আসন্ন নোয়াখালী চৌমুহানী পৌরসভা নির্বাচনে দলের হাইকমান্ডের সিদ্ধান্তকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে দলের মনোনীত নৌকার প্রার্থীর বিরুদ্ধে মোবাইল প্রতীকের বিদ্রোহী প্রার্থীর জন্য ভোটের মাঠে নেমেছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের এমপি ও তার স্ত্রী।
স্থানীয় সূত্র অনুযায়ী, দলের মনোনীত নৌকার প্রার্থী আক্তার হোসেন ফয়সলের বিরুদ্ধে কিরন এমপির অনুসারী এবং উপজেলা মহিলা লীগের সভানেত্রী জেসমিন আক্তার বিদ্রোহী প্রার্থী খালেদ সাইফুললার হয়ে প্রধানমন্ত্রীর অডিও ক্লিপ বাজিয়ে এলাকায় ভোটের প্রচারণা করছে।
ইতমধ্যে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীর প্রচারণার ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম পেজবুকে ভাইরাল হয়েছে।
পারিবারিক সম্পর্কে নোয়াখালী চৌমুহানী পৌরসভা নির্বাচনের বিদ্রোহী মেয়র প্রার্থী এমপি মামুনুর রশিদের ভাই বলে দলের সিদ্ধান্ত তার কাছে গুরুত্বহীন বলে মনে করছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা।
এ বিষয়ে জানতে চেয়ে এমপি মামুনুর রশিদকে মোবাইল করলে করলে তিনি রিসিভ করেননি।
ঘটনায় স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে। তারা বলছে, দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে যারা আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে পৌর নির্বাচনে ভোটের মাঠে অংশগ্রহণ করছে তারা নেতৃত্বে আসলে এলাকায় একধরণের ত্রাসের রাজত্ব কায়েম হবে। তাই দলের মনোনীত প্রার্থীকে এবারের নির্বাচনে পুরো সমর্থন দিবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দল দেশের মানুষের পাশে দাড়িয়েছে। নির্বাচনের দলের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে বাধা সৃষ্টিকারী এবং উসকানিদাতা দলীয় নেতা ও জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যারা দলের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে অনীহা প্রকাশ করছে তাদের কোন ছাড় দেওয়া হবে না।
এবিষয়ে বেগমগঞ্জ পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু বকর ছিদ্দিক টিপু বলেন, তৃণমূল নেতাকর্মীরা মনে করেন এমপি সাহেব আসলেই চান না নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জিতুক। তিনি বর্তমানে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক থেকে এখানে পৌরসভা ভোটে তার ভাইকে সাহায্য করছেন। যা আওয়ামী লীগের জন্য বড় সমস্যার কারণে হয়ে দাড়াতে পারে। তাই দ্রুত এ অবস্থা নিরসনের জন্য কেন্দ্রীয় নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চৌমুহানী পৌর আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, এমপি মামুনুর রশিদের অতীত কর্মের ফলাফল অনুসারে তিনি চান না এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হোক। তাই তিনি তার ভাইকে বিদ্রোহী প্রর্থী হিসেবে দাড় করিয়ে সরাসরি দলের ক্ষতি চাচ্ছেন।
বর্তমানে পৌরসভার মেয়র আক্তার হোসেন ফয়সল বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরিস্কার ভাবে বলেছেন, বিদ্রোহীরা জয়ী হোক কিংবা পরাজিত হোক, পরবর্তী নির্বাচনে আর মনোনয়ন পাবে না। এটাই আওয়ামী লীগের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। এমপি সাহেব তার পরিবারের সদস্যের জন্য মনোনয়ন চেয়েছেন কিন্তু সেটা না পেয়ে তিনি স্বতন্ত্র হিসেবে তার বড় ভাইকে নির্বাচনে দাঁড় করিয়ে দিয়ে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছেন। যা পরিস্কার হয়েছে তার (এমপি মামুনুর রশিদ কিরন) স্ত্রী ও উপজেলা মহিলা লীগের সভানেত্রী (বেগমগঞ্জ) জেসমিন আক্তারের প্রচারণার মধ্য দিয়ে। আমি এব্যাপারে কেন্দ্রীয় নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
এবিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, পৌরসহ নানা নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে যারা অংশগ্রহণ করবে, তাদের বিরুদ্ধে দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উল্লেখ্য, ২০০৮ সালের নির্বাচনে বর্তমান এমপি মামুনুর রশিদ কিরণ আওয়ামী লীগের প্রার্থীর বিরুদ্ধে দোয়াত কলম মার্কায় বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করে বিএনপির প্রার্থীকে নির্বাচন জিততে সহজ করে দেন। আগামী ৩০ জানুয়ারি নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ পৌরসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।