যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে আজ শপথ নিচ্ছেন জো বাইডেন। ওয়াশিংটন সময় বেলা সাড়ে ১১টায় (বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ১০টা) অভিষেক অনুষ্ঠান শুরু হবে। দুপুরের দিকে শপথ নেবেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস।
বাইডেনের শপথ ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে নেওয়া হয়েছে নজিরবিহীন নিরাপত্তা। বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উগ্র-সমর্থকদের সম্ভাব্য সহিংসতা এড়াতে রাজধানী ওয়াশিংটনে ন্যাশনাল গার্ডের ২৫ হাজার সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। নিরাপত্তা বাহিনীর এই সদস্যদেরও নিরাপত্তাবিষয়ক তথ্য যাচাই-বাছাই করা হয়েছে এবং এদের মধ্য থেকেও কোনো হুমকির প্রমাণ মেলেনি বলে নিশ্চিত হয়েছেন আর্মি সেক্রেটারি রায়ান ম্যাকার্থি। খবর সিএনএন ও বিবিসির।
যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপিটল হিলে ঐতিহ্য অনুযায়ী শপথ নেবেন জো বাইডেন। বাইবেলে হাত রেখে শপথ নিতে পারেন তিনি। শপথবাক্যে রয়েছে, ‘আমি গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে শপথ নিচ্ছি (বা দৃঢ়তার সঙ্গে ঘোষণা করছি) যে, আমি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট কার্যালয়ের দায়িত্ব বিশ্বস্ততার সঙ্গে পালন করব এবং আমার সর্বোচ্চ ক্ষমতা দিয়ে মার্কিন সংবিধানের সংরক্ষণ, এর সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার চেষ্টা করব।’ শপথ নেওয়ার পর প্রথমবারের মতো প্রেসিডেন্ট হিসেবে আনুষ্ঠানিক ভাষণ দেবেন বাইডেন। ভাষণের পরই সস্ত্রীক প্রবেশ করবেন হোয়াইট হাউসে। আগামী চার বছরের জন্য হবেন সেখানকার বাসিন্দা।
এদিকে বাইডেন ভাষণে কী বলবেন, তা গোপন রাখা হয়েছে। খুব গুরুত্ব সহকারে এ ভাষণ প্রস্তুত হয়েছে। বাইডেনের দীর্ঘদিনের উপদেষ্টা মাইক ডোনিলন এ বক্তব্য লেখার প্রক্রিয়া তদারকি করেছেন। ইতিহাসবিদ ও প্রেসিডেন্টদের আত্মজীবনী লেখক জন মিচামও অভিষেক ভাষণ তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন। বাইডেনের ভাষণের বক্তব্য গোপন রাখার কারণ, বক্তব্যকে একেবারে তাজাভাবে উপস্থাপন করতে চান নতুন প্রেসিডেন্ট। তা ছাড়া, প্রয়োজনবোধে শেষ মিনিট পর্যন্ত এতে পরিবর্তন আনার সুযোগ রাখা হচ্ছে।
তবে বাইডেনের ঘনিষ্ঠ কয়েকজন জানিয়েছেন, গত ৭ নভেম্বর বাইডেন যে ভাষণ দিয়েছিলেন তার আদল থাকবে এবারের ভাষণে। সেখানে একে অপরকে সুযোগ দেওয়ার জন্য আমেরিকানদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন নতুন প্রেসিডেন্ট। সে রাতে বাইডেন বলেছিলেন, ‘কঠোর রেটরিক ভুলে গিয়ে, উত্তেজনা কমিয়ে আবার একে অপরের দিকে তাকানোর সময় এখনই। একে অপরের কথা শোনার সময় এখনই। অগ্রগতির জন্য আমাদের বিরোধীদের শত্রু হিসেবে দেখার প্রবণতা বন্ধ করতে হবে। তারা আমাদের শত্রু নয়। তারা আমেরিকান।’
এদিকে শপথ ঘিরে নজিরবিহীন নিরাপত্তা নেওয়া হয়েছে ক্যাপিটল হিলসহ পুরো রাজধানীতেই। গত ৬ জানুয়ারি ট্রাম্প সমর্থকরা ক্যাপিটল হিলে হামলা চালায়। এতে দাঙ্গা ও পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে পাঁচজন নিহত হয়। এরপর শপথের দিনও হামলার শঙ্কায় সতর্কতা জারি করে এফবিআই। তাই আজকের অনুষ্ঠান ঘিরে ওয়াশিংটনের বেশিরভাগ রাস্তা এবং মেট্রো স্টেশনগুলোর পাশাপাশি কর্তৃপক্ষ জাতীয় উদ্যান হিসেবে পরিচিত ন্যাশনাল মলও বন্ধ করে দিয়েছে। ভার্জিনিয়া রাজ্য থেকে শহরে প্রবেশের সেতুগুলোও বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। আরো সহিংসতার হাত থেকে রক্ষার জন্য হাজার হাজার ন্যাশনাল গার্ড সদস্য এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কর্মকর্তারা পুরো এলাকাজুড়ে অবস্থান করছেন।
আসন্ন বাইডেন প্রশাসনের সম্ভাব্য যোগাযোগ পরিচালক কেইট বেডিংফিল্ড এবিসির দিস উইক শোতে বলেন, ‘আমাদের পরিকল্পনা ও প্রত্যাশা, নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ২০ জানুয়ারি (আজ) ক্যাপিটল হিলের পশ্চিম পাশে বাইরের দিকে পরিবারের সঙ্গে বাইবেলে হাত রেখে শপথ অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন।’ তিনি বলেন, ‘বাইডেন এবং তার দলের যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর প্রতি পূর্ণ আস্থা আছে। তারা এক বছরেরও বেশি সময় ধরে অভিষেক অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা নিরাপদ কি না তা নিশ্চিত করার পরিকল্পনায় কাজ করে যাচ্ছেন।’
একটি ‘নতুন প্রশাসন’ আসছে ট্রাম্প তা মেনে নেওয়া সত্তে¡ও নিজের পরাজয় মেনে নিতে বা বাইডেনকে অভিনন্দন জানাতে অস্বীকার করেছেন। ট্রাম্প শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের ১৬০ বছরের মার্কিন ঐতিহ্য উপেক্ষা করে ঘোষণা দিয়েছেন, তিনি অভিষেক অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন না। তবে ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স বাইডেনের শপথ অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে।
ট্রাম্প আজ সকালে একটি বিদায়ী লাল গালিচা সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে ওয়াশিংটন ছাড়ার পরিকল্পনা করছেন। এরপর প্রেসিডেন্টের বিমান এয়ারফোর্স ওয়ানে চড়ে তিনি ফ্লোরিডার উদ্দেশে যাত্রা করবেন।