বিশ্ব শান্তিরক্ষায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী শীর্ষ স্থানটি ধরে রেখেছে। বিগত আড়াই যুগেরও বেশি সময় ধরে বিশ্বের ৪০টি দেশের ৫৪টি মিশনে শান্তিরক্ষায় অনন্য ভূমিকা রেখে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা দেশের নাম উজ্জ্বল করেছে। শুধু অভ্যন্তরীণ বিষয়েই নয়, বরং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে তাদের সর্বোচ্চ পেশাদারির পরিচয় দিয়ে দেশের সুনাম বৃদ্ধি করে চলেছে। কর্মস্পৃহা ও পেশাদারি বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আজ একটি অপরিহার্য নাম।
আজ শনিবার (২৯ মে) আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি পালন করা হবে। এক বিবৃতিতে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতর (আইএসপিআর) এই তথ্য জানিয়েছে।
আইএসপিআর জানিয়েছে, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণকারী বিশ্বের সব দেশের শান্তিরক্ষীদের অসামান্য অবদানকে এই দিনে গভীর শ্রদ্ধার স্মরণ করছে বাংলাদেশ। আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস উদযাপনে বাংলাদেশ রাষ্ট্রীয়ভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।
শনিবার (২৯ মে) সকালে শান্তিরক্ষীদের স্মরণের মাধ্যমে দিবসের কর্মসূচি শুরু হবে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এম এ মোমেন প্রধান অতিথি হিসেবে ‘শান্তিরক্ষী র্যালী-২০২১’ অনুষ্ঠান উদ্বোধন করবেন। পরে ঢাকা সেনানিবাসের সেনাকুঞ্জে আয়োজিত অনুষ্ঠানে শহীদ শান্তিরক্ষীদের নিকটাত্মীয় এবং আহত শান্তিরক্ষীদের সংবর্ধনা এবং জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের ওপর বিশেষ উপস্থাপনার আয়োজন করা হয়েছে।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ভিটিসির মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বিটিভি ওয়ার্ল্ড সংবর্ধনা অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচার করবে।
সেনাকুঞ্জে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, তিন বাহিনীর প্রধান, সংসদ সদস্য, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার (পিএসও), পুলিশের মহাপরিদর্শক, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী, সংবাদমাধ্যম ব্যক্তিত্বসহ উচ্চ পদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন ।
দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরার লক্ষ্যে বিশেষ জার্নাল ও জাতীয় দৈনিকগুলোতে বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ এবং বিভিন্ন বেসরকারি টিভি চ্যানেলে বিশেষ টক-শো প্রচারিত হবে। এছাড়া শান্তিরক্ষায় বাংলাদেশের কার্যক্রমের ওপর নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র প্রচারিত হবে বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ অন্যান্য বেসরকারি চ্যানেলে।
জাতিসংঘের পদক পেলেন বাংলাদেশি আট শান্তিরক্ষী :
আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষী দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন দেশে শান্তি মিশনে আত্মত্যাগ করা বাংলাদেশের আট শান্তিরক্ষীকে ‘দ্যাগ হ্যামারশোল্ড’ পদক দিয়ে সম্মানে ভূষিত করেছে জাতিসংঘ ৷ বৃহস্পতিবার (২৯ মে) বাংলাদেশের আটজনসহ বিশ্বের ৪৪ দেশের ১২৯ জন শান্তিরক্ষীকে এই পদক দেয়া হয়েছে৷ ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানের মাধ্যমে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস ৪৪ দেশের স্থায়ী প্রতিনিধিদের হাতে ‘দ্যাগ হ্যামারশোল্ড’ পদক তুলে দেন৷
এই পদক পেয়েছেন বাংলাদেশের, মালি (MINUSMA) মিশনের ওয়ারেন্ট অফিসার মো: আব্দুল হালিম, কঙ্গো (MONUSCO) মিশনের ওয়ারেন্ট অফিসার মো. সাইফুল ইমাম ভূইয়া, সার্জেন্ট মো. জিয়াউর রহমান, সার্জেন্ট এমডি মোবারক হোসেন ও ল্যান্স কর্পোরাল মো. সাইফুল ইসলাম; সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক (MINUSCA) মিশনের ল্যান্স কর্পোরাল মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন ও সার্জেন্ট মো. ইব্রাহীম এবং দক্ষিণ সুদান (UNMISS) মিশনের ওয়াসারম্যান নুরুল আমিন৷
জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা বাংলাদেশের পক্ষ থেকে পদক গ্রহণ করেন৷ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ মিশনের ডিফেন্স অ্যাডভাইজার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. ছাদেকুজ্জামান৷ শান্তিরক্ষীদের পরিবারের কাছে পদক পৌঁছে দেবে জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন৷
জানা গেছে, ১৯৮৮ সালে ইউএন ইরান-ইরাক মিলিটারি অবজারভেশন গ্রুপ (ইউনিমগ) মিশনে মাত্র ১৫ জন সেনা পর্যবেক্ষক পাঠানোর মাধ্যমে জাতিসংঘ শান্তি মিশনে বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হয়েছিল। এরপর বাংলাদেশকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। পরবর্তী কয়েক বছর বাংলাদেশ সেনাবাহিনী বেশ সুনামের সঙ্গে জাতিসংঘ শান্তি মিশনে কাজ করে গেছে। ১৯৯৩-৯৪ সালে সবচেয়ে আলোচিত রুয়ান্ডা, সোমালিয়া ও বসনিয়া, এ তিনটি শান্তি মিশনে দক্ষতার পরিচয় দিয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আলোচনার কেন্দ্রে চলে আসে। এর পর থেকেই জাতিসংঘ শান্তি মিশনে বাংলাদেশের অবস্থান সুদৃঢ় হতে থাকে।
জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বর্তমানে বাংলাদেশ সর্বোচ্চ শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ৷ বাংলাদেশের প্রায় সাত হাজার শান্তিরক্ষী জাতিসংঘের নয়টি শান্তিরক্ষা মিশনে কর্মরত রয়েছেন৷ শান্তিরক্ষা মিশনে কর্তব্যরত অবস্থায় এ পর্যন্ত বাংলাদেশের ১৫৯ জন মৃত্যুবরণ করেছেন৷
১৯৪৮ সালে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশন শুরু হয়। এর প্রথম মিশন ছিল ১৯৪৮ সালে মধ্যপ্রাচ্যে ১৯৪৮ আরব-ইসরায়েলি যুদ্ধের সময় যুদ্ধবিরতি পালন ও বজায় রাখা। তারপর থেকে, জাতিসংঘের শান্তিরক্ষীরা বিশ্বব্যাপী প্রায় ৬৩টি মিশনে অংশগ্রহণ করেছে, ১৭টি আজও অব্যাহত রয়েছে। ১৯৮৮ সালে শান্তিতে নোবেল লাভ করে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশন।