রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে ওআইসির সহযোগিতার আশ্বাস

রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে ইসলামিক সংস্থার (ওআইসি) পক্ষ থেকে সকল ধরনের সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন সংস্থাটির মহাসচিব ড. ইউসুফ বিন আহমেদ আল ওথাইমিন। সোমবার সৌদি আরব সফররত বাংলাদেশের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের বৈঠকে জেদ্দায় ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এ প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।

বৈঠকে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকটের বিষয় উল্লেখ করে এই সংকটের টেকসই সমাধানের জন্য ওআইসি কীভাবে আরও জোরদার ভূমিকা রাখতে পারে, তা নিয়ে আলোচনা হয়।

রোহিঙ্গা শরণার্থীদের অবস্থা সরেজমিনে পর্যবেক্ষণের জন্য গত মাসে বাংলাদেশে ওআইসির উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল পাঠানোর জন্য মহাসচিবকে ধন্যবাদ জানান প্রতিমন্ত্রী। এ সময় প্রতিমন্ত্রী রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকট নিরসন না হওয়া পর্যন্ত রাজনৈতিক এবং অন্যান্য সমর্থন অব্যাহত রাখার জন্য মহাসচিবকে অনুরোধ জানান। ওআইসির মহাসচিব ড. ওথাইমিন বাংলাদেশে প্রায় ১৩ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় দেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

বৈঠকে ওআইসির সদস্য দেশগুলোর মধ্যে আন্তঃবাণিজ্য বৃদ্ধি ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করার বিষয়ে আলোচনা হয়। মঙ্গলবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ খবর জানানো হয়েছে।

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম ওআইসির আফ্রিকান সদস্য দেশগুলোতে যৌথ কৃষি প্রকল্পে সহযোগিতা বৃদ্ধির মাধ্যমে ওআইসির সদস্য রাষ্ট্রগুলোতে খাদ্য নিরাপত্তা বাড়ানোর ওপর জোর দেন। এসব কৃষি প্রকল্পে বাংলাদেশ তার দক্ষ মানবসম্পদ ও প্রযুক্তি জ্ঞান সরবরাহ করতে পারে বলে তিনি জানান। আফ্রিকার দেশ সুদান, উগান্ডাসহ অন্যান্য দেশের অনাবাদি উর্বর জমি এসব প্রকল্পে ব্যবহার করা যেতে পারে, যেখানে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত ও ওআইসির অন্যান্য সমৃদ্ধশালী দেশগুলো অর্থ বিনিয়োগ করতে পারে। প্রস্তাবিত কৃষি প্রকল্প থেকে ওআইসির সদস্য দেশগুলো পারস্পরিকভাবে উপকৃত হতে পারে বলে উল্লেখ করেন প্রতিমন্ত্রী।

মহাসচিব ড. ইউসুফ বিন আহমেদ আল ওথাইমিন এ প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, তিনি ওআইসির আওতায় প্রকল্পটি বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া খুঁজে দেখবেন।

ওআইসির মহাসচিব স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে বাংলাদেশের সব জনগণকে আন্তরিক অভিনন্দন জানান। গত এক দশকে বাংলাদেশের উন্নয়ন, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে যে অর্জন, তার ভূয়সী প্রশংসা করেন তিনি। বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উন্নীত হওয়াকে তিনি বর্তমান সরকারের উল্লেখযোগ্য সফলতা বলে মনে করেন। মহাসচিব জানান, বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নতি ওআইসির সদস্যভুক্ত অনেক দেশের জন্য উদাহরণ হতে পারে।

প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম ওআইসিকে মুসলিম বিশ্বের সমস্যা সমাধানের জন্য একটি শক্তিশালী সংস্থা হিসেবে দেখতে চান বলে উল্লেখ করেন এবং ২০২০ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত ব্রেনস্টরমিং সেশনের সুপারিশের ভিত্তিতে ওআইসির সংস্কার কাজ এগিয়ে নেওয়ার‍ অনুরোধ জানান। তিনি ওআইসির নিয়োগে সমভাবে ভৌগোলিক প্রতিনিধিত্বের ওপর জোর দেন। প্রতিমন্ত্রী ওআইসির সদস্যভুক্ত স্বল্পোন্নত দেশগুলোতে করোনাভাইরাসের টিকা সরবরাহের সময়োপযোগী সিদ্ধান্তের প্রশংসা করেন।

এর আগে ওআইসির মহাসচিব বাংলাদেশের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ও সফরসঙ্গীদের তাঁর কার্যালয়ে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান। বৈঠকে সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক এফ এম বোরহান উদ্দিন, জেদ্দার দায়িত্বপ্রাপ্ত কনসাল জেনারেল এস এম আনিসুল হক উপস্থিত ছিলেন।

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম তিন দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে সৌদি আরবে রয়েছেন।