বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক মন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের কফিন সিঙ্গাপুর থেকে আজ সন্ধ্যায় দেশে এসে পৌঁছাবে।
তার একান্ত সহকারী মোমিনুর রহমান সুজন বলেন, “স্যারের মরদেহ সিঙ্গাপুর থেকে ঢাকায় আনার সব আনুষ্ঠিকতা শেষ হয়েছে। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের টিকেটও হয়ে গেছে।
“আগামীকাল আজ বৃহস্পতিবার সিঙ্গাপুর সময় বিকাল ৩টা ৫০ মিনিটে বিমানে কফিন রওনা হবে। ঢাকায় পৌঁছাবে সন্ধ্যায়। বিমানবন্দর থেকে স্যারের মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে গুলশানে ইউনাইটেড হাসপাতালের হিমঘরে।”
শুক্রবার সকাল ১০টায় ঢাকায় হাই কোর্ট প্রাঙ্গণে এবং বেলা ১১টায় নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে দুই দফা জানাজা হবে মওদুদের।
সুজন জানান, স্পিকারের অনুমতি সাপেক্ষে সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় আরেক দফা জানাজা হতে পারে সাবেক এই সাংসদের। তবে বুধবার সকাল পর্যন্ত তারা অনুমতি পাননি।
নয়া পল্টনের জানাজা শেষে অ্যাম্বুলেন্সে করে মওদুদ আহমদের কফিন নিয়ে যাওয়া হবে নোয়াখালীর কোম্পানিগঞ্জে, তার গ্রামের বাড়িতে। সেখানে বাদ আসর কোম্পানিগঞ্জ সরকারি কলেজ মাঠে জানাজার পর নিজের বাড়ির আঙিনায় আরেক দফা জানাজা শেষে পারিবারিক কবরাস্থানে বাবা-মায়ের পাশে মওদুদ আহমদকে দাফন করা হবে বলে জানান সুজন।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে আলোচিত চরিত্র মওদুদ আহমদ বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের একজন। জিয়াউর রহমানের সময়ে তিনি উপ প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন, পরে এইচ এম এরশাদের সময়ে উপরাষ্ট্রপতির দায়িত্বও পালন করেন।
সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মৃত্যু হয় তার। ৮১ বছর বয়সী এই রাজনীতিবিদ কিডনি ও ফুসফুসের জটিলতাসহ বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছিলেন।
১৯৪০ সালে নোয়াখালী জেলার কোম্পানিগঞ্জ উপজেলায় ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের জন্ম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ালেখা শেষ করে তিনি যুক্তরাজ্যে ব্যারিস্টার-অ্যাট-ল ডিগ্রি নেন। পরে দেশে ফিরে যুক্ত হন আইন পেশায়।
কবি জসীমউদ্দীনের জামাতা ব্যারিস্টার মওদুদ আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মপক্ষ সমর্থন প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর তাকে প্রথম পোস্ট মাস্টার জেনারেল করা হয়।
পরে দেশের প্রথম সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানের সঙ্গে যোগ দেন মওদুদ। বিএনপি গঠনে তার ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। জিয়া তাকে মন্ত্রী ও পরে উপপ্রধানমন্ত্রী করেছিলেন।
জিয়ার মৃত্যুর পর মওদুদ সামরিক শাসক হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের হাত ধরেন। এরশাদের নয় বছরের শাসনামলে তিনি মন্ত্রী, উপপ্রধানমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী এবং উপরাষ্ট্রপতির দায়িত্বও পালন করেন।
এরশাদ সরকারের পতনের পরও জাতীয় পার্টিতেই ছিলেন মওদুদ। ১৯৯৬ সালের সংসদ নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার পর তিনি বিএনপিতে ফেরেন। ২০০১-২০০৬ মেয়াদে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারে তিনি আইনমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।
ছয়বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত মওদুদ, আইন ও সমকালীন রাজনীতি নিয়ে বেশ কয়েকটি বইও লিখেছেন। স্বায়ত্বশাসন থেকে স্বাধীনতা, বাংলাদেশ: শেখ মুজিবুর রহমানের শাসনকাল, গণতন্ত্র ও উন্নয়নের চ্যালেঞ্জ – প্রেক্ষাপট: বাংলাদেশের রাজনীতি ও সামরিক শাসন, এ স্টাডি অব দ্য ডেমোক্রেটিক রেজিমস, কারাগারে কেমন ছিলাম, বাংলাদেশ: ইমার্জেন্সি অ্যান্ড আফটারম্যাথ ২০০৭-২০০৮ তার উল্লেখযোগ্য বই।