগঞ্জের তারাব, সিরাজগঞ্জের কাজীপুর, পাবনার ভাঙ্গুড়া ও পিরোজপুর সদরে ভোটের আগেই আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা মেয়র পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় পেয়েছেন। তবে ৬০টি পৌরসভার সবক’টিতেই কাউন্সিলর পদে ভোট গ্রহণ হবে। ২৯টি পৌরসভার কেন্দ্রে কেন্দ্রে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) গতকাল শুক্রবার পৌঁছানো হয়েছে। বাকি ৩১টি পৌরসভায় ব্যালটে ভোট হবে। সেগুলোতে আজ শনিবার ভোট গ্রহণ শুরুর আগে ব্যালট পেপার পাঠানো হয়েছে। নির্বাচন উপলক্ষে ভোটকেন্দ্র-সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।
এ ধাপে মেয়র পদে ২১১ জন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে দুই হাজার ২৩২ জন এবং সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৭২৪ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। সিরাজগঞ্জের বেলকুচি ও নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ ছাড়া বাকি ৫৪টি পৌরসভায় বিএনপির প্রার্থী মেয়র পদে লড়াই করছেন। সবক’টি পৌরসভাতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী রয়েছেন, অনেকগুলোতে দলটির বিদ্রোহী প্রার্থীরাও মাঠে রয়েছেন। এ ধাপের নির্বাচনে বড় দুই দল ছাড়াও জাতীয় পার্টি, ইসলামী আন্দোলন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপি, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন-এনডিএম এবং ন্যাশনাল পিপলস পার্টি-এনপিপির প্রার্থীরা অংশ নিয়েছেন। প্রথম ধাপে পাঁচটি রাজনৈতিক দল অংশ নিয়েছিল। দ্বিতীয় ধাপে ৬১টি পৌরসভায় ভোট অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও নীলফামারীর সৈয়দপুর পৌরসভার এক প্রার্থী মারা যাওয়ায় ভোট স্থগিত করেছে নির্বাচন কমিশন। গত ২ ডিসেম্বর দ্বিতীয় ধাপের ভোটের তফসিল ঘোষণা করা হয়।
ইসি কার্যালয় জানিয়েছে, সবগুলো পৌরসভায় পুলিশের একটি স্ট্রাইকিং ফোর্স ও প্রতি তিন ওয়ার্ডে একটি করে মোবাইল ফোর্স মাঠে রয়েছেন। এ ছাড়া প্রতি তিন ওয়ার্ডে র্যাবের একটি করে টিম টহল দিচ্ছে। এক লাখের বেশি ভোটারবিশিষ্ট পৌরসভায় চার প্লাটুন বিজিবি, ৫০ হাজার থেকে এক লাখ ভোটার পর্যন্ত তিন প্লাটুন এবং ১০ হাজার থেকে ৫০ হাজার ভোটারবিশিষ্ট পৌরসভায় দুই প্লাটুন এবং ১০ হাজারের কম ভোটারের পৌরসভায় এক প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।
ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনায় ১৭টি পৌরসভায় এ সংখ্যার চেয়ে আরও বেশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। পৌরসভাগুলো হচ্ছে- দিনাজপুর, মোহনগঞ্জ, কমলগঞ্জ, কুলাউড়া, কিশোরগঞ্জ, কুলিয়ারচর, সাভার, বসুরহাট, গুরুদাসপুর, খাগড়াছড়ি, মোংলা পোর্ট, মুক্তগাছা, ফুলবাড়িয়া, ছাতক, শেরপুর, সারিয়াকান্দি ও সান্তাহার। প্রতিটি পৌরসভায় সাধারণ ভোটকেন্দ্রে পুলিশ ও আনসারের ১১ জন সদস্য এবং ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে ১৩ জন করে সদস্য মোতায়েন থাকবেন। বগুড়ার তিনটি পৌরসভায় এ সংখ্যার অতিরিক্ত হিসেবে দু’জন করে বাড়তি পুলিশ দেওয়া হয়েছে। ৬০টি পৌরসভায় ভোটকেন্দ্র রয়েছে ১ হাজার ৮০টি। মোট ভোটার সংখ্যা ২২ লাখ ৪০ হাজার ২৬২ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১১ লাখ ৮ হাজার ৪৩১ জন এবং নারী ভোটার ১১ লাখ ৩১ হাজার ৮৩১ জন।