প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সংগ্রামে অমিত শক্তির উৎস ছিল এ ঐতিহাসিক ভাষণ। বঙ্গবন্ধুর এই ভাষণ আমাদের ইতিহাস এবং জাতীয় জীবনের এক অপরিহার্য ও অনস্বীকার্য অধ্যায়; যার আবেদন চির অম্লান। কালজয়ী এই ভাষণ বিশ্বের শোষিত, বঞ্চিত ও মুক্তিকামী মানুষকে সবসময় প্রেরণা যুগিয়ে যাবে।
ঐতিহাসিক ৭ মার্চ উপলক্ষে রোববার দেয়া এক বাণীতে এসব কথা বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজ ঐতিহাসিক ৭ মার্চ। বাঙালি-জাতির জীবনে এক অবিস্মরণীয় দিন। ১৯৭১ সালের এদিনে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ডাক দেন। ঢাকার তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানের বিশাল জনসমুদ্রে তিনি বজ্রকণ্ঠে ঘোষণা দেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, জয় বাংলা।’
তিনি আরও বলেন, দ্বি-জাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এ অঞ্চলের জনগণের ওপর নেমে আসে বৈষম্য আর নির্যাতনের যাতাকল। অর্থনৈতিক বৈষম্যছাড়াও সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালির মাতৃভাষাকে উপেক্ষা করে উর্দুকে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হিসেবে চাপিয়ে দেয়ার ষড়যন্ত্রে মেতে ওঠে পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী। শুরু হয় বাঙালির আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার আদায়ের সংগ্রাম। ১৯৪৮-৫২’র ভাষা-আন্দোলন, ৫৪’র যুক্তফ্রন্ট-নির্বাচন, ৬২’র শিক্ষা-আন্দোলন, ৬৬’র ৬ দফা আন্দোলন, ৬৯’র গণঅভ্যুত্থান এবং ৭০’র সাধারণ-নির্বাচনে বিজয়ের পথ ধরে বাঙালির মুক্তিসংগ্রাম যৌক্তিক পরিণতির দিকে ধাবিত হয়। আর এসব আন্দোলন-সংগ্রামে সম্মুখ সারিতে থেকে নেতৃত্ব দেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব।’
শেখ হাসিনা বলেন, ৭ মার্চের ঐতিহাসিক মাহেন্দ্রক্ষণে রেসকোর্সের জনসমুদ্রে দাঁড়িয়ে জাতির পিতা প্রদান করলেন স্বাধীনতার পথ-নকশা। যুদ্ধ অনিবার্য জেনে তিনি শত্রুর মোকাবিলায় বাঙালি-জাতিকে প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দেন: ‘তোমাদের যা কিছু আছে, তা-ই নিয়ে প্রস্তুত থাকো।’ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের এই সম্মোহনী আহ্বানে সাড়া দিয়ে বাঙালি-জাতি সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে শুরু করে। ২৫ মার্চ কালোরাতে পাকিস্তানি সামরিক জান্তা গণহত্যা শুরু করলে জাতির পিতা ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। ৯ মাসের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ মানুষ শহিদ হন।
তিনি আরও বলেন, দুই লাখ মা-বোন সম্ভ্রমহারা হন। বহু ত্যাগের বিনিময়ে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর আমরা চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করি। পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে ছিনিয়ে আনি মহান স্বাধীনতা, বাঙালি জাতি পায় মুক্তির কাঙ্ক্ষিত সাধ। প্রতিষ্ঠা পায় স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র বাংলাদেশ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতার ৭ মার্চের ভাষণ বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ রাজনৈতিক ভাষণ। লেখক ও ইতিহাসবিদ Jacob F Field-এর বিশ্বসেরা ভাষণ নিয়ে লেখা We Shall Fight on the Beaches: The Speeches That Inspired History গ্রন্থে এই ভাষণ স্থান পেয়েছে। অসংখ্য ভাষায় অনুদিত হয়েছে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ ইউনেস্কো কর্তৃক ২০১৭ সালে বিশ্ব-প্রামাণ্য ঐতিহ্য World Documentary Heritage হিসেবে ইউনেস্কোর International Memory of the World Register-এ অন্তর্ভুক্ত হয়, যা সমগ্র দেশ ও জাতির জন্য অত্যন্ত গর্বের।
তিনি আরও বলেন, বাঙালির বীরত্বপূর্ণ সংগ্রাম ও সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে জাতির পিতার এই ভাষণের দিকনির্দেশনাই ছিল সে সময় বজ্রকঠিন জাতীয় ঐক্যের মূলমন্ত্র। বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সংগ্রামে অমিত শক্তির উৎস ছিল এ ঐতিহাসিক ভাষণ। বঙ্গবন্ধুর এই ভাষণ আমাদের ইতিহাস এবং জাতীয় জীবনের এক অপরিহার্য ও অনস্বীকার্য অধ্যায়; যার আবেদন চির অম্লান। কালজয়ী এই ভাষণ বিশ্বের শোষিত, বঞ্চিত ও মুক্তিকামী মানুষকে সবসময় প্রেরণা যুগিয়ে যাবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মার্চ ২০২০ থেকে ডিসেম্বর ২০২১ জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী ‘মুজিববর্ষ’ উদযাপন করা হচ্ছে। এ মাসেই আমরা স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করবো। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব যে সোনার বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন।
তিনি বলেন, বাঙালি-জাতির জন্য যে উন্নত জীবনের কথা ভেবেছিলেন, তার সেই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে আমরা ২০০৯ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে সরকার গঠন করে মানুষের ভাগ্যোন্নয়নের জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। ইতোমধ্যে আর্থসামাজিকক্ষেত্রে বাংলাদেশ অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করেছে। আমরা আজ আত্মমর্যাদাশীল দেশ হিসেবে বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, রূপকল্প ২০২১ ও ২০৪১ এবং ডেল্টা প্ল্যান-২১০০ বাস্তবায়নের মাধ্যমে আমরা জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত ও সুখী-সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলতে অঙ্গীকারবদ্ধ। আসুন, মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে দেশের উন্নয়ন-অগ্রযাত্রায় নিজ-নিজ অবস্থান থেকে ভূমিকা রাখি। ঐতিহাসিক ৭ মার্চে এই হোক আমাদের অঙ্গীকার।